স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ভোক্তাপর্যায়ে এলপিজির (তরলীকৃত জ্বালানি গ্যাস) মূল্য নির্ধারিত হচ্ছে। সৌদি আরামকোর দরকে ভিত্তি ধরে প্রতি লিটার এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সেই মূল্যহার নিয়ে মুখ খোলেনি জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
আগামীকাল সোমবার মূল্য আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করবে সংস্থাটি। বিইআরসির একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। এর মাধ্যমে এলপিজির মূল্য নিয়ে স্থানীয় বাজারে অস্থিরতা অনেকাংশেই কেটে যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানিয়েছে, আরামকো হলো জ্বালানির মূল্য নির্ধারণের একটি মানদণ্ড। এ মানদণ্ড জ্বালানির মূল্য নির্ধারণে এশীয় অঞ্চলের বেশির ভাগসহ বিশ্বের অন্য দেশগুলো অনুসরণ করে থাকে। আরামকো নির্ধারিত প্রতি মাসের দরকে নিজ নিজ দেশের এলপিজির দর নির্ধারণের সূচক বিবেচনা করা হয়। আমদানি পর্যায়ের মূল্যকে ভিত্তি মূল্য ধরে পরিবহন ও অন্যান্য কমিশন যুক্ত করে স্থানীয় বাজার মূল্য চূড়ান্ত করা হয়। বাংলাদেশেও এমন পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের পর আবাসিকে নতুন করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয় সরকার। সেই থেকে নতুন করে আর গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে সংযোগ চালু করার কথা বলা হলেও তা চূড়ান্তপর্যায়ে গিয়ে থেমে যায়। আবাসিকে সংযোগ বন্ধ হওয়ার পর থেকে এলপিজির চাহিদা দিন দিন জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকে।
এক পরিসংখ্যান মতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে এলপিজি ব্যবহৃত হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৭৪ টন। কয়েক বছরে চাহিদা বেড়ে এখন ১২ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। জাইকার এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে চাহিদা হবে ৩০ লাখ টন ও ২০৪১ সালে ৬০ লাখ টন।
এলপিজির চাহিদা যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি ক্রমবর্ধমান চাহিদার জোগান দেয়ার জন্য বেসরকারি খাতে নতুন নতুন কোম্পানিও এসেছে। প্রায় শতভাগ আমদানি নির্ভর এলপিজির চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে স্থানীয় বাজারে এর মূল্য নিয়ে এক ধরনের অস্থিরতাও বিরাজ করছে। এক এক কোম্পানি এক এক মূল্য নির্ধারণ করছে। অনেকটা ইচ্ছামাফিক মূল্য নির্ধারণ করায় ভোক্তারা পড়েছেন বেকায়দায়। দেশে ব্যবহৃত এলপিজির সাড়ে ৯৮ শতাংশ আমদানিনির্ভর। সরকার এখন পর্যন্ত ৫৬টি কোম্পানি অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি কোম্পানি বাজারে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। আরো ২০টি কোম্পানি আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সরকারি কোম্পানির মার্কেট শেয়ার মাত্র দেড় শতাংশ। বেশির ভাগই বেসরকারি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে এতদিন কোনো শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হয়নি নীতিনির্ধারকদের পক্ষে।
জানা গেছে, দর নির্ধারণের বিষয়ে অনেকদিন ধরেই কথা হলেও জ্বালানি বিভাগ, বিইআরসি নাকি বিপিসি এটা করবে সে নিয়ে ছিল রশি টানাটানি। সর্বশেষ ক্যাবের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এলপিজির দর নির্ধারণ করার জন্য বিইআরসিকে শোকজ করে। সে মোতাবেক দর চূড়ান্তকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১৪ জানুয়ারি গণশুনানি গ্রহণ করে বিইআরসি। শুনানিতে প্রমিতা এলপিজি ১২ কেজি ওজনের প্রতি সিলিন্ডার ৮৫৩ টাকা, সরকারি কোম্পানি বিএলপিজি ৭০০ টাকার প্রস্তাব করে। আর এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন এক হাজার ২৫৯ টাকা করার প্রস্তাব জমা দেয়।
বিইআরসির আইন অনুযায়ী গণশুনানি গ্রহণের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ১৪ জানুয়ারি শুনানি নেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী আগামী ১৪ এপ্রিল ৯০ দিন পূর্ণ হবে। ওই দিন পয়লা বৈশাখের ছুটি। তাই এর আগেই অর্থাৎ আগামীকাল ১২ এপ্রিল গ্রাহকপর্যায়ে এলপিজির মূল্য ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে, ১২ এপ্রিল সোমবার ভোক্তাপর্যায়ে এলপিজির (লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস) দাম ঘোষণা করা হবে। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেয়া হবে।