শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন

মিতু হত্যায় নতুন মামলা : প্রধান আসামি বাবুল, বাদী শ্বশুর

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১২ মে, ২০২১
  • ১৫৮ বার

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্ত্রীকে হত্যার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। নতুন মামলা হলে তাকে সেই মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হবে। এ মামলার বাদী হতে পারেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।

আজ বুধবার সকালে প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানিয়ে বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুরোনা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আজই আদালতে দেওয়া হবে।

বনজ কুমার বলেন, খ্যাতিমান পুলিশ অফিসার ছিলেন বাবুল আক্তার। অনেক কাজ করেছেন। তার স্ত্রীকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে এটি পরিগণিত। বাবুল আক্তার বাদী হয়েছিলেন। পুরোনো মামলায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন দুজন। বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা আসেনি। মহামান্য হাইকোর্ট জানতে চেয়েছেন, কত দিন ঝুলে থাকবে। সে উত্তর খুঁজতে গিয়ে মামলা অন্যদিকে মোড় নেয়।

বনজ কুমার বলেন, মামলার বাদীকে ইচ্ছা করলেই গ্রেপ্তার করা যায় না। বাদীকে গ্রেপ্তার করতে হলে চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে হবে। খুলশী থেকে ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিতে আজই কোর্টে যাচ্ছে পুলিশ। এটি দাখিলের পর নতুন মামলা হবে। বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বাদী হতে পারেন। কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে। তাকে পিবিআই চট্টগ্রাম নিয়ে গেছে। নতুন মামলায় এক নম্বর আসামি হবেন বাবুল আক্তার।

পিবিআইয়ের প্রধান বলেন, ঘটনাস্থলে মুসাকে দেখা যায়। মুসা নিয়মিত বাবুল আক্তারের বাসায় যেতেন। তার অনুপস্থিতিতে মুসা বাজারও করে দিতেন। পিবিআই জানার চেষ্টা করেছে, মুসা সোর্স ছিলেন কি না। এটাই পিবিআই প্রমাণের চেষ্টা করেছে। মিতু হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগে জঙ্গি কার্যক্রমে আহত হন বলে দাবি করেন বাবুল। মৃত্যুর পর যে আচরণ, তা ছিল আপনজন হারানোর মতো। তাই তার কথা সবাই বিশ্বাস করেছিলেন।

বনজ কুমার বলেন, পিবিআই বাবুলকে ঢাকায় ডেকেছিল। গত বৃহস্পতিবার বাবুল বলেন, উনি সোমবার নয়টায় আসবেন। বাবুল পিবিআইকে কিছু প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। বিষয়গুলো আইজিপিকে জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জানানো হয়। এ অবস্থায় ব্যাক করার সুযোগ নেই বলে জানায় পিবিআই।

বনজ কুমার আরও বলেন, নড়াইলে একটা লোককে আমরা পর্যবেক্ষণে নিই। তার নাম গাজী আল মামুন। অপর বন্ধু সাইফুল হককেও পিবিআই ডাকে। দুজনই বাবুলের বন্ধু। তারা সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। এর ভিত্তিতে পুরোনো মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। এ ঘটনায় ঢাকায় অবস্থান করা মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অভিযোগে নিজের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে কয়েক দিনের মাথায় মামলার তদন্তে নতুন মোড় নেয়। এক পর্যায়ে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার শ্বশুর মোশারফ হোসেন।

পিবিআই সূত্র জানায়, আলোচিত এই মামলাটি প্রথমে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ও চট্টগ্রামের গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দেওয়া হয়। পিবিআই তদন্তে নেমে প্রথমবারের মতো মামলার বাদী ও সন্দেহভাজন হিসেবে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলছে। কয়েকদিন আগে নিহত মিতুর বাবার সঙ্গেও পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা কথা বলেন বলে জানিয়েছে ওই সূত্র।

আলোচিত এই হত্যা মামলা নিয়ে নানা নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে বাবুল আক্তারকে পুলিশ সুপারের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বাবুল আক্তার স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিয়েছেন বলা হলেও তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছিলেন। পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর তিনি প্রথমে কিছুদিন রাজধানীর আদ্বদীন হাসপাতালে চাকরি করলেও বর্তমানে ব্যবসা করছেন বলে জানা গেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com