নির্ধারিত ব্যয়ের মধ্যে থাকছে না কোনো প্রকল্পই। প্রকল্প চলাকালেই ব্যয় ও সময় বাড়ানো একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পে বিভিন্ন খাত যুক্ত করে ঠিকাদারের দোহাই দিয়ে ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয়কর দিতেই সরকারি খাত থেকে ২ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ আপত্তি জানিয়েছে। প্রকল্পে পরামর্শক খাতেই ব্যয় হবে ৫০৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সব মিলে ব্যয় বাড়ছে ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বা ৫৭.২৩ শতাংশ বলে বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রকল্পের সাড়ে তিন বছরের মাথায় এসে চলমান এই প্রকল্পের ৫৭.২৩ শতাংশ ব্যয় এবং বাস্তবায়নকাল তিন বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের কাছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। আগামী ২০২২ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা। ছয় বছরে প্রকল্প সমাপ্ত হবে বলে অনুমোদিত প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা ছিল। কিন্তু এখন সাড়ে তিন বছরের মাথায় এসে প্রকল্পটির ব্যয় ৭ হাজার ৭৮৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এর বাস্তবায়নকাল আরো তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে আটটি বিমান (তিনটি আন্তর্জাতিক ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ) বন্দর রয়েছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি প্রধান ব্যস্ততম বন্দর। এই বিমানবন্দরে প্রায় ১৭টি বিমান সংস্থার বিমান চলাচল করছে। এ বিষয়ে ৫২টি দেশের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহনের বার্ষিক সক্ষমতা ৮০ লাখ। চাহিদা বিবেচনায় এই বন্দরের অবকাঠামো পর্যাপ্ত নয়। এখানে আন্তর্জাতিকমানের পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
সমীক্ষা অনুযায়ী এই বিমানবন্দরের যাত্রী সংখ্যা ৩.২ শতাংশ হারে এবং কার্গো পরিবহন সংখ্যা ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি, বাংলাদেশ ২০১৪ সালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পাদন করে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্প্রসারণ সুবিধা ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বর্তমানে টার্মিনালের যাত্রী ধারণক্ষমতা ২০১৮ সালে পূর্ণ হয়ে গেছে। ২০২৫ সালে ১ কোটি ৪০ লাখ জন, ২০৩৫ সালে ২ কোটি ৪৮ লাখ জন যাত্রী বৃদ্ধি পাবে বলে সমীক্ষাতে বেরিয়ে এসেছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৬১০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এখানে জাইকা দেবে ১১ হাজার ২১৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে।
প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বিভিন্ন উন্নয়নের মধ্যে ২৭ হাজার বর্গমিটার আয়তনের নতুন আমদানি কার্গো কমপ্লেক্স এবং ৩৭ হাজার বর্গমিটার আয়তনের নতুন রফতানি কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করার কথা। ২৪ হাজার বর্গমিটার আয়তনের কানেক্টিং টেক্সিওয়ে (উত্তর), সাড়ে ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের কানেক্টিং টেক্সিওয়ে (অন্যান্য), ২২ হাজার বর্গমটিারের র্যাপিড এক্সিট টেক্সিওয়ে উত্তর এবং সাড়ে ১৯ হাজার বর্গমিটারের র্যাপিড এক্সিট টেক্সিওয়ে দক্ষিণ নির্মাণ করা হবে।
ব্যয় প্রস্তাবনার তথ্য থেকে জানা যায়, প্রকল্পের জনবলের আয়কর পরিশোধ করতে হবে ২ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা, যা অনুমোদিত প্রকল্পের থেকে এক হাজার ৩২১ কোটি টাকা বেশি। আয়কর সাধারণত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদান করা হয়ে থাকে। এটা জিওবি থেকে প্রদান করাটা সঠিক হবে না বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বলছে, কাজের পরিধি পরিবর্তন, ঠিকাদারের দর বৃদ্ধি, পৃথক আমদানি-রফতানি ভবন তৈরি ইত্যাদি কারণে ব্যয় বেড়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে পরামর্শক খাতেও ব্যয় বাড়ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-প্রধান জানান, প্রস্তাবিত তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের বিস্তারিত নকশা ও সার্বিক নির্মাণ পরিকল্পনা ডিপিপিতে প্রদান করা হয়নি। অনুমোদিত মূল প্রকল্পের সাথে প্রস্তাবিত সংশোধিত প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের বড় ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাইকা কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষায় কী সুপারিশ করা হয়েছে তা যুক্ত করা হয়নি। পরামর্শক সেবা বাবদ ৫০৩ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অনুমোদিত প্রকল্পের তুলনায় ১৩২ কোটি টাকা বেশি। এই ব্যয় যৌক্তিক নয়।