ভারতে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল নিয়ে প্রবল বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে আসামে। তবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ইনারলাইন পারমিট চালু থাকা মিজোরাম, অরুণাচলপ্রদেশ ও নাগাল্যান্ডকে নাগরিকত্ব সংশোধনীর বাইরে রেখে সেখানকার বিক্ষোভ-প্রতিবাদকে নিস্ক্রিয় করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত এলাকাগুলোকেও পাশ কাটিয়ে নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের খসড়ায় অনুমোদন দিয়ে দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ তিন রাজ্যে বিজেপি জোট সরকারের বিপদ কাটল। মণিপুর ও মেঘালয়ের স্বশাসিত পরিষদের আওতায় থাকা এলাকাগুলোতে সংশোধনীর প্রভাব পড়বে না। প্রভাব পড়লে মূলত পড়ার কথা আসামের সমতল অংশে। আর সেখানেই গত কয়েক দিনের প্রতিবাদ বুধবার থেকে আরো জোরদার হয়েছে। বিলের বিরুদ্ধে বুধবার থেকেই রাস্তায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হয়েছে আসু, আসাম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি-সহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। এই বিল মানবে না বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে কংগ্রেসও। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সংশোধনীর নিন্দা করে আসামে গণভোটের দাবি তুলেছেন। অগপ সভাপতি ও মন্ত্রী অতুল বরার মতে, ‘‘আইন সংশোধনীর ফলে নতুন করে খুব বেশি বিদেশির বোঝা আসামকে বইতে হবে না। আন্দোলন করলেই হবে না, বাস্তবটাও বুঝতে হবে।’’ তবে অগপর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত জানান, তিনি দলে থেকেও বিলের বিরুদ্ধে তার লড়াই চালিয়ে যাবেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বানন্দ সোনোয়ালের সরকারি পেজ বুধবার সারা দিন নিন্দা ও সমালোচনার পোস্টে ভরে উঠেছে। কৃষক নেতা অখিল গগৈ বলেন, ‘‘নতুন আইনের ফলে নাগরিকত্বের বোঝা শুধু আসামকেই বইতে হবে। তাই রাজধানী দিসপুর থেকেই শুরু হবে গণ আন্দোলন।’’ ১১ ডিসেম্বর রাজ্যের সর্বত্র বিল-বিরোধী আন্দোলন শুরু হবে। অখিল ও তরুণ গগৈয়ের দাবি, ‘‘বিজেপি হিন্দু-মুসলিম, বাঙালি-অসমিয়ার পরে জনজাতি ও অ-জনজাতির মধ্যে বিভাজন করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ করতে চাইছে।’’ রাজ্যব্যাপী আসুর প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। চলছে মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিজেপি-অগপ মন্ত্রীদের কুশপুতুল পোড়ানো ও পথ অবরোধ। আসুর মতে, আসাম চুক্তি নস্যাৎ করে তার উপর খোদ আসুর শহিদ দিবসে এই বিল পাশ করানোর পরিকল্পনা করে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সভাপতি লুরিনজ্যোতি গগৈ জানান, অমিত শাহ গত রাতের আলোচনায় অসমের সংগঠনগুলিকে বোঝান, ষষ্ঠ তফশিলকে বাইরে রাখা হবে, অসম চুক্তির ষষ্ঠ দফা রূপায়ণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার বক্তব্য, ‘‘আসাম চুক্তিতে স্পষ্ট বলা আছে ১৯৭১ সালের পরে আর শরণার্থীর ভার আসাম নেবে না।’’ আসাম সাহিত্য সভার সভাপতি পরমানন্দ রাজবংশী জানিয়েছেন, বিলের ফলে অসমিয়ারাই সংখ্যালঘু হবে। এআইইউডিএফো আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে জানিয়েছে, সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও আসাম চুক্তি অগ্রাহ্য করা এই বিল তারা মানে না।