বাজেট বাস্তবায়নে হতাশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ৯ মাসে অর্ধেকও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ সময়ে সংশোধিত বাজেটের মাত্র ৪১ শতাংশ ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে। মূল বাজেট হিসাবে ধরলে যা ৩৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শেষ হতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি। প্রাক্কলন করে দেখা গেছে, এই অবস্থায় বছর শেষে সংশোধিত বাজেটের ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতে পারে।
অর্থ বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বাজেটের মূল আকার নির্ধারণ করা হয়েছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন ব্যর্থতার কারণে গত এপ্রিল মাসে সংশোধিত বাজেটে এ ব্যয় ২৯ হাজার ১৭ কোটি টাকা কমিয়ে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। সংশোধিত বাজেটের পুরোটা বাস্তবায়ন করতে হলে ৯ মাসে অর্থ ব্যয়ে লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৪ হাজার ২৩৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ সময় অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়েছে মাত্র দুই লাখ ২৫ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। এখন সংশোধিত বাজেটের পুরো অর্থ ব্যয় করতে হলে আগামী তিন মাসে ব্যয় করতে হবে এক লাখ ২৪ হাজার ৭৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা; যা অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দুই অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নের হারে তেমন হেরফের না থাকলেও করোনা পূর্ববর্তী দুই বছরের তুলনায় বাজেট বাস্তবায়নের হার প্রায় ৪ শতাংশ কমেছে। করোনা পরিস্থিতির আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল যথাক্রমে ৪৪ দশমিক ৪২ শতাংশ ও ৪৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অর্থাৎ বাজেট বাস্তবায়ন হার কমেছে প্রায় ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অতীতে দেখা গেছে, দুই একবার ছাড়া কোনোবারই বাজেটের পুরো অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয় না। এমনকি সংশোধিত বাজেটও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায় না। গত দেড় বছর ধরে করোনাকাল চলছে। এ সময় ধরেই নেয়া যায় বাজেট বাস্তবায়ন আরো শ্লথ হবে। তবে বাজেট বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ হিসেবে অদক্ষ প্রশাসনকে দায়ী করে তিনি বলেছেন, বেশির ভাগ মন্ত্রণালয়ের টাকা খরচের কোনো সক্ষমতা নেই বললেই চলে।
সূত্র জানায়, গত এক দশকে বাজেট বাস্তবায়ন প্রায় ১৫ ভাগ কমে গেছে। যেমন-দশ বছর আগে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ৯৭ শতাংশ। সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে হয়েছে ৮০ শতাংশ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে বাস্তবায়ন হয়েছে এক লাখ ১ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। অর্থবছর শেষে বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৯৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৫২ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৯২ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ব্যয় হয় ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৯০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা হয়। বছর শেষে বাজেটের ব্যয় হয় ১ লাখ ৮৮ হাজার ২০৮কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৮৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন করা হয় ২ লাখ ৪ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। বাজেট বাস্তবায়নের হার ৮১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। পরে তা কমিয়ে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৭৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। অন্য দিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হয়েছে ৭৬ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়। বছর শেষে বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় ৮০ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সংশোধিত বাজেটে আকার দাঁড়ায় ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। প্রকৃত বাস্তবায়ন হয় ৩ লাখ ৯১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৮৮ শতাংশের কম। ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছিল গত ১৩ জুন ২০১৯। ২১ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত বাজেট ঠিক করা হয় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। এখানে বাস্তবায়ন ৭০ ভাগের কাছাকাছি বলে জানা গেছে।