ভারতের সাথে সীমান্তে পাহারা বা নজরদারি বাড়ানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে নানান খবর প্রকাশ হচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই তারা এই ব্যবস্থা নিয়েছেন।
আব্দুল মোমেন বলেছেন, কোন বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সীমান্ত দিয়ে কোনো বিদেশীকে বাংলাদেশ গ্রহণ করবে না।
এদিকে, ঝিনাইদহ এবং রাজশাহীর বিভিন্ন সীমান্তে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সাথে স্থানীয় লোকজন কমিটি গঠন করে রাতে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ভারতের এনআরসি বা নাগরিক তালিকার ভয়ে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অনেক চেষ্টা হতে পারে, এমন আশংকার বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হচ্ছে।
কিন্তু বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক কোনো পরিস্থিতি হবে না বলে সরকারি কর্মকর্তারা বলে আসছেন। একইসাথে বাংলাদেশ ভারতের সাথে সীমান্তে পাহারা বা নজরদারি বাড়ানোর খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
কি বলছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কোনো কাগজপত্র ছাড়া কেউ যেনো বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
“আমরা সবসময়ই আমাদের সীমান্ত প্রটেকশনে রাখি। সম্প্রতিকালে আপনাদেরই বিভিন্ন তথ্য থেকে আমরা দেখি, কিছু কিছু যারা বিদেশে গেছেন, তারা ফিরে আসছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক হলে তাদের অবশ্যা আমরা গ্রহণ করি। কিন্তু অন্যবিধ নাগরিক যদি আসেন, তাহলে আমরা তাদের গ্রহণ করি না।”
“যেহেতু বিভিন্ন খবর বের হয়, সেকারণে আমরা আর একটু সতর্কতা অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সব সীমান্তে আমরা কিছুটা খেয়াল রাখবো। যাতে অবৈধভাবে কেউ সীমান্ত পাড়ি না দেয়, সেটা আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এটা আলাপ করেছি।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, সীমান্তে ইতোমধ্যেই নজরদারি বাড়িয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কি ভারতের সাথে এনিয়ে কোনো কথা বলছে?
বাংলাদেশ সরকার এই ইস্যু নিয়ে উচ্যবাচ্য করছে না বলে বিরোধীদলগুলো অভিযোগ করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা বিভিন্ন সময় ভারতের সাথে আলোচনা করেছেন। ভারত বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
“এ ব্যাপারে আমাদের অনেক আলোচনা হয়েছে। ভারত সরকার আমাদের বার বার অঙ্গীকার করেছে, আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যে এই ইস্যু বাংলাদেশকে কোনোভাবে প্রভাবিত করবে না। এনআরসি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আমরা ভারত সরকারকে বিশ্বাস করি।”
মাঠের অবস্থা কী?
দেশের দক্ষিণ পশ্চিমে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে প্রথম ১০/১২ জন করে ছোট ছোট দলে অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয় বলে বিজিবির কর্মকর্তারা বলেছেন।
তারা জানিয়েছেন, এই মহেশপুর সীমান্তে ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে ৮ জনকে আটকের সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। গত এক মাসে মহেশপুর সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্টে কোনো কাগজপত্র ছাড়া ভারত থেকে অনুপ্রবেশের অভিযোগে প্রায় আড়াইশ জনকে আটক করা হয়েছে বলে বিজিবির কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন।
মহেশপুরের সীমান্তবর্তী একটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সায়রা খাতুন বলছিলেন, সীমান্তে পাহারার কারণে অবৈধ অনুপ্রবেশের চেষ্টা হলেই ধরা পড়ছে।
ঝিনাইদহে গত একমাসে আটকদের বেশিরভাগ ভারতে এনআরসি বা নাগরিক তালিকার ভয়ে বাংলাদেশে এসেছে, তারা জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছে বলে বিজিবির কর্মকর্তারা বলছেন।
উত্তর পশ্চিমে রাজশাহীর পবা উপজেলায় পদ্মা নদীতে সীমান্তবর্তী চর এবং গ্রামগুলোতে স্থানীয় লোকজন দিয়ে কমিটি করে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
সেখানকার একটি ইউনিয়নের একজন কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম বলছিলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা বিজিবির সাথে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের এলাকায় এখন অবৈধ অনুপ্রবেশের কোনো চেষ্টা হয়নি। বিবিসি।