বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে কিছুই নেই। বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র, সুশাসন, বিচারব্যবস্থা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা- এর কোনটাই নেই। পত্রিকা খুললেই গুম, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন এসবের খবর পাওয়া যায়। এসবই করছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এই সরকার একটি ব্যর্থ বাংলাদেশ তৈরি করছে। বর্তমান সরকার একটি ব্যর্থ বাংলাদেশ তৈরি করছে।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের অবৈধ সাজা বাতিল ও স্বৈরাচার পতন দিবস উপলক্ষে ৯০-এর ডাকসু সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে বিচার বিভাগের যে অবস্থা, সেখানে কে কতটা সাহস রাখবেন, তা আমি জানি না। সরকারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা যখন বলেন, সব ঠিক আছে, তিনি (খালেদা জিয়া) সুস্থ আছেন, তখন বিএসএমএমইউ’র ভিসি এবং ডাক্তারদের কয়টা মাথা আছে যে, বলবেন তিনি খারাপ আছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সরকার আদালত অবমাননা করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘বৃস্পতিবার বিএসএমএমইউ’র ভিসি আদালত অবমাননা করেছেন। কারণ, আদালত ডিসেম্বরের ৫ তারিখের মধ্যে দুটি রিপোর্ট চেয়েছিল। ডাক্তারদের স্বাক্ষরসহ এই রিপোর্ট হাজির করতে হবে বলেও আদেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু তারা তা করেননি।’
তিনি বলেন,‘অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব সব সময় সরকারের স্বার্থরক্ষার জন্য চেষ্টা করেন। এমনভাবে চেষ্টা করেন যে, সরকারের না হয় দলের স্বার্থ রক্ষার জন্য চেষ্টা করেন। এতকিছুর পরও আমরা হতাশ হয়েছি, সুপ্রিম কোর্টের বিচার বিভাগ এই বিষয়টাকে লক্ষ্য করেনি। এই বিষয়ে আদালত অবমাননার ব্যবস্থা নেয়নি।’
মির্জা ফখরুল বলেন,‘দুর্ভাগ্য আজকের জাতি ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছে। তার মূল বিষয়বস্তু ছিল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদকে সরিয়ে দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। আজকে সেই জাতি গণতন্ত্রবিহীন অবস্থায়। এরশাদের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করলেন। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যারা রাস্তায় নেমে প্রাণ দিয়ে জাতির জন্য লড়াই করলেন, তাদের সঙ্গে সেদিন কিন্তু বেঈমানি করা হয়েছে। আজকে যারা ক্ষমতায় আছেন তারা, এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বাচনে গিয়েছিল। আজকেও তারা সেই স্বৈরাচার এরশাদের দলের সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতা দখল করে আছে। এটা কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।’
দেশে সংকট তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন,‘দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। সিনহা সাহেব তার বইতে বলে গিয়েছিলেন, আমাদের যা কিছু অর্জন, তা দানবের মতো সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্র সব ধ্বংস।’
মির্জা ফখরুল বলেন,‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। ডাক্তাররা বলছেন- বিলম্ব হলে তাকে সুস্থ অবস্থায় আর পাওয়া যাবে না। আমরা বলছি, সবকিছু বাদ দেন। অন্তত মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।’
খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে বিএনপির এই মহাসচিব বলেন, আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে রাস্তায় নেমে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। আজকে তাই আমাদেরকে সংগ্রাম করতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হবে। আমাদের নেত্রীকে উদ্ধার করতে হবে, গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে হবে। এটাই এখন আমাদের দায়িত্ব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র নেই। অস্ত্রের জোরে ক্ষমতা দখল করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে যে স্বৈরশাসন চালানো হয়েছিল। দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রাম করে, সেই স্বৈরশাসন ভেঙে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়া। আজ তাকেই বন্দী করে রাখা হয়েছে। আজকের সরকার স্বৈরশাসক এরশাদের সাথে আঁতাত করে আছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার জানে, বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে এই অবৈধ সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তাই তাকে মুক্তি দিচ্ছে না।
সভাপতির বক্তব্যে আমানউল্লাহ আমান বলেন, আজ গণতন্ত্র মুক্তি দিবসে গণতন্ত্রের মা, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বাইরে থাকার কথা। কিন্তু আজকে তিনিই কারাগারে বন্দি আছেন। আপোষহীন নেত্রী বলেই আজ তাকে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলার প্রত্যাহার চাই।