কোভিড-১৯ ভাইরাসের সূচনা মোটামুটি দেড় বছর আগে। করোনায় বিশ্বব্যাপী অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। সময়ের সাথে এর মানুষ হত্যার তাণ্ডব বরং আরো জোরদার হয়ে চলেছে। কিন্তু অনেকটা আমাদের অজান্তে এই করোনাভাইরাস সাথে করে নিয়ে এসেছে ‘ক্ষুধাভাইরাস’ নামের আরেক মহামারী। এই ক্ষুধাভাইরাসের তাণ্ডবের মাত্রা করোনাভাইরাসের তাণ্ডবের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। কোভিড-১৯ বিশ্ব ক্ষুধা-পরিস্থিতিকে আরো সঙ্কটাপন্ন করে তুলেছে। এটি বিশ্বের ক্ষুধাপীড়িত এলাকাগুলোতে সৃষ্টি করেছে চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা। বিভিন্ন দেশ যদি জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে না পারে, তবে সমূহ ধ্বংসের মুখোমুখি হতে হবে।
ক্ষুধা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে তিনটি প্রধান কারণ : কোভিড-১৯, সশস্ত্র সঙ্ঘাত ও জলবায়ু সঙ্কট। আজকের এই সময়টায় এই তিন কারণে প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্ষুধাভাইরাসে বিশ্বে প্রতি মিনিটে মারা যাচ্ছে ১১ জন মানুষ। এই মৃত্যুহার কোভিড-১৯-এর মৃত্যুহারকেও ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে বিশ্বে করোনার কারণে প্রতি মিনিটে মরছে সাতজন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারগুলো যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে না পারে, তবে তাদের জন্য এই ‘ক্ষুধাভাইরাস’ আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। পরাশক্তিগুলো যদি অন্তত মানবিক বিবেচনায় এই ক্ষুধাভাইরাসের সদর্প এগিয়ে চলা থামাতে চায়, তবে উচিত হবে তাদের সক্রিয় পরামর্শ, সহযোগিতা ও মদদে বিশ্বের নানা স্থানে চলা সশস্ত্র সঙ্ঘাত আর যুদ্ধ-বিগ্রহের অবসান ঘটানো। ক্ষুধাপীড়িত দেশগুলোর দায়িত্ব হবে নিজ নিজ দেশে খাদ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর প্রতিটি দেশকেই জোরদার করতে হবে করোনা ভাইরাসবিরোধী কর্মসূচি।
গত ১২ জুলাই ‘দ্য স্টেইট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’- শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাতিসঙ্ঘ বলেছে- ২০২০ সালে নাটকীয়ভভাবে বিশ্বে ক্ষুধা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। বলা হয়েছে, এর পেছনে প্রধান কারণ কোভিড-১৯-এর প্রভাব। তবে এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এই অতিমারীর প্রভাবচিত্র এখনো পুরোপুরি পাওয়ার অপেক্ষায়। এরই মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মোটামুটি ১০ ভাগের ১ ভাগ মানুষ- সংখ্যার হিসেবে ৮১ কোটি ১০ লাখ মানুষ- শুধু ২০২০ সালেই পুষ্টিহীনতায় ভুগতে দেখা গেছে। এই পরিসংখ্যানের তাগিদ হচ্ছে, প্রতিশ্রুত ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে চাইলে কোভিড-১৯ মোকাবেলা কর্মসূচি জোরদার করার পাশাপাশি দেশে দেশে ক্ষুধামুক্তির পদক্ষেপ অধিকতর জোরদারকরণ।
এই প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রকাশ করে জাতিসঙ্ঘের বেশ কয়েকটি সংস্থা : জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাও, জাতিসঙ্ঘের কৃষি উন্নয়ন তহবিল ইফাদ, জাতিসঙ্ঘের শিক্ষা ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ, জাতিসঙ্ঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডবিøউএফপি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’। এই প্রতিবেদনের এর আগের বছরের সংস্করণেই দেখানো হয়েছিল বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ, বিশেষত শিশুরা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার হুমকিতে রয়েছে। দুর্ভাগ্য এর উপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে পুরো ২০২০ সালটা আমাদের কেটেছে করোনাভাইরাসের অভিঘাত সহ্য করে। এই করোনাভাইরাসের ধাক্কা বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর চরম আঘাত হেনেছে। ভবিষ্যতে এর প্রাবল্য কোথায় গিয়ে ঠেকে সেটাই এখন ভাবার বিষয়। এ বছরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, জাতিসঙ্ঘের খাদ্য-ব্যবস্থাবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন, প্রবৃদ্ধির জন্য পুষ্টিসম্পর্কিত শীর্ষ সম্মেলন এবং জাতিসঙ্ঘের ২৬তম ‘কপ সম্মেলন’ (ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ)। এখন থেকেই বিশ্ববাসীকে সচেতন ভূমিকা নিয়ে সম্মেলন তিনটিকে কাজে লাগাতে হবে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ায় সম্মিলিত কার্যকর কর্মসূচি নেয়ার ব্যাপারে।
২০১০-এর মধ্য দশকেই লক্ষ করা গেছে- বিশ্বে বুভুক্ষু মানুষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ২০২০ সালে এসে জনসংখ্যা বেড়ে চলার চেয়েও বেশি অনুপাতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ে। ২০১৯ সালে যেখানে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ৮.৪ শতাংশ, ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯.৯ শতাংশে। বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি পুষ্টিহীন মানুষের (৪১ কোটি ৮০ লাখ) বসবাস এশিয়ায়, এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি (২৮ কোটি ২০ লাখ) আফ্রিকার এবং পুষ্টিহীন মানুষের ক্ষুদ্র একটি অংশের (৬ লাখ) বসবাস লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে। ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হারে বাড়ছে আফ্রিকায়। সেখানকার মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশই পুষ্টিহীনতার শিকার; অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দ্বিগুণ।
অন্যান্য পরিমাপেও ২০২০ সালটি মানবসমাজের জন্য ভালো কাটেনি। বিশ্বের ২৩০ কোটি মানুষ (মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ) বছরব্যাপী ভুগেছে প্রয়োজনীয় খাদ্যাভাবে। নারী-পুরুষের বৈষম্য আরো বেড়েছে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি হারে নানামাত্রিক পুষ্টিহীনতার শিকার হয়েছে। বিশ্বের নানা অংশে করোনা মহামারী এই পরিস্থিতিকে আরো দুর্বিষহ করে তোলে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-২ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ার কথা। কোভিড-১৯ সে সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে দিয়েছে বলেই মনে হয়।
যেসব স্থানে এখন সশস্ত্র সঙ্ঘাত বা দেশে-দেশে নানা জোটসমর্থিত যুদ্ধ চলছে, সেগুলোর শান্তিপূর্ণ সমাধানে সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। সেসব স্থানে বাড়িয়ে তুলতে হবে মানবিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক সুরক্ষা উদ্যোগ; যাতে একটি মানুষও না খেয়ে মারা না যায়। জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তন ঠেকাতে কাজ করতে হবে প্রতিটি দেশকে সমন্বিত উপায়ে। সম্পদ বৈষম্য নিরসনে ইতিবাচক রাষ্ট্রীয় নীতি অবলম্বন করতে হবে। কোভিড-১৯ মোকাবেলা ও ক্ষুধা মোকাবেলা পাশাপাশি চলবে সমান্তরাল গতিতে। প্রয়োজনে কোনো কোনো দেশে বা অঞ্চলে ক্ষুধামুক্তির অভিযান পাবে কোভিডমুক্তির অভিযানের চেয়ে অগ্রাধিকার।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের এই বাংলাদেশের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওপর কোভিড-১৯ কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে? গত সপ্তাহে যখন বাংলাদেশে চলছিল কঠোর লকডাউন, ঠিক তখনই, অর্থাৎ গত ১২ জুলাই বিশ্বব্যাংক প্রকাশ করে এর ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ (বিডিইউ)। এই প্রতিবেদনে সবিশেষ আলোকপাত রয়েছে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ওপর কোভিড-১৯-এর প্রভাবের বিষয়টি নিয়ে। আলোকপাত রয়েছে করোনাকালে কাজের অভাব ও দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ার উপরেও।
বিডিইউ মতে, বিগত অর্থবছরে দেশের দারিদ্র্যের হার ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে। চলমান করোনার প্রবণতা বিবেচনা করে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের চলতি অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি এক নমনীয় হারের কথা ঘোষণা করেছে। বিডিইউ সূত্র মতে, এই হার ধরা হয়েছে ২.৬ শতাংশ ও ৫.৬ শতাংশের মধ্যে। এতে বিশ্বব্যাংক সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে বলেছে, চলতি অর্থবছরে অর্থনীতির ওপর করোনার দ্বিতীয় আঘাত পড়তে পারে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি প্রধানত নির্ভর করবে সবাইকে টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে সাফল্যের মাত্রার ওপর। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২০ সালে যারা কাজে অনুপস্থিত ছিল, তারা গড়ে তিন মাস কাজ করতে পারেনি।
ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে, অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় প্রতি পাঁচজনে একজন হয় চাকরি হারিয়েছে, অথবা কোভিড-১৯ সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন কাজে অনুপস্থিত থাকতে হয়েছে। বিডিইউ মতে, যে ৫৬ শতাংশ মানুষ শহরের ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তারা অনেকেই এই সময়ে বাড়ি ভাড়া দিতে পারেননি। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নির্ধারিত হয় জরিপে অংশ নেয়া মানুষের মতামতের ওপর নির্ভর করে। ৫৪ শতাংশ মানুষ উদ্বিগ্ন তাদের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশব্যাপী ফোনকলের মাধ্যমে এসব জরিপ তথ্য সংগ্রহ করে।
গত মাসের মাঝামাঝি ‘ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ বাজেটে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ে একটি ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. এম এইচ ফারুকি। তিনি তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, প্রতি বছর বাংলাদেশে ৬০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য-রেখার নিচে নামছে। এর কারণ, ব্যক্তিগত চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাওয়া ও বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে কম বরাদ্দ দেয়া। বাংলাদেশে একজন মানুষকে তার চিকিৎসা খরচের ৬৭ শতংশ নিজের পকেট থেকে দিতে হয়। এই হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশে মাথাপিছু চিকিৎসা খরচ ৩২ ডলার, যা এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। বাজেটে অর্থ বরাদ্দ সমালোচনার মুখে সংখ্যার দিক থেকে নামেমাত্র কিছুটা বাড়ানো হলেও, এই বরাদ্দ কখনোই জিডিপির ১ শতাংশের বেশি নয়। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা হচ্ছে, কোনো দেশেই স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে হবে না এবং তা হবে মোট বাজেট বরাদ্দের ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের দারিদ্র্যের অন্যতম একটি কারণ এর মাত্রাতিরিক্তভাবে ঘনবসতি। যুক্তরাষ্ট্রে ইলিনয়ে রাজ্যের মতো ছোট্ট আয়তনের বাংলাদেশে ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। এর পরও দেশটি সাক্ষরতার হার, মানুষের গড় আয়ু বাড়ানো, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, জিডিপির হার ও মাথাপিছু আয় বাড়ানো, নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানো, জীবন-যাপনের মানোন্নয়ন, অবকাঠামোর উন্নয়নসহ আরো বেশ কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমেই বাড়ছে। দেশের ৩২ শতাংশ মানুষ (৫ কোটি) এখনো চরম গরিব। কৃষিজমির পরিমাণ কম, একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙন, খরা, বন্যা ইত্যাদি নানা কারণে বাংলাদেশের মানুষ অব্যাহতভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এরই জের চরম গরিব মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলা। এর সাথে কোভিড-১৯-এর প্রভাব যোগ হয়ে পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলেছে। স¤প্রতি যেসব রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোতে এ সত্যেরই প্রতিফলন রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য সম্পর্কিত চরম বাস্তবতা হচ্ছে- এ দেশে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি হারে কম ওজনের শিশুর জন্ম হয়। এ দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে একজন দীর্ঘ পুষ্টিহীনতা কিংবা অস্বাভাবিক বিকাশের শিকার। ১৪ শতাংশ শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার পায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অপুষ্টির কারণে এ দেশে প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে দু’জনই মারা যায় পাঁচ বছরের কম বয়সে। চরম গরিব পাঁচ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেক খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্কে প্রবেশের সুযোগ পায়। ২৫ শতাংশ নারীর ওজন স্বাভাবিক গড় ওজনের চেয়ে কম।
ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় এই সময়ের সবচেয়ে আগে দরকার কোভিড-১৯-এর কবল থেকে দেশকে পুরোপুরি মুক্ত করা। কারণ, এই মহামারী চলতে থাকার অপর অর্থ চরম গরিব মানুষের সংখ্যা, অন্য কথায় বুভুক্ষু মানুষের সংখ্যা আরো বেড়ে যাওয়া। তাই এই যুগল ভাইরাস (করোনাভাইরাস ও ক্ষুধাভাইরাস) তাড়ানোর কাজ চালাতে হবে একযোগে। দেশের গরিব জনগোষ্ঠীকে সত্যিকারার্থে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিচ্ছিন্নতা থেকে সরিয়ে আনার লক্ষ্যে চালু করতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি। তা করা সম্ভব হলে দেশের বুভুক্ষু ও পুষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা কমে আসবে। কমে আসবে গরিব মানুষের হারও। এ জন্য ব্যাপক জাতীয় কৌশল অবলম্বন করতে প্রয়োজন এ বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির।
জাতীয় নীতিনির্ধারণে অগ্রাধিকার দিতে হবে পুষ্টি উন্নয়নের ব্যাপারে। উন্নয়ন সাধন করতে হবে পুষ্টিসহায়ক কৃষিকাজের। বাড়াতে হবে নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন। বিশেষ জোর দিতে হবে নারী ও শিশুস্বাস্থ্য পরিস্থিতি উন্নয়নে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলহানির হার কী করে কমিয়ে আনা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি সবসময় জাতীয় নীতিতে সক্রিয় বিবেচনায় রাখতে হবে। সাধারণ মানুষের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি, নাগালযোগ্য চিকিৎসাসেবা ও স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি বাজেটে গরিব মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগ থাকতে হবে। ধনী-গরিবের ব্যবধান কমিয়ে আনতে না পারলে কখনোই দেশে চরম গরিব মানুষের সংখ্যা কমানো যাবে না, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়া কখনোই বাস্তব রূপ পাবে না।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট