শ্রমিকের অন্তর্বাসে হাত ঢুকিয়ে টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল টিকিট চেকিং স্টাফের বিরুদ্ধে। গত শনিবার রাত ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ নিউ কমপ্লেক্সে এই ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে হাওড়া স্টেশন।
রাতভর অভিযোগকারীকে নিয়ে আরপিএফ বিভিন্ন বিভাগে ঘুরে শেষমেশ সিসিটিভিতে শনাক্ত করে অভিযুক্ত টিসিকে। এরপর টিকিট পরীক্ষকদের দপ্তর থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা অভিযোগকারীকে ফেরত দেওয়া হয়। খড়গপুরের সিনিয়র ডিসিএম গরজ সিং চরণ বলেন, অভিযুক্ত টিসির বিরুদ্ধে কঠোরতম সাজা হবে।
অভিযোগকারী খোসমহম্মদ নিউ কমপ্লেক্সে আরপিএফকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, তিরুচুরাপল্লি এক্সপ্রেসে তিনি ও তার ভাই নুর মহম্মদ হাওড়া আসেন। নিউ কমপ্লেক্সে ২ নম্বর গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় তিন টিকিট পরীক্ষক টিকিট দেখতে চান। টিকিট দেখানোর পর আই কার্ড দেখতে চান তারা। আধার কার্ড দেখেও সন্তুষ্ট হননি। তারপরই তাদের কাছে ৪২০০ টাকা জরিমানা চাওয়া হয়। প্রতিবাদ করায় মারধর করে তার মোবাইল, মানিব্যাগ কেড়ে নেওয়া হয়। মানিব্যাগে টাকা না থাকায় অন্তর্বাসে হাত ঢুকিয়ে বের করা হয় সাড়ে তিন হাজার টাকা।
এই ঘটনার পর খোসমহম্মদ মুর্শিদাবাদের চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করেন। সেন্টারের পক্ষ থেকে রাতেই হাওড়ার এডিআরএমকে বিষয়টি জানানো হয়। তার নির্দেশে তৎপর হয় হাওড়া নিউ কমপ্লেক্সের আরপিএফ পোস্ট। অভিযোগ নেওয়ার পাশাপাশি তারাই সিসিটিভি দেখে শনাক্ত করে টিসিকে। অভিযুক্ত টিসিকে না পাওয়া গেলেও টিকিট পরীক্ষকরাই সাড়ে তিন হাজার টাকা ফেরত দেয় খোসমহম্মদকে। টিসিরা অভিযোগকারীকে ভোরের গণদেবতা এক্সপ্রেসে তুলে দেয় সাগরদিঘি যাওয়ার জন্য।
খোসমহম্মদ জানিয়েছেন, অভাবের সংসার তাদের। তাই নাবালক ভাই নুর মহম্মদকে গত জুলাইয়ে কাজের জন্য তিরুচুরাপল্লি নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। ২৮ জুলাই তিরুচুরাপল্লি স্টেশনে আরপিএফ তাদের ধরে। শিশুশ্রমিক বলে তার ভাইকে তিরিচু আদালতের নির্দেশে হোমে পাঠানো হয়। মুর্শিদাবাদ নবগ্রামের কুশমোড়ের খোসমহম্মদ মুর্শিদাবাদ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টারে বিষয়টি জানান। তারাই আইনি পদক্ষেপ করে নুর মহম্মদকে হোম থেকে মুক্ত করে ১৭ আগস্ট। এরপরই ভাইকে নিয়ে খোসমহম্মদ বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু শনিবার রাতে হাওড়া আসার পর বিস্তারিত তথ্য দেখিয়েও টিকিট পরীক্ষকদের হাতে নিঃস্ব হতে হয় তাকে।
টাকা কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। দক্ষিণ পূর্ব রেল এ বিষয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। বারবার অভিযোগ উঠেছে, হাওড়া নিউ ও ওল্ড- দুই স্টেশনে টিকিট পরীক্ষকদের দৌরাত্ম্য সীমাহীন পর্যায়ে চলে গিয়েছে। অভিযোগ, এখন তাদের টার্গেট পরিযায়ী শ্রমিকদের ভয় দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে অর্থ কেড়ে নেওয়া। কঠোর হাতে এই প্রবণতা দমন করতে এমন অভিযোগ উঠলেই সেই টিকিট পরীক্ষককে বদলি করা হবে বলে কমার্শিয়াল কর্মকর্তারা জানিয়ে দিয়েছেন।