করোনাজনিত সময়ে ব্যয় করার অক্ষমতার কারণে সরকারের সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি অনেক হ্রাস পেয়েছে। প্রাথমিক মূল্যায়নে গত ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি হয়েছে ৭৯ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, যা কি না সংশোধিত বাজেট ঘাটতির ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল একলাখ ৫৪ হাজার ২৫১ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি বিগত চার অর্থবছরের চেয়ে কম। প্রাথমিক হিসেবে, গত অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ৭৪ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাথমিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের মূল বাজেটে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে এক লাখ ৮৭ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়। কিন্তু বছর শেষে ব্যয় করার অক্ষমতার কারণে বাজেট ঘাটতি অনেককাংশে কম হয়েছে। এখন প্রকৃত বাজেট ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে সংশোধিত ঘাটতির ৪২ দশমিক ৫২ শতাংশ মাত্র। সে হিসাবে বাজেটে কমেছে প্রায় সাড়ে ৫৭ শতাংশ।
জানা গেছে, গত বছরের বাজেট ঘাটতি ছিল গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রকৃত সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। এর আগে প্রতি বছরই বাজেট ঘাটতি টাকার অঙ্কে পর্যায়ক্রমে বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রকৃত বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে টাকার অঙ্কে বাজেট ঘাটতি বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে এক লাখ ৩৯ হাজার ৮১১ কোটি টাকা এবং এক লাখ ৫৪ হাজার ২৫১ কোটি টাকা।
এ দিকে গত অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণে বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উৎস থেকে সরকার মোট ঋণ নিয়েছে ৮০ হাজার ৫২১ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, সমাপ্ত অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের প্রায় ২৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়নি বা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন হার হচ্ছে প্রায় ৭৪ শতাংশ। বাজেট ঘাটতি কমে যাওয়ার এটি একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এ দিকে ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছিল। এর বিপরীতে অর্থবছর শেষে প্রকৃত ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন লাখ ৯৯ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয় হয়নি। এর আগের অর্থবছরে ২০১৯-২০২০ বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় ৮৪ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের প্রাথমিক হিসাব মতে, বাজেট ঘাটতি পূরণে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ৮০ হাজার ৫২১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার ২৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা এবং অবশিষ্ট ৬৫ হাজার ২৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে- ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩২ হাজার ৬৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে প্রায় ৪৩ হাজার ৩১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে এ দুই খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল- ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।
এর ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম ঋণ নিলেও সঞ্চয়পত্র খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১২ হাজার ৭২৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে।