শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন

অনিয়ন্ত্রিত খাবার ও ধুলাবালি থেকে সাবধান

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৭০ বার

অ্যালার্জি হচ্ছে ইমিউন সিস্টেমের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা। পরিবেশের কোনো অ্যালার্জেনের কারণে শরীরে হাইপার সেনসিটিভিটি দেখা দিলে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখায়। আর যদি কোনো বস্তু বা উপাদান কোনো মানুষের শরীরে হাইপার সেনসিটিভ রি-অ্যাক্ট দেখায়, সেসব বস্তু বা উপাদান সেসব মানুষের জন্য অ্যালার্জেন।

অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন : কোনো অ্যালার্জেন শরীরের সংস্পর্শে এলে শরীরে যেসব অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখায়, সেগুলোই অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন। এটি হাইপার সেনসিটিভিটি রি-অ্যাকশন নামেও পরিচিত। হাইপার সেনসিটিভিটি রি-অ্যাকশন চার ভাগে বিভক্ত। তবে চার ধরনের মধ্যে টাইপ-১ হাইপার সেনসিটিভিটি নিয়ে এখানে আলোচনা করব। কোনো অ্যালার্জেনের কারণে শরীরের যেসব হাইপার সেনসিটিভিটি রি-অ্যাকশন দেখা দেয়, সেগুলো টাইপ-১ হাইপার সেনসিটিভিটি রি-অ্যাকশন। অ্যালার্জি হিসেবে আমরা যা বুঝি, তা মূলত টাইপ-১ হাইপার সেনসিটিভিটি রি-অ্যাকশন।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস : অনেক সময় বৃষ্টিতে ভিজলে, পুকুরে গোসল করলে, ধুলোবালিতে গেলে, একটু ঠা-া লাগলে বা কোনো ঠা-া পানীয় পান করলে কারও কারও সর্দি-কাশি শুরু হয়। অর্থাৎ বৃষ্টির পানি, ধুলোবালি, পুকুরের পানি বা ঠা-া জলীয় বস্তু কারও জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। এটি অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। এতে সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের মিউকাস মেমব্রেনগুলো আক্রান্ত হয় এবং হিস্টামিনের প্রভাবে সেখান থেকে প্রচুর মিউকাস তৈরি হয়। শ্বাসযন্ত্রে লুইকোট্রিন নামক এক প্রকার পদার্থ তৈরি হয়। তা কাশি তৈরিতে শ্বাসযন্ত্র উত্তেজিত করে। নাক দিয়ে পানি পড়া, সঙ্গে গায়ে হালকা জ্বর থাকা- এসব কিছু অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের কারণে হয়ে থাকতে পারে। অনেক সময় রাইনো ভাইরাস অ্যালার্জি হিসেবে কাজ করে। করোনা ভাইরাসেও একই রকম ব্যাপার দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে আরটি পিসিয়ার করোনা পরীক্ষা করা উচিত দ্রুত।

চোখের অ্যালার্জি : অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস মূলত চোখের অ্যালার্জিজনিত রোগ। এতে চোখ লাল হয়ে থাকে। চোখ থেকে পানি পড়ে, ব্যথা করে। ৬ থেকে ১২ বছরের শিশুর এটা বেশি দেখা দেয়। যাদের শরীর কোনো নির্দিষ্ট অ্যালার্জেনের প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাদের অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের মতো অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।

ফুড অ্যালার্জি : অনেকে মাংস বা বেগুন কিংবা বাইরের খাবারে শরীরে চুলকানি শুরু হয়ে যায়, বমি বমি ভাব হয়। এগুলো মূলত অ্যালার্জির কারণে হয়। তাদের শরীর ওসব খাবারের জন্য উপযোগী নয় এবং ওই খাবারগুলো যদিও অন্যদের জন্য স্বাভাবিক, তবু তাদের জন্য অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। তাই তারা যখন ওই খাবারগুলো খান, তখন পুরো শরীর চুলকাতে থাকে ও লাল হয়ে যায়। অর্থাৎ ওই মাংস তার জন্য অ্যালার্জেন।

ড্রাগ অ্যালার্জি : কারও কারও অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি তার হাইপার সেনসিটিভিটি থাকে। যদি কারও এমন হয়, তা হলে ওই অ্যান্টিবায়োটিক পরিবর্তন করে তাকে অন্য অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।

এনাফাইলেক্টিক রি-অ্যাকশন : এটি হচ্ছে এক প্রকার ইমারজেন্সি অ্যালার্জিক কন্ডিশন। মনে করুন, কারও শরীরে একটি কীটপতঙ্গের সংস্পর্শ লেগেছে অথবা কোনো ছোট মশা কিংবা অন্যান্য কীটপতঙ্গ কামড় দিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পর দেখা গেল তার শরীরে লাল লাল চাকা হয়ে গেছে। শরীর প্রচ- চুলকায়। পুরো শরীর ব্যথা করছে। এ অবস্থার নাম এনাফাইলেক্টিক রি-অ্যাকশন। যাদের শরীর হাইপার সেনসিটিভ, তাদের ক্ষেত্রে মশার কামড় কিংবা ছারপোকার কামড়ে এনাফাইলেক্টিক রি-অ্যাকশন দেখা দিতে পারে।

এটপিক অ্যাকজিমা : এটি এক প্রকার অ্যালার্জিক স্কিন কন্ডিশন। সাধারণত অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশনের কারণে এ অ্যাকজিমা হয়ে থাকে।

চিকিৎসা : অ্যালার্জির স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। এটির সম্পর্ক ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে। তাই যাদের যেসব বস্তু বা খাবারে অ্যালার্জি রয়েছে, তা পরিহার করে চলতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরার কারণে যাদের অ্যালার্জিক উপসর্গগুলো দেখা দেয়, তারা মেডিসিন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন।

মেডিকেশন : অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে হিস্টামিন নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। এ কন্ডিশনে অ্যান্টিহিস্টামিন হচ্ছে অ্যালার্জির মূল চিকিৎসা। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে। যে কোনো শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসক বা নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করা সবচেয়ে উত্তম।

লেখক : চিকিৎসক, ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং সিইও, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ, ঢাকা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com