বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৪ অপরাহ্ন

কানাডার মধ্যবর্তী নির্বাচনের একটি পর্যালোচনা

ড. মঞ্জুরে খোদা
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ২০৯ বার

কানাডা এখন বসন্তকালীন চারিদিকে সবুজ প্রকৃতির এক চমৎকার আবহাওয়া। এরমধ্যে গতকাল সকাল ৯:৩০ মি. থেকে রাত ৯:৩০মি. পর্যন্ত ৪৪তম জাতীয় নির্বাচন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। কোন কোন শহরে রাতে ভোটের লাইন দীর্ঘ ও ভোটার সমাগম অধিক হওয়ায় ভোটের সময় বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন তাৎক্ষণিক ঘোষণা করছেন, যতক্ষণ ভোট কেন্দ্রে ভোটার থাকবে-ততক্ষণ ভোটগ্রহণ চলবে। কোনভাবে তরুণ ও নতুন ভোটারদেরকে বঞ্চিত করা যাবে না। কোন প্রকার ন্যূনতম  অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হলো এই বিশাল বাজেটের নির্বাচন।

নির্বাচনের ফলাফল

ক্ষমতাসীন জাস্টিন ট্রুডার লিবারেল পার্টি পেয়েছে ১৫৮টি আসন এবং ভোট পেয়েছেন ৩২ শতাংশ। সংসদে প্রধান বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১১৯টি আসন, ভোট পেয়েছে ৩৪ শতাংশ। তৃতীয় স্থানে আছে আঞ্চলিক দল ব্লক কুইবেকউয়া তারা পেয়েছে ৩৪টি আসন এবং ভোট পেয়েছে ৮ শতাংশ। চতুর্থ পর্যায়ে আছে নিউ ডেমেক্রেটিক পাটি এনডিপি পেয়েছে ২৫টি আসন, ভোট পেয়েছে ১৮ শতাংশ। এবং পঞ্চম হয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রীন পাটি-তারা পেয়েছে ২টি আসন, ভোট পেয়েছে ২ শতাংশ। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রধানদলগুলোর মধ্যে দু’টি দলের প্রধান নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। এরমধ্যে পিপলস পাটি অব কানাডা (পিপিসি) দল কোন আসনেই জিততে পারেনি, কিন্তু তারা ভোট পেয়েছে ৫ শতাংশ।

 

কারা সরকার গঠন করবে?

কানাডার সংসদে আসন সংখ্যা ৩৩৮টি, এরমধ্যে একক সংরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১৭০টি আসন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। এক্ষেত্রে কানাডার সংবিধানের অনুসারে সংসদে যারা অধিক আসন পায় তারাই সরকার গঠন করেন, সে অর্থে অন্যদলের সমর্থন প্রয়োজন হয় না। তারমানে জাস্টিন ট্রুডোর নেতৃত্বে লিবারাল পার্টিই সরকার গঠন করছেন। কিন্তু যে কোন গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশের ক্ষেত্রে অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থনের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে তাদের অন্য দলের সমর্থনের চেষ্টা করতে হবে। সংসদের যে দলগুলো আছে তারমধ্যে সংসদের চতুর্থ বৃহত্তম দল এনডিপি’র রাজনৈতিক নীতি-কর্মসূচির সাথে লিবারালদের নৈকট্য আছে। তাদের সমর্থন-সহানুভূতি অর্জনের মাধ্যমে কাজ করতে হবে।

মধ্যবর্তী নির্বাচনে অর্জন

ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি যে উদ্দেশ্য থেকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা করেছিলেন সে আকাঙ্খা অর্জন করতে পারেননি, ব্যর্থ হয়েছেন। তাদেরকে আবারও সংখ্যালঘু সরকার নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। এবং জাস্টিন ট্রুডো হবেন তৃতীয়বারের মত কানাডার প্রধানমন্ত্রী।

সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারার একটি বড় কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, করোনার চতুর্থ ওয়েবের মাঝে হঠাৎ মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণায়-এদেশের জনগণ ভালভাবে নেয়নি। লিবারেলরা আসন গতবারের মত পেলেও ভোটে তারা মোটেই ভাল করতে পারেনি, সেটাও কিছুটা কমেছে। রক্ষণশীল আসন সামান্য কম পেলেও ভোটের দিক থেকে তারা এগিয়েছে।

ভোটের পর্যালোচনা

লেখার শুরুতেই কোন দল কতগুলো আসন পেয়েছে এবং কত শতাংশ ভোট পেয়েছে সে তথ্য উল্লেখ করেছি। এতে আপনারা খেয়াল করেছেন, অনেক দলই অধিক ভোট পেয়ে আসন কম পেয়েছে, আবার কম ভোট পেয়ে আসন অধিক পেয়েছে।

লিবারেল পার্টি ৩২ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে ১৫৮টি। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টি ৩৪ মানে লিবারেলের ২ শতাংশ বেশি ভোট কিন্তু  আসন পেয়েছে ১১৯টি। আঞ্চলিক দল ব্লক কুইবেকওয়া এনডিপির অর্ধেকের কম ভোট (৮ শতাংশ) পেয়ে আসন পেয়েছে ৩৪টি। ভোটের দিক থেকে তৃতীয় এনডিপি ১৮ শতাংশ ভোট পেয়ে আসন পেয়েছে মাত্রে ২৫টি। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ডানপন্থীদল পিপিসি ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে কোন আসনই পাননি।

হিসেবে প্রতি শতাংশ ভোটের জন্য তিনটি করে আসন ধরে নিলে-এই হিসেবে হতো অন্যরকম। সেটা হলে লিবারেলে পেত ৯৬টি, রক্ষণশীল পেত ১০২টি, এনডিপি ৫৪টি, ব্লক ২৪টি, পিপিসি ১৫টি, গ্রীন ৬টি আসন। এ বিষয়ে পূর্বেও লিখেছি, এটা হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতি এফপিটিপি’র একটি অসঙ্গতি।

বলতে পারেন ভোট তো তারা আঞ্চলিকভাবে পেয়েছে সেখানে দোষের কিছু নেই, অন্যরা সেটা পায়নি। কথা ঠিক কিন্তু যারা সংসদে আসছেন তারা কি শুধু আঞ্চিলক রাজনীতির প্রতিনিধিত্ব করছেন নাকি জাতীয় রাজনীতি ও উন্নয়নের প্রতিনিধিত্ব করছেন? সে প্রশ্নটা গুরুত্বর্পূণ।

রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য

এই নির্বাচনকে ঘিরে সমালোচক ও প্রধান বিরোধীনেতা এরিন ও’টুল-সময় ও অর্থের অপচয় বলে বর্ণনা করেছেন। নির্বাচনের এই ফলাফলের প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীনরা উপযুক্ত ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তবে ট্রুডো মনট্রিলে তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট হয়ে যে, কানাডার মানুষ প্রগতিশীল পরিকল্পনাকেই বেছে নিয়েছেন, যে দল আপনার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে এবং আপনাদের জন্য কিছু করবে। লিবারেল এমপি পাবলো রড্রিগুয়েজ বলেছেন, ফল যাই হোক, তার প্রতি লিবারেল পার্টির শতভাগ সমর্থন আছে। আসন অনেক কম হলেও নতুন পার্লামেন্টে বামপন্থী এনডিপিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কারণ তাদের সমর্থন ছাড়া মধ্যপন্থী লিবারেল কোন বিল সংসদের পাশ করতে পারবে না।

নির্বাচনের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা

এই নির্বাচনের খরচ প্রায় ৬১০ মিলিয়ন ডলার! এটা শুধু নির্বাচন পরিচালনার সরকারি খরচ। কিন্তু এর বাইরে আছে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব বাজেট সেটার সাথে অন্যান্য খরচ ও সময় যুক্ত করলে এই অংক হবে অনেক বেশি। যে খরচটা হবার কথা ছিল আরো দু’বছর পরে কিন্তু ক্ষমতার সমীকরণে-কৌশলে তা চলে গেল আগেই। করোনা সংকটে তা হবে জনগণের উপর একটি বাড়তি চাপ। ক্ষমতার রাজনীতিকে ব্যক্তি, দল, মানুষের মনোভাব, বাস্তবতা ও সময়কে বিবেচনায় না নিলে-ফলাফল সবসময় ভাল হয় না। কানাডার এই মধ্যবর্তী নির্বাচনই তার প্রমাণ।

লেখক: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com