বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৩ অপরাহ্ন

সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা উচিত

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১
  • ২৬৪ বার

১৯৪৮ সালে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রে শিক্ষার অগ্রগতি, মানবজাতির ক্রমোন্নতি এবং আধুনিক সমাজের বিকাশে শিক্ষক সমাজের অবদানের কথা জোরালোভাবে ঘোষণা করে শিক্ষকরা যাতে উপযুক্ত মর্যাদা পান, তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ইউনেস্কোর উদ্যোগে শিক্ষকদের মর্যাদা সম্পর্কে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বিশেষ আন্তঃসরকার সম্মেলন বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের অধিকার, কর্তব্য ও মর্যাদাবিষয়ক আন্তর্জাতিক দলিল ‘ইউনেস্কো/আইএলও সনদ’ স্বাক্ষরিত হয়। সেই দিবসটি শিক্ষক দিবস হিসাবে পালিত হচ্ছে।

এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবস বেসরকারি বহু শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য একটি গভীর দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। করোনায় বিশেষভাবে বিপর্যস্ত দেশের শিক্ষা খাত। অনেক শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্য মারা গেছেন। অনেক শিক্ষকের সংকট আগের চেয়ে বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন কিন্ডারগার্টেনের বহু শিক্ষক। তাদের কষ্ট ও হতাশার কথা আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি। এমন বেহাল পরিস্থিতিতে আমরা পালন করছি বিশ্ব শিক্ষক দিবস।

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড হলে শিক্ষকরা শিক্ষার মেরুদণ্ড। কিন্তু আজ বহু শিক্ষক সমাজে অবহেলিত। সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি পেলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার মানেও পরিবর্তন আসবে। শিক্ষার মান নিয়ে নানা রকম আলোচনা সবসময়ই লক্ষ করা যায়। জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ৬০ শতাংশের বেশি নম্বর পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সবার সন্তুষ্ট হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে লক্ষ করা যায়, অনেকে সন্তুষ্ট নন। এর কারণ কী? গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে গণিত এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে ৬০ শতাংশ নম্বর পেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে পূনর্মূল্যায়নের আওতায় আনা হবে কিনা, পরীক্ষককে এ নিয়ে ভাবতে হত। এখন কি ৬০ শতাংশ নম্বরের সেই গুরুত্ব আছে? প্রাপ্ত নম্বরের সেই গুরুত্ব কী করে ফিরিয়ে আনা যায় তা ভাবতে হবে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে বিদ্যমান মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা দরকার। দৈনিক ও সাপ্তাহিক মূল্যায়নে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে বিশেষ মূল্যায়ন করা দরকার। এসব মূল্যায়নে যাতে স্বচ্ছতা বজায় থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো রকম দুর্নীতি বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেলে দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব মূল্যায়নের নম্বর চূড়ান্ত পরীক্ষায় যুক্ত করা হলে শিক্ষার্থীরা সারা বছর অধ্যয়নে মনোযোগী হবে। বর্তমান পদ্ধতিতে একসঙ্গে বেশি চাপ পড়ে এবং বহু শিক্ষার্থী সারা বছর সঠিকভাবে মনোযোগী হয় না; তারা মনে করে, চূড়ান্ত পরীক্ষার কাছাকাছি সময় মনোযোগী হলেই চলবে। বর্তমানে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা সমাজে সেভাবে মূল্য পাচ্ছে না। গত শতকের সত্তর ও আশির দশকের মতো প্রাপ্ত নম্বরের সেই গুরুত্ব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা সমাজে কাঙ্ক্ষিত মূল্য পাবে।

সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়নে বহু শিক্ষকের অদক্ষতার বিষয়টি বহুল আলোচিত। এটা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এই অদক্ষতাসহ সব ধরনের অদক্ষতা দূর করার জন্য শিক্ষকদের অব্যাহত প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। পাঠ্যবইয়ে ভুলভ্রান্তির বিষয়টিও বারবার আলোচনায় আসে। নির্ভুল পাঠ্যবই প্রণয়নে দক্ষ ও অভিজ্ঞ গুণীজনদের এ কাজে যুক্ত করতে হবে। এ কাজে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞরা যুক্ত থাকলে পাঠ্যবইয়ের ভুলভ্রান্তি দূর করা সম্ভব কবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। প্রকৃত মেধাবীরা যাতে শিক্ষকতায় আগ্রহী হয়, সে পরিবেশও নিশ্চিত করা দরকার। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যাতে কোনো রকম প্রশ্ন না ওঠে, কর্তৃপক্ষকে সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। শিক্ষা খাতে সব ধরনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

শিক্ষা খাতে আজ ব্যাপক বৈষম্য বিদ্যমান। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বেতন স্কেলে পার্থক্য রয়েছে। সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যে সিলেবাস, বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও সেই একই সিলেবাস পড়ানো হয়। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণ উৎসব ভাতা ও বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়। বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন স্কেলের ২৫ শতাংশ ও কর্মচারীদের ৫০ শতাংশ উৎসব ভাতা দেওয়া হয়। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি সরকারের আরও সহানুভূতি দেখানো দরকার।

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করেন এবং ৫০ শতাংশ বেতন স্কেল প্রদান করেন। পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১০+১০=২০ শতাংশ প্রদান করেন। ১৯৯৪ সালের শিক্ষক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১০ শতাংশ, ২০০০ সালে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ শতাংশ, সর্বশেষ ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১০ শতাংশ বেতন প্রদান করে শতভাগে উন্নীত করেন। এখন দেশের সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলে তা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে ।

শিক্ষার সংস্কার, সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে সরকার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেবে বলে শিক্ষক সমাজ প্রত্যাশা করে। আমরা এটাও আশা করি, ভবিষ্যতে সরকার এ বিষয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করে শিক্ষক সমাজের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাবে।

অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া : চেয়ারম্যান, শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোট

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com