চাল, চিনি, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, ডালসহ নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতায় সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষ দিশেহারা। পণ্যের বাজার যাতে যখন-তখন অস্থির হতে না পারে সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নানা কৌশলে নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করেই চলেছে।
অসাধু ব্যবসায়ীরা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ পরিস্থিতিতে সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষ কতটা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে, তা গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সোমবার নিত্যপণ্যের উৎপাদনকারী, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেখানে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
জানা গেছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা নানা রকম চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এসব পদক্ষেপের ফলে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আসে, সেদিকে তাকিয়ে আছে মানুষ।
সারা দেশে অসাধু ব্যবসায়ীদের এক অদৃশ্য অথচ শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। এদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা। এ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চাল। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে মিলাররা যখন-তখন বিভিন্ন অজুহাতে চালের দাম বাড়িয়ে দেন।
তারা যেসব কারণ দেখিয়ে চালের বাজার অস্থির করে তোলেন, সেসব তথ্য যাচাই করে দেখা জরুরি। একজন নিম্নআয়ের মানুষ প্রতি মাসে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় চাল কেনার পর যা উদ্বৃত্ত থাকে, তা দিয়ে পরিবারের বাকি প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে হিমশিম খান। প্রশ্ন হলো, কিছু মানুষের লোভী মনোবৃত্তি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সীমিত ও নিম্নআয়ের মানুষকে আর কত দুর্ভোগ সহ্য করতে হবে?
জানা গেছে, দেশে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত আছে। আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজের বাজার অস্থির হওয়ার কথা নয়।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, পেঁয়াজের খুচরা বাজার ভয়াবহ রকম অস্থির। গত এক-দেড় বছরে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার নানা অভিজ্ঞতার পরও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন-এ প্রশ্ন সবার। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে পণ্যের যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, তাতে কেবল তারাই লাভবান হয় আর ভোক্তাদের দুর্ভোগ বাড়ে। যেসব ব্যবসায়ী বারবার বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির নেই।
দেশে প্রায় সব নিত্যপণ্যই কমবেশি উৎপাদিত হয়, যদিও এর পরিমাণ চাহিদার তুলনায় কম। এ অবস্থায় সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো নিত্যপণ্য আমদানি করা হলে বাজারে কোনো পণ্যের বড় ধরনের ঘাটতির আশঙ্কা থাকে না। পেঁয়াজ নিয়ে এত আলোচনার পর এখনো এ পণ্যের জন্য আমদানির ওপর নির্ভরতার বিষয়টি দুঃখজনক।
সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করাও সম্ভব হতে পারে। বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে অসাধু ব্যবসায়ীদের শক্তির উৎস খুঁজে বের করে তা ধ্বংস করতে হবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় গৃহীত পদক্ষেপগুলো কতটা স্থায়ী সুফল বয়ে আনবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।