ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ। বাংলাদেশ বাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, এক লাখ এক হাজার ১৪৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকাই আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে। মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কমে যাচ্ছে ব্যাংকের সামগ্রিক আয়। গত সেপ্টেম্বর শেষে শুধু খেলাপি ঋণের বিপরীতে সুদ আয় স্থগিত করে রাখা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪১ হাজার কোটি টাকা, যা এক বছর আগে ছিল সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে ব্যাংকের এক বছরে আয় কমেছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ঋণ মন্দ মানের খেলাপি হলে ওই ঋণের বিপরীতে যেমন শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন হলো আমানতকারীদের আমানত সুরক্ষা রাখতে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ হবে তার বিপরীতে নির্ধারিত হারে ব্যাংকের আয় থেকে অর্থ আলাদা করে রাখা, যা নিরাপত্তা সঞ্চিতি নামে অভিহিত। সাধারণত, মন্দ মানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ মন্দ মানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে অর্জিত সুদ আয় খাতে না নিয়ে আলাদা হিসাবে সংরক্ষণ করতে হয়। কেবল মন্দ মানের খেলাপি ঋণ আদায় সাপেক্ষে পরবর্তী সময়ে ওই স্থগিত সুদ আয় খাতে নিতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে ৬০টি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ এক হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৯ শতাংশ। এর মধ্যে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৪৪ হাজার ১৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৪১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা মন্দ মানের খেলাপি ঋণ, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৯৫ শতাংশ। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৪২ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা মন্দ মানের খেলাপি ঋণ, যা শতকরা হিসাবে প্রায় ৮৫ শতাংশ। আর বিদেশী ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের ৭৬ শতাংশ মন্দ মানের খেলাপি ঋণ। দুই সরকারি মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংকের ৮৮ শতাংশ মন্দ মানের খেলাপি ঋণ রয়েছে।
মন্দ মানের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয়ও কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর শেষে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে মন্দ মানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ১৯ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার সুদ আয় স্থগিত করে রাখা হয়েছে, যা আগের বছরের সেপ্টেম্বরে স্থগিত করে রাখা হয়েছিল ১৭ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বেশি আয় স্থগিত করে রাখা হয়েছে আলোচ্য সময়ে। অনুরূপভাবে মন্দ মানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে আলোচ্য সময়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সুদ আয় স্থগিত করে রেখেছে ১৯ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের এমন সময়ে ছিল ১৬ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। আর বিদেশী ব্যাংকগুলো ৩৪৯ কোটি টাকা এবং দুই বিশেষায়িত ব্যাংক সুদ আয় স্থগিত করে রেখেছে এক হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সামনে খেলাপি ঋণের চাপ আরো বেশি থাকবে। তখন বেশি হারে সুদ আয় স্থগিত করে রাখতে হবে। এতে ব্যাংকের আয়ও কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।