‘আমি তোমাদের স্বাধীনতা দিয়েছি, এটি রক্ষা করার দায়িত্ব তোমাদের’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই কথাটি আমরা দু’ভাবে বিশ্লেষণ করতে পারি।
প্রথমত, ৩০ লাখ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের লাল-সবুজের স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা হননের জন্য বহিঃশক্তি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও আক্রমণ করতে পারে, তাই সবসময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, দেশের ভেতরে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি এমনকি স্বাধীনতার সপক্ষ থেকেও বিভিন্ন অপশক্তির উত্থান হতে পারে, যার মাধ্যমে এ দেশের সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক স্বাধীনতা হননের চেষ্টা হবে। আর তাই একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে যেসব মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা আমাদের থাকার কথা, সেগুলো যখনই হননের চেষ্টা করা হবে, তখনই অপশক্তিগুলোর বিরুদ্ধে সবাইকে একতাবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে এবং স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো রক্ষা করার দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনায় সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে সারা দেশে ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন’ ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত চলা সড়ক নিরাপত্তার এই আন্দোলন দেশের ইতিহাসে একটি বড় ছাত্র আন্দোলন ও গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকার কাছে ৯ দফা দাবি তুলে ধরে, যার মধ্যে গণপরিবহনে ছাত্রছাত্রীদের অর্ধেক ভাড়া নেয়ার দাবিও ছিল। সেসময় সরকার তড়িঘড়ি করে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করে। পরিবহন মালিক সমিতির চাপের মুখে সড়কের শৃঙ্খলা আনয়নে এই আইনের প্রয়োগ খুব একটা দেখা যায় না। তা ছাড়া বেসরকারি বাসমালিকদের কাছে একরকম জিম্মি হয়ে থাকা সরকার সে সময় গণপরিবহনে ছাত্রছাত্রীদের অর্ধেক ভাড়ার বিষয়টি আমলে নেয়নি।
বঙ্গবন্ধুর একটি কথা মনে পড়ছে, তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে একবার উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, ‘তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা।’
এতদিন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গেটলক কিংবা সিটিং সার্ভিসের নামে শিক্ষার্থীদের হাফ পাস ভাড়ার অধিকারকে বাসমালিকরা অবজ্ঞা করে আসছিলেন। এক দিকে তেলের দাম ভাড়ার অজুহাতে বাসমালিকরা পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে সরকার ও জনগণকে জিম্মি করে বাসভাড়া বাড়িয়ে দেন, অন্য দিকে বেসরকারি বাসমালিকরা কখনোই সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া নেন না। এতে করে স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত খরচ অনেক বেড়ে যায়, ফলে শিক্ষার্থীরা গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে আবারো রাস্তায় আন্দোলনে নামে। শিক্ষার্থীরা মনে করে, ‘গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া’ তাদের কোনো আবদার নয়; রাষ্ট্রের কাছে এটি তাদের মৌলিক অধিকার।
তেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে বাসের ভাড়া বাড়ানো হলো। প্রকাশ্যে মানুষের পকেট থেকে লুটে খাওয়া শুরু হলো। অনেক গাড়ি গ্যাসে চললেও সেগুলোরও ভাড়া বাড়িয়ে দিলো। ফলে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত খরচ বেড়ে যায়। অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এই খরচ বহন করা কষ্টসাধ্য। ফলে এই অন্যায় অযৌক্তিক ভাড়ার অর্ধেক নিতে বলছে ছাত্রছাত্রীরা। এতে লোকসান হবে না বাসমালিকদের। বাসে অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী থাকলেও বাকি সবার ‘পকেট কাটা’র জন্য তো সিটিং সার্ভিস, গেটলক, ডাইরেক্ট সার্ভিস থাকছেই।
গণপরিবহন শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার সুনির্দিষ্ট আইনের কোনো দলিল পাওয়া না গেলেও ছাত্রছাত্রীদের ‘হাফ ভাড়ার’ তথ্য অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, স্বাধীনতার আগে থেকেই গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার রীতি প্রচলন ছিল।
১৯৬৯ সালে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবির একটি ছিল গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া নিশ্চিত করা। ১১ দফা দাবির ১ (ঢ) তে উল্লেøখ ছিল, “ট্রেনে, স্টিমারে ও লঞ্চে ছাত্রদের ‘আইডেন্টিটি কার্ড’ দেখাইয়া শতকরা ৫০ ভাগ ‘কনসেশনে’ (ছাড়ে) টিকিট দেয়ার ব্যবস্থা করিতে হইবে। মাসিক টিকিটেও ‘কনসেশন’ দিতে হইবে।” ১ (ঢ) তে আরো উল্লেখ ছিল, “পশ্চিম পাকিস্তানের মতো বাসে ১০ পয়সা ভাড়ায় শহরের যেকোনো স্থানে যাতায়াতের ব্যবস্থা করিতে হইবে। দূরবর্তী অঞ্চলে বাস যাতায়াতেও শতকরা ৫০ ভাগ ‘কনসেশন’ দিতে হইবে। ছাত্রীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করিতে হইবে।” সে সময় ছাত্র আন্দোলনের পর ইয়াহিয়া খানের সামরিক আদেশে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া দেয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হয়। এই ধারা স্বাধীনতার বহু বছর পরও চালু ছিল।
হাফ ভাড়া নিয়ে একটি কৌতুক পড়েছিলাম, ‘যাত্রীবাহী ট্রলারে করে কয়েকজন শিক্ষার্থী যাচ্ছে। ভাড়া আদায়কারী ভাড়ার টাকা তুলতে এলো। স্কুলগামী এক শিক্ষার্থী অর্ধেক ভাড়া দিয়ে বলল, ‘স্টুডেন্ট’। আরেক শিক্ষার্থীর কাছে যাওয়ার পর সে-ও দিলো অর্ধেক। তৃতীয় শিক্ষার্থীর কাছে ভাড়া চাইলে সে-ও দিলো অর্ধেক। ভাড়া আদায়কারী জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকালে ওই শিক্ষার্থী বলল, ‘স্টুডেন্ট হাফ’। ভাড়া আদায়কারী কথা না বাড়িয়ে পরের জনের কাছে গেলেন, যিনি মধ্যবয়সী এক রসিক মানুষ। ভাড়া আদায়কারী ভাড়ার জন্য হাত বাড়াতেই তিনি পান খাওয়া মুখে হেসে বললেন, ‘আমি ছাত্রদের বাপ, আমার ভাড়া তো মাফ!’
সেই ব্যক্তি যিনি সম্মানের দিক দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাপ সমতুল্য, তার ভাড়া মাফ হয়েছিল কি না জানা নেই, তবে ছাত্রদের কাছ থেকে ভাড়া অর্ধেক নেয়া হয়েছিল সেটি পরিষ্কার। বছরের পর বছর ধরে আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেয়ার এই রীতি চলে এসেছে। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব আয় থাকে না। তারা অভিভাবকদের দেয়া হাতখরচের ওপর নির্ভরশীল। হাফ ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে পারলে তাদের শিক্ষার খরচ কিছুটা হলেও কমে, চাপ কমে অভিভাবকদের।
১৯৪০ সালের মোটরযান বিধিমালায় বলা আছে, ‘অনূর্ধ্ব ১২ বছর বয়স্ক শিশুকে অর্ধেক হিসেবে গণনা করতে হবে। অনূর্ধ্ব তিন বছরের শিশুকে হিসাবের মধ্যে রাখা অর্থাৎ গণনা করা যাবে না।’ বিধিমালাটি এখনো কার্যকর আছে।
২০১৫ সালের অক্টোবরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আমি এই মুহূর্ত থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, রাজধানীতে চলাচলরত বিআরটিসির পাশাপাশি অন্যান্য পরিবহনেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেবে।’ তবে পরিবহন সেক্টরে এই মৌখিক নির্দেশ কখনো মানা হয়নি।
এ দিকে রেলে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার বিধান আছে। নিয়মটি হলো- শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত ফরমে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানপ্রধানের সাইন নিয়ে জমা দিলে রেলে অর্ধেক ভাড়ায় ভ্রমণ করতে পারবে। তবে এই নিয়ম মেইল, এক্সপ্রেস, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার প্রচলন রয়েছে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ১০০ থেকে ১৫০ রুপিতে বাসে যাতায়াতের জন্য শিক্ষার্থীদের বিশেষ পাসের ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া ভারতের কলকাতা, মুম্বাই, তেলেঙ্গানাসহ বিভিন্ন রাজ্যে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য বাসে অর্ধেক ভাড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। শ্রীলঙ্কা, ভুটান, নেপাল, ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীর জন্য গণপরিবহন বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুশিক্ষার্থীদের জন্য তাদের বিশেষ বাসসেবা রয়েছে। ১২ বছরের চেয়ে বেশি বয়সী শিশুশিক্ষার্থীদের জন্য এই সেবার আওতায় প্রাপ্তবয়স্কদের অর্ধেক ভাড়া নেয়া হয়। বয়স ১২ বছরের কম হলে ভাড়া প্রাপ্তবয়স্কদের হারের ২৫ শতাংশ। নেপালে বৈধ পরিচয়পত্রধারী শিক্ষার্থীদের আন্তঃনগর ও দূরপাল্লার বাসের ভাড়ায় ৪৫ শতাংশ ছাড় দেয় সরকার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের বিক্ষোভের মুখে দেশটির সরকার এই ব্যবস্থা চালু করেছে। ফিলিপাইন সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের গণপরিবহনের ভাড়ায় ২০ শতাংশ ছাড় দিয়ে আইন পাস করে ২০১৯ সালে। পাকিস্তানে লাহোর, গুজরানওয়ালা, শিয়ালকোট, ফয়সালাবাদ, রাওয়ালপিন্ডি, মুলতান ও বাহাওয়ালপুরে শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে পাসের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ রুপিতে ছয় মাস ও ৬০ রুপিতে এক বছরের জন্য এই কার্ড দেয়া হয়। শহরে যেকোনো দূরত্বে শিক্ষার্থীরা ১০ রুপি দিয়ে চলাচল করতে পারে। ২০১১ সাল থেকে এই ব্যবস্থা চলছে। ৫৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ও ৪২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এই কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে।
অন্য দিকে আমাদের দেশে বেসরকারি বাসমালিকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নিতে অস্বীকৃতি জানান। তথাকথিত সিটিং সার্ভিসের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।
অথচ সড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সড়কে গতির চেয়ে দুর্গতি বেশি। সড়কে সাধারণ জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। আইনের সঠিক প্রয়োগ ও জনসচেতনতার অভাবে সড়কে ঝরে বিপুল রক্ত।
আইন অনুসারে, বাসে আসন থাকবে ৫২টি, মিনিবাসে ৩০টি। দু’টি আসনে হেলান দেয়ার দূরত্ব হবে ২৬ ইঞ্চি। কিন্তু পরিবহন মালিকরা বেশি লাভের আশায় আইনের তোয়াক্কা না করে বাসের আকৃতি পরিবর্তন করেন। লক্কড়-ঝক্কড় বাস রাস্তায় নামিয়ে দেন, যার কারণে এসব ফিটনেসবিহীন গাড়ির মাধ্যমে সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
‘নিসচা’র দেয়া এক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, ২০২০ সালে বাংলাদেশজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় চার হাজার ৯৬৯ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এবং পাঁচ হাজার ৮৫ জন আহত হয়েছেন। প্রতিবেদন অনুসারে , ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বেশি ৪৪৭টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৪৯৫ জন নিহত ও ৮২৩ জন আহত হন। অপর দিকে এপ্রিল ও মে মাসে সবচেয়ে কম যথাক্রমে ১৩২ ও ১৯৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগের বছর ২০১৯ সালে প্রাণহানির সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ২২৭।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের যদি খতম করতে পারেন, তা হলে বাংলাদেশের মানুষের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দুঃখ চলে যাবে। এত চোরের চোর, এই চোর যে কোথা থেকে পয়দা হয়েছে তা জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গেছে কিন্তু এই চোর তারা নিয়ে গেলে বাঁচতাম। এই চোর রেখে গেছে। কিছু দালাল গেছে, চোর গেলে বেঁচে যেতাম।’
পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সরকার পর্যন্ত একপ্রকার ‘জিম্মি’ হয়ে আছে। সরকার কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে গেলেই পরিবহন মালিক সমিতি ধর্মঘটের নামে সারা দেশে মানুষকে জিম্মি করে রাখে যার কারণ সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।
দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা এ অনিয়মের সাথে চলতে চলতে যেন কিছু মানুষ এই অনিয়মকেই মেনে নিয়েছেন। কিন্তু না, আমাদের নতুন প্রজন্ম আছে। তারা মানতে চায় না। তারা এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের কথা বলতে গেলে একজনকে অবশ্যই স্মরণ করতে হয়। তিনি হলেন, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকেই তিনি নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলনে নামেন। ১৯৯৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’ স্লোগানে প্রতিষ্ঠা করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)। তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আজকের তরুণদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে বিশেষভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে।
আমরা আশা করতে পারি, একদিন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। সড়ক হবে নিরাপদ, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ‘গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া’ নিশ্চিত হবে।
সেই সাথে আরেকটা বিষয় অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন। সেটি হলো- দেশের পিছিয়ে পড়া নিম্ন আয়ের একটি অংশ পরিবহন সেক্টরে শ্রম দেন। ‘হাফ পাস’ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেন তাদের পেটে লাথি না পড়ে সে দিকেও লক্ষ রাখতে হবে। আর সেটি সম্ভব, যদি পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা আসে; বিভিন্ন পরিবহন সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি যদি বন্ধ হয়। আর সড়কের পরিবহন আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়।
সর্বশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি স্বপ্নের কথা বলে শেষ করতে চাই, ‘নতুন করে গড়ে উঠবে এই বাংলা, বাংলার মানুষ হাসবে, বাংলার মানুষ খেলবে, বাংলার মানুষ মুক্ত হয়ে বাস করবে।’
লেখক : চিকিৎসক ও কলামিস্ট