গর্ভাবস্থায় প্রভাবিত করে- এমন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো মোকাবেলায় একজন মায়ের ধারণা রাখা প্রয়োজন। পিঠ ও মাথাব্যথার মতো গর্ভাবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য লক্ষণগুলোর মধ্যে পায়ে খিঁচ লাগা একটি সাধারণ সমস্যা। এটি একটি অস্থায়ী অবস্থা। খিঁচ লাগা হলো শরীরের পেশির সংকোচন বা হঠাৎ শক্ত হয়ে যাওয়া। এ ব্যথা গর্ভাবস্থাকালীন পায়ের পেশিতে বেশি দেখা যায়। অনেক গর্ভবতী তাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে রাতে নিম্ন পায়ে খিঁচ লাগার সমস্যায় ভোগেন। প্রসবের পর এ সমস্যা আপনাআপনি দূর হয়ে যায়। তবে এ অবস্থায় গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে বিশ্রামের সঙ্গে নিয়মিত বিকল্প সার্কুলেশন বুস্টার ব্যায়াম অনুশীলন করা (পায়ের পাতা ও পা ওপরে তোলা) ক্র্যাম্পগুলো বিকাশ থেকে রোধ করতে পারে।
পায়ে ক্র্যাম্প হওয়ার কারণ : অতিরিক্ত ওজন, ভারী জিনিস বহন, খনিজের ভারসাম্যহীনতা, পায়ের স্নায়ু ও রক্তনালিগুলোর ওপর চাপ বাড়া এবং ক্রমবর্ধমান শিশুর মাধ্যমে প্রসারিত জরায়ু, গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত ওজন বৃদ্ধি, পায়ে তরল তৈরি হওয়া থেকে ফোলাভাব ইত্যাদি।
পায়ে ক্র্যাম্পের লক্ষণ : হাঁচি-কাশি বা অবস্থান পরিবর্তন করে বসে থাকা অথবা শুয়ে থাকার সময় ক্র্যাম্পিং হতে পারে। এ খিঁচগুলো দিনের বেলা হাঁটুর ওপর এবং নিচে আসতে পারে। তবে ক্লান্তি ও তরল জমে গেলে এগুলো সাধারণত রাতে বেশি লক্ষণীয় হয়। যদি আপনি গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হন, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। যদি চোখের চারপাশে ধোঁয়াশা থাকে, মুখের ফোলাভাব হয় বা পা ও গোড়ালিগুলোর অস্বাভাবিক ফোলাভাব হয় অথবা এক পা অন্যটির চেয়ে বেশি ফুলে যায়, তবে ক্র্যাম্পগুলো রক্তের জমাট বাঁধার কারণে হতে পারে।
চিকিৎসা : বেশিরভাগ হবু মায়ের পায়ের ক্র্যাম্প সাধারণ। বিভিন্ন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে খিঁচ লাগা থেকে মুক্ত থাকা যায়। কিছু মাকে পরিপূরক ম্যাগনেসিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হয় (গোটা শস্য, শিম, বাদাম, বীজ)। তাতে গর্ভাবস্থায় লেগ ক্র্যাম্প প্রতিরোধে সহায়তা করে। বেশি বেশি পানি পান করুন। গর্ভাবস্থায় পায়ে খিঁচ লাগার জন্য পরিপূরক গ্রহণের আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এই সহজ পদ্ধতিগুলোও ব্যবহার করতে পারেন- নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং স্ট্রেচ চেষ্টা করুন। পা ছড়িয়ে আরাম করে বসুন। আপনার পায়ের সমর্থন করতে স্টকিংস পরুন। হাঁটু ও পায়ের জন্য একটি প্রশান্ত ম্যাসেজ সাহায্য করবে। জেলপ্যাক বা গরম জলের বোতল দিয়ে তাপ প্রয়োগ করুন। ঠান্ডায় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে কিছুটা অস্বস্তি কমতে পারে। উপযুক্ত জুতো পরুন, যা আরামদায়ক। আক্রান্ত দিকের পেশিগুলো প্রসারিত করুন। হালকা গরম পানিতে গোসল করুন।
প্রাকৃতিক প্রতিকার : গর্ভাবস্থায় শারীরিক ব্যথা এবং পায়ে খিঁচ লাগা স্ট্রেস, অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাব হলো সাধারণ কারণ। তাই যা করবেন তা হলো- স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার অভ্যাস করুন। পরিমাণমতো পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করে নিন।
যোগব্যায়াম, হাঁটা বা সাঁতারের মতো কোমল অনুশীলনগুলোও আপনার খিঁচ লাগার তীব্রতা হ্রাস করতে সহায়তা করবে। পায়ে অবিরাম ব্যথা, হাঁটুর নিচের পেশির কোমলতা বা ফোলাভাব, অস্পষ্ট দৃষ্টিসহ অনবরত মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বুকব্যথা গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য মোটেও কাম্য নয়। স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থার মূল বিষয় হলো- এ সম্পর্কিত অসুবিধা সম্পর্কে আরও সচেতন থাকা।আপনার মন এ বিষয় থেকে দূরে রাখুন এবং সুস্থ, সুন্দর সন্তান ভূমিষ্ঠের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
লেখক : বাতব্যথা, প্যারালাইসিস রোগে ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ; চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা। ০১৭৮৭১০৬৭০২