বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

ভাড়াটে যোদ্ধায় দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ঝুঁকিতে লিবিয়া

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ২৮২ বার

সুদান থেকে আগত শত শত ভাড়াটে যোদ্ধা লিবিয়ায় লড়াই করছে। ফলে উত্তর আফ্রিকার রাজ্যটিতে চলমান সঙ্ঘাত একটি আবশ্যম্ভাবী আন্তর্জাতিক যুদ্ধে মোড় নেয়ার আশঙ্কা আরো বাড়িয়ে তুলেছে, যা দেশটির অধিকাংশ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।

লিবিয়ায় সক্রিয় সুদানি যোদ্ধাদের দু’টি ভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা শত শত নতুন যোদ্ধা নিয়োগ দিয়েছেন। উভয় গোষ্ঠীই ত্রিপোলিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির (এলএনএ) পক্ষে লড়াই করছে।
লিবিয়ার দক্ষিণে অবস্থান নেয়া একটি গোষ্ঠীর এক কমান্ডার বলেছেন, ‘প্রচুর যুবক আসছেন… এমনকি আমাদের এত বড় সংখ্যককে সমন্বয় করার সক্ষমতাও নেই।’ ওই কমান্ডার জানান, লিবিয়ায় কমপক্ষে তিন হাজার ভাড়াটে সুদানি যোদ্ধা লড়াই করছে, যা পূর্ববর্তী হিসেবের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। আরেক কমান্ডার বলেছেন যে, ভবিষ্যতে নিজ দেশে (সুদানে) লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ অর্জনের একমাত্র উপায় হিসেবেই তারা লিবিয়ায় ভাড়াটে যোদ্ধা হিসেবে লড়াই করছে। তিনি বলেন, তিনি বশির ক্ষমতাচ্যুত হবেন এমন প্রত্যাশা করেননি, যদিও প্রবীণ একনায়কের পতনের ফলে ‘রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে গেছে’, ‘তবে খার্তুমে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগের সরকারের চেয়ে আলাদা নয়’।

অপর একজন বলেন, ‘আমি জানি যে আমরা ভাড়াটে লোক এবং আমরা সম্মান ও মর্যাদার সাথে লড়াই করছি না। তবে এটি অস্থায়ী, এখানে আমাদের মিশন শেষ করে আমরা ঘরে ফিরে যাবো।’
গার্ডিয়ানকে সাক্ষাৎকার দেয়া সব সুদানি কমান্ডার বলেছেন যে, তারা বশিরের পতনের পরে প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সুদান ফিরে যাবেন বলে আশাবাদী। ‘আমরা বিশ্বাস করি না যে ওমর আল বশির চলে গেছেন। আমরা এখন লিবিয়ায় আছি তবে সুদানে আমাদের জন্য আরো কিছু যুদ্ধ অপেক্ষা করছে।’
‘যুবকরা অর্থ উপার্জনের জন্য আসছেন। এটি এক বছর, দুই বছর বা তার বেশি সময় হতে পারে তবে শেষ পর্যন্ত এই সঙ্ঘাতটি স্তিমিত হয়ে যাবে। এক পর্যায়ে তারা (সুদান) বাড়ি ফিরতে শুরু করবে,’ বলেছিলেন ওই কমান্ডার।

এই মাসের শুরুতে জাতিসঙ্ঘ বলেছিল যে, লিবিয়ায় সুদান থেকে আগত যোদ্ধাদের হস্তক্ষেপ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির নিরাপত্তার জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি। জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল নিরাপত্তা পরিষদকে ৩৭৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ২০১৯ সালে লিবিয়ায় সুদানিদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় লক্ষ্য করা গেছে এবং বিষয়টি দেশটিতে আরো অস্থিতিশীলতার কারণ হতে পারে।
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে নিহত হওয়া সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে পদচ্যুত করার পর থেকেই লিবিয়ায় অশান্তি বিরাজ করছে। গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশৃঙ্খলার মধ্যে থাকা লিবিয়া বিভক্ত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক বিভক্তির ফলশ্রুতিতে ত্রিপোলিতে জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত একটি দুর্বল প্রশাসন দেশটির পশ্চিমে সরকার পরিচালনা করছে এবং পূর্বের অঞ্চলে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার হাফতারের নেতৃত্বাধীন এলএনএর সাথে জোটবদ্ধ হয়ে শাসন পরিচালনা করে আসছে। এদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো মিলিশিয়া এবং বিদেশী সরকার দ্বারা মদদপুষ্ট হয়েছে।

হাফতার বাহিনী গত এপ্রিলে ত্রিপোলি দখলের লক্ষ্যে আকস্মিক সামরিক হামলা শুরু করে, যা হঠাৎ করেই স্থগিত হয়ে যায়। এ সময় উভয় পক্ষই পরস্পরের প্রতি অত্যাধুনিক সব অস্ত্র ব্যবহার করে। এই মাসের শুরুর দিকে ৭৬ বছর বয়সী হাফতার ঘোষণা দিয়েছেন যে, তার বাহিনী ত্রিপোলির পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে ‘চূড়ান্ত যুদ্ধের’ প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাফতারের নেতৃত্বাধীন এলএনএ এবং পূর্বাঞ্চলের সরকার ফ্রান্স, রাশিয়া, জর্দান, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং অন্যান্য আরব দেশগুলোর সমর্থন পাচ্ছে, যেখানে ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে ইতালি, তুরস্ক এবং কাতার। লিবিয়ায় অবস্থিত কয়েকটি বৃহত্তম সুদানি গোষ্ঠী এর আগে সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চল দারফুরে লড়াই করেছিল। খার্তুমে দমনকারী সরকার কর্তৃক প্রেরিত মিলিশিয়া ও সেনাদের বিরুদ্ধে একাধিক বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল ওইসব গোষ্ঠী।

গার্ডিয়ানের অনুসন্ধান

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com