সমুদ্র অর্থনীতি ও বাংলাদেশের বিনিয়োগ সুবিধাকে কাজে লাগাতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণোদনা চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বলছে, সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে গবেষণায় উৎকর্ষ বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যিকীকরণে উভয় ক্ষেত্রে প্রণোদনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে কেউ কেউ বলছেন প্রণোদনা বা ইনসেনটিভ দিয়ে বেশি দূর আগানো যাবে না, বরং সমুদ্র অর্থনীতিকে কাজে লাগাতে এমন নীতি প্রণয়ন করতে হবে যাতে বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যবসায়ী এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠবে। প্রণোদনার চেয়ে বাস্তবমুখী নীতিই বেশি জরুরি। তবে সমুদ্র বিজয়ের প্রায় ১০ বছর পরও কার্যত সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগাতে না পারার ব্যর্থতাকে উপেক্ষা করে সম্মিলিতভাবে সবাইকে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কার্যক্রম সম্প্রসারণে একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় একাধিক মন্ত্রণালয়ের সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব বিশ্বব্যাপী সমুদ্র অর্থনীতি এবং বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রণোদনা চালু করার বিষয়ে জোর দেন। যাতে করে বাংলাদেশের সমুদ্র অর্থনীতিতে দেশি বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষণীয় হয়। বিশেষ করে সামুদ্র্রিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা, সামুদ্রিক মৎস্য চাষ উন্নয়ন, বাণিজ্যিক নৌপরিবহনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সমুদ্র ভ্রমণে পর্যটন বিকাশ সাধন, অফশোর জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সুনীল বায়োটেকনোলজি গবেষণা ও উন্নয়ন, জাহাজ নির্মাণ ও রিসাইক্লিং শিল্প সম্প্রসারণসহ সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোতে।
মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব বলেন, শিপিং সেক্টরে আমাদানি রপ্তানি কাজে বিদেশি জাহাজ ব্যবহারের পরিবর্তে নিজস্ব জাহাজের সংখ্যা আরও বেশি বাড়ানো গেলে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি রপ্তানি কাজে বিদেশি জাহাজের সংখ্যা কমবে। আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে দেশের অনেক টাকা সাশ্রয় হবে। সচিব তার বক্তব্যে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাও বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে ট্যরিফ হ্রাস করে জাহাজ ক্রয়ে প্রণোদনা ঘোষণা করা উচিত। মৎস্য চাষের উৎকর্ষতা বাড়াতে মাছ কালচারের প্রণোদনাসহ ব্লু ইকোনমিসহ সংশ্লিষ্ট খাতে কার্যকর নীতি প্রণয়নে আহ্বান জানান। তবে বৈঠকে অর্থ সচিব ব্লু ইকোনমি সেক্টরকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেন। তিনি বলেন, ব্লু-ইকোনমি খাতকে মূলত তেল গ্যাস আহরণ, মৎস্যসম্পদ আহরণ, বাণিজ্যিক নৌপরিবহন, পর্যটন ও জাহাজ নির্মাণ খাতে ভাগ করতে বলেন। তিনি বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে। মৎস্য খাতে ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা রয়েছে। তবে প্রণোদনা দিয়ে বেশি দূর আগানো সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি ব্ল ইকোনমিবান্ধব একটি পলিসি নির্ধারণের ওপর জোর দিয়েছেন।
তবে বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান খুব বেশি আশার কথা শোনাতে পারেননি। তিনি বলেন, সান্তোষ ও দাইয়ু- দুটি বিদেশি কোম্পানি প্রফিট শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) হালনাগাদ করে সময় বাড়ানোর আগ্রহ প্রকাশ করলেও সেটা বাড়ানো সম্ভব না হওয়ায় কোম্পানি দুটি চলে যায়। এ ছাড়া গ্যাসের দাম বাড়াতে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর চাপ রয়েছে বলে সচিব জানান। তবে ভারতীয় কোম্পানি ওএনসিজি বঙ্গোপোসাগরে কাজ করছে বলে তিনি জানান। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংশ্লিষ্ট বিশেষ বিধান আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পিএসসি প্রয়োগের বিষয়ে মতামত প্রদান করা হলে বৈঠকে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেন।
বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মতামত দেন, প্রণোদনার পরিবর্তে নীতিগত সহায়তা দেওয়া গেলে সমুদ্র অর্থনীতির মৎস্য খাত বেশি কার্যকর হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব পর্যটনশিল্পকে উন্নয়নের জন্য মেরিটাইম ট্যুরিজম নীতিমালা চূড়ান্তকরণের কাজ চলমান রয়েছে বলে জানান। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) জানায়, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্লু ইকোনমি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ও আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
ব্লু ইকোনমি সেলের প্রতিনিধি জানান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমুদ্র তীরবর্তী দেশে মেরিন স্পেশিয়াল প্ল্যানিং (এমএসপি) থাকলেও বাংলাদেশে এখনো করা হয়নি। সেটা প্রণয়ন করতে ব্লু ইকোনমি সেল কাজ করছে।