সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন

নারী নেতৃত্বের দেশে ধর্ষণের জয়জয়কার

সাইফুল ইসলাম তানভীর
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ১৪১ বার

সুপার পাওয়ার আমেরিকায় আজ পর্যন্ত কোনো নারী প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। সর্বোচ্চ ভাইস প্রেসিডেন্ট, স্পিকার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইত্যাদি কয়েকটি বড় বড় পদে নারীরা বসতে পেরেছেন। বহু চেষ্টা করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী রডহ্যম হিলারি কিন্তু কাজ হয়নি। কখনো কোনো নারী আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পারেন কি না তাতে সন্দেহ আছে। ব্রিটেনের রানীর পদ অলঙ্কারিক। নির্বাহী ক্ষমতা রানীর তেমন কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী পদে মার্গারেট থ্যাচার, থেরেসা মে ছাড়া আর কারো নাম মনে পড়ছে না। রাশিয়ার ব্যাপারে, চীনের ব্যাপারে খোঁজ নিলে সেখানেও নারীদের বড় বড় নির্বাহী পদের কাউকে দেখি না। হ্যাঁ, তারা অনেকে শূকর খায়। প্রচুর মদ খায়। বিয়ে সেখানে কম। সেক্স সেখানে ওপেন। ঠিক আছে। কিন্তু ওইসব দেশে কি আমাদের দেশের মতো ক’দিন পরপর ধর্ষণ-গণধর্ষণ ঘটে? ওইসব দেশের ধনী ব্যক্তিদের ছেলেরা কি কোনো নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে এড়িয়ে যেতে পারে? কিন্তু আমাদের দেশে হচ্ছেটা কী?

আমাদের স্বাধীনতার বয়স ৫০। এই ৫০ বছরের মধ্য ২৯ বছরই এই দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন দু’জন নারী। নারী অধিকারের বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে নারীদের পক্ষের নানান কথা এই দু’জন নারী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শুনতে শুনতে আমরা বড় হলাম। কিন্তু কোথায় নারী অধিকার? বাস্তবে কি এখানকার নারীরা তাদের অধিকার ভোগ করতে পারছে? কেন এখানকার নারীরা নিরাপত্তার মধ্যে নেই? রাষ্ট্রের কি দায়িত্ব নয় দেশের সব মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার? শুধু কি মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ারই দায়িত্ব রাষ্ট্রের? নাগরিকদের সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ। পশু পাখি, বৃক্ষ সব কিছুর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রের। কিন্তু এই রাষ্ট্রের যেন কোনো দায়িত্বই নেই আজ! আজ কোনো কিছুর নিরাপত্তা নেই। আজকে এদেশের নারীরা ধর্ষণ হয়েই চলছে। একের পর এক ধর্ষণ। পত্রিকার পাতায় নিয়মিত ধর্ষণের খবর পাই। নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া তাতেই এত ধর্ষণের খবর আমরা পাচ্ছি। কত ধর্ষণের খবর যে মিডিয়ায় আসছে না, তা আল্লাহই ভালো জানেন।

আমাদের দেশটি দীর্ঘ বছর নারীশাসিত হওয়ার পরও নারীরা অধিক ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ব্যাপারটা কি আশ্চর্য নয়? এই দেশে তো নারীরা পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদে থাকার কথা। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নারীরা রাষ্ট্রীয় এত বড় বড় নির্বাহী ক্ষমতায় আছেন কি না তা জানি না। আমাদের এখানে নারীরা বিচারপতি পদে, তা-ও আছেন। ক’দিন আগে একজন নারী বিচারপতি ধর্ষিতার বিরুদ্ধেই কোর্টে যে কথা বলেছেন তা ছিল চরম আপত্তিকর।

সম্প্রতি কক্সবাজারে একজন নারীকে কয়েকজন মিলে ধর্ষণ করেছে। যে নারী তার স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারে বেড়াতে গেছেন। স্বামী-সন্তানকে আটকে রেখেই ওই ধর্ষকরা সেই নারীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষিতার আট মাসের একটি সন্তানও ছিল। কক্সবাজার আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পর্যটন কেন্দ্র। সেখানে বিদেশী অনেক পর্যটক আসেন। এখন এই যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটল, এই খবর কি আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়বে না? যার কারণে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সম্মান কি নষ্ট হলো না? যেই দেশ নিজের দেশের মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে না, সে দেশ বিদেশী পর্যটকদের নিরাপত্তা দেবে কিভাবে। এমন প্রশ্ন কি বিদেশীদের কাছে আসবে না?

আমাদের দেশে নারীরা সচিব, নারীরা ভাইস চ্যান্সেলর, নারীরা নির্বাচন কমিশনার, নারীরা পিএসসি চেয়ারম্যান, নারীরা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, নারীরা সামরিক কর্মকর্তা, নারীরা ব্যাংকের এমডি এবং আরো সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড় বড় পদে বসেছেন।

নারীরা মেম্বার-চেয়ারম্যান-মেয়র ইত্যাদি স্থানীয় সরকারের বহু পদে আছেন।

নারীরা আইনসভার সদস্য পদে আছেন অনেকজন। নারীরা গুরুত্বপূর্ণ অনেক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হয়েছেন। যেমন পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, কৃষি, শিক্ষা, সংস্থাপন, ডাক তার, তথ্য ইত্যাদি। নারী প্রধানমন্ত্রীর একার আন্ডারে প্রতিরক্ষা জ্বালানিসহ আরো আছে ৯টি মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার। জাতীয় সংসদের উপনেতা। বিরোধীদলীয় নেতা। প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। প্রধানমন্ত্রী সেটা তো দীর্ঘ বছর আছেনই।

এত কিছুর পরও নারীরা লাখ লাখ বার ধর্ষিত হয়েছেন এদেশে। এসব থেকে কি বোঝা যায়, আমাদের শাসনব্যবস্থায় রয়েছে বিশাল গলদ।

অতিরিক্ত আবেগ ব্যবহার হয়েছে কিন্তু কার্যকর শাসনব্যবস্থা আমাদের তৈরি হয়নি।

বিচারহীনতার কারণে এই ধর্ষণ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। খুব কম ধর্ষণেরই বিচার হয়েছে। খোদ পুলিশের কাছেই নারীরা নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।

প্রভাবশালী ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এবং তাদের ছেলেরা নারীদের ধর্ষণ করছে কিন্তু এর বিচার হয় না। উল্টো ধর্ষকরা রাষ্ট্র থেকে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা পায়।

আমাদের মিডিয়া সারাক্ষণ একাত্তরের ধর্ষণ নিয়ে অতি ব্যস্ত। একাত্তরের ধর্ষণ নিয়ে সিনেমা নাটক এখনো তৈরি হচ্ছে।
প্রশ্ন আনছেন না স্বাধীন সার্বভৌম দেশে এত ধর্ষণের মহোৎসব কেন? কারা এই ধর্ষক?

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com