সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৩ পূর্বাহ্ন

কর্মজীবী নারীর ভোগান্তি

অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২২
  • ১৭৩ বার

আমাদের দেশে বর্তমানে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের বাস্তবতায় সামনের দিনগুলোতে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা আরো বাড়বে। এই মুহূর্তে রাজধানী ঢাকাসহ শহরগুলোতে কতজন কর্মজীবী নারী রয়েছেন, তার কোনো সঠিক তথ্য বা পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই।

অনুমান করা হচ্ছে কয়েক লাখ হতে পারে। এসব কর্মজীবী নারীর একটি অংশ বিবাহিত। অপর একটি অংশ অবিবাহিত। তারা বিভিন্ন ব্যাংক, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে তারা ঢাকায় আসেন, বাসস্থানের সমস্যায় পড়েন। বিরাটসংখ্যক কর্মজীবী নারীর জন্য রাজধানী ঢাকায় মাত্র তিনটি (নীলক্ষেত, খিলগাঁও, মিরপুর-১) কর্মজীবী হোস্টেল রয়েছে। সেখানে কর্মজীবী নারীদের থাকার আসন মাত্র এক হাজার। অথচ এ শহরে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ৫০ লাখের বেশি।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সারা দেশে মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের আওতায় পরিচালিত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল রয়েছে আটটি। রাজধানীর ঢাকার বাইরে সাভারের বড় আশুলিয়া, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও যশোরে। সারা দেশে আটটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সিট সংখ্যা ২১৫৭টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় সমুদ্রে বারিবিন্দু। ফলে বাধ্য হয়ে অধিকাংশ কর্মজীবী নারী ভাড়া বাসায় ওঠেন এবং সমস্যার মুখোমুখী হন। কম খরচে থাকতে গিয়ে অনেকে কর্মস্থল থেকে অনেক দূরে বাসা কিংবা মেস ভাড়া করে থাকেন। যোগাযোগের ভোগান্তিতে পড়েন কর্মস্থল থেকে বাসস্থানের দূরত্বের কারণে।

কর্মজীবী নারীর ভোগান্তির শেষ নেই। চলাফেরায় নিরাপত্তা নেই। আগে তাদের যাতায়াতের জন্য নির্দিষ্ট বাস সার্ভিস চালু ছিল যদিও প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। ফলে বাধ্য হয়ে একজন নারীকে পুরুষের সাথে রীতিমতো যুদ্ধ করে বাসে উঠতে হয়। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফলে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ প্রায়ই পত্রপত্রিকায় দেখা যায়। দ্বিতীয়ত, তারা যে সমস্যার মুখোমুখী হন তা হচ্ছে স্থানীয় কোনো অভিভাবক না থাকায় তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। রাস্তায় চলাফেরা করার সময় তাদের প্রাকৃতিক কাজের প্রয়োজন পড়লে যাওয়ার সুযোগ নেই। রাজধানী ঢাকায় কিছু জায়গায় পাবলিক টয়লেট থাকলেও সেগুলো মানসম্মত নয়। পুরুষ এবং মহিলা টয়লেট একসাথে হওয়ায় মহিলারা অস্বস্তি বোধ করেন। কারণ পুরুষরা এগুলোর দেখাশোনা করেন। মহিলাদের জন্য আলাদা টয়লেট নির্মাণ এবং মহিলা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এটা করতে পারলে তাদের অস্বস্তি বোধ কিছুটা হলেও কমবে।

কর্মজীবী নারীদের বাসস্থান সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মজীবী নারী হোস্টেল আরো বাড়ানো দরকার যেখানে নামমাত্র ফি দিয়ে কর্মজীবী নারীরা থাকতে পারে। তাদের যাতায়াতের সমস্যার সমাধানকল্পে গণপরিবহনে একাধিক নারী বাস সার্ভিস চালু করা যেতে পারে। কেননা প্রায়ই আমরা খবরের কাগজে দেখি বাসের হেল্পার কিংবা ড্রাইভার দ্বারা নারী নির্যাতনের খবর। যাতায়াতের পথে নারীর নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। আগেই আমরা উল্লেখ করেছি, প্রাকৃতিক প্রয়োজন পড়লে সাড়া দেয়ার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। অথচ ঢাকা একটা রাজধানী শহর। এটাকে আমরা মেট্রোপলিটন শহর বলে সম্বোধন করি। এই বিষয়গুলো কিন্তু মেট্রোপলিটন নাগরিকদের সুযোগ সুবিধার আওতায় পড়ে। এই বিশাল সংখ্যক একটা কর্মজীবী জনসংখ্যা শুধু নারী হওয়ার সুবাদে এই সমস্যাগুলোকে মাথায় নিয়ে তাদের কাজ করতে হয়।

নারীর জীবন ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। নারীর জীবনকে বিপন্ন করে একটি জাতি বেশি দূর এগোতে পারে না। আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীর অবদান কোনো অংশেই কম নয়। সুতরাং নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। কর্মজীবী নারীরা মেসে কিংবা বাসাবাড়িতে বহুমুখী সমস্যার মধ্যে জীবনযাপন করেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের পাশাপাশি কর্মজীবী নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বাসস্থান ও হোস্টেলের ব্যবস্থা করা দরকার। এটাকে প্রাধিকার দেয়া উচিত। তা না হলে সামনের দিনগুলোতে এ সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে ও সামাজিক শৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটবে।
লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com