ভারতের উত্তর প্রদেশের লখনউয়ের রাস্তায় যোগী আদিত্যনাথের পুলিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ালেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। অভিযোগ করলেন, সিএএ নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে আটক সাবেক আইপিএস অফিসারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময়ে পুলিশ শুধু আটকায়নি, তার গলা টিপে ধরেছিলেন মহিলা পুলিশের এক কনস্টেবল। তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ারও অভিযোগ এনেছেন কংগ্রেস নেত্রী।
কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শনিবার লখনউয়ে গিয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা। তার সফরে দিনভর নাটকীয় ঘটনাবলীর সাক্ষী থেকেছে উত্তরপ্রদেশের রাজধানী। সকালে কংগ্রেসের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার বেড়া ভেঙে মঞ্চের উপরে প্রিয়ঙ্কার কাছে পৌঁছে যান অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি। নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে আটকানোর চেষ্টা করলে প্রিয়ঙ্কাই তাদের থামান। পাগড়ি পরা ব্যক্তিটিকে সামনে ডেকে নেন। কিছুক্ষণ তার কথাও শোনেন । পরে তার নামে স্লোগান দিতে দিতে মঞ্চ ছাড়েন ওই ব্যক্তি। কংগ্রেস জানায়, গুরমিত সিংহ নামে ওই ব্যক্তি কানপুরের বাসিন্দা। দীর্ঘ দিন ধরে কংগ্রেসের সমর্থক। ঘটনাটিকে প্রিয়ঙ্কার নিরাপত্তার গাফিলতি হিসেবেই তুলে ধরেছে কংগ্রেস।
তবে আসল নাটক অপেক্ষা করে ছিল বিকেলে। সিএএ নিয়ে বিক্ষোভের সময়ে আটক সাবেক আইপিএস অফিসার এসআর দারাপুরী ও দলের নেত্রী সাদাফ জাফরের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে রওনা হন প্রিয়ঙ্কা। কিন্তু ইন্দিরা নগরে পৌঁছনোর আগে রাস্তাতেই যোগীর পুলিশ আটকায় তাকে। প্রিয়ঙ্কার দাবি, তিনি কোথায় যাচ্ছেন, তা জানতই না পুলিশ। তা সত্ত্বেও তার গাড়ি আটকানো হয়। এর পরে রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেন তিনি। আচমকাই দলের এক কর্মীর স্কুটারের পিছনে বসে পড়েন প্রিয়ঙ্কা। পুলিশ পিছনে দৌড়তে থাকে। তাকে থামাতে হিমশিম খেয়ে যায় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত আটকানো হয় স্কুটারটিও। দ্রুত হাঁটতে শুরু করেন প্রিয়ঙ্কা। আটকানোর চেষ্টা করেন মহিলা পুলিশের কয়েকজন কর্মী। ধাক্কাধাক্কির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখনও পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে সফল হন প্রিয়ঙ্কা। পরে তার অভিযোগ, তাকে হেনস্থা করেছে পুলিশ। প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘মহিলা পুলিশের এক কনস্টেবল আমার গলা টিপে ধরে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। এমন ভাবে ধাক্কা দেয়া হয়েছে যে পড়ে গিয়েছিলাম।’’
শেষ পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার হেঁটেই প্রিয়ঙ্কা পৌঁছন সাবেক আইপিএস অফিসারের বাড়িতে। দারাপুরীর বাড়িতে গিয়ে তার অসুস্থ স্ত্রী-র সঙ্গে দেখা করেন তিনি। দারাপুরী সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান প্ল্যাকার্ড হাতে। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সাংবাদিকদের প্রিয়ঙ্কা বলেন, ‘‘কারণ ছাড়াই আমাকে আটকেছিল পুলিশ। ঈশ্বর জানেন, এমন কাজ ওরা কেন করল।’’ পুলিশ অবশ্য প্রিয়ঙ্কাকে হেনস্থা করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ থামাতে যোগী সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে আগেই সরব হয়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা। বিজনৌরে নিহতদের পরিবারের কাছে গিয়েছিলেন ক’দিন আগেই। এর পর মেরঠে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়ঙ্কা। কিন্তু তাদের মেরঠে যেতে দেয়নি পুলিশ। যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মেরঠ পুলিশ অবশ্য নতুন করে বিতর্কের মধ্যে পড়েছে। সেখানকার এক পুলিশকর্তা স্থানীয় মুসলিমদের পাকিস্তানে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সেই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
শনিবার বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেছেন প্রিয়ঙ্কা। তার কথায়, ‘‘কেন্দ্রে এখন সরকারে রয়েছেন যারা, ঐতিহাসিক ভাবে তাদের সঙ্গে আমাদের আদর্শগত লড়াই রয়েছে। আমরা এখন সেই আদর্শের বিরুদ্ধে লড়ছি, স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়েও কংগ্রেসকে যার বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে।’’ প্রিয়ঙ্কার মন্তব্য, ‘‘দেশের এই সঙ্কটে গলা না তুললে ভীতু প্রমাণিত হব।’’
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছেন, শোনভদ্রের ঘটনার পরে লখনউয়ে যে ভাবে প্রিয়ঙ্কাকে আটকেছে পুলিশ, তাতে কংগ্রেস নেত্রীকে রাজনৈতিক ভাবে সুবিধা করে দেয়া হয়েছে। শনিবারই অভয় মিশ্র নামে লখনউ পুলিশের এক অফিসারের বিরুদ্ধে সিআরপির ভিআইপি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে প্রিয়ঙ্কার অফিস। বলা হয়েছে, মিশ্র কোনো অনুমতি ছাড়াই এক ডজন পুলিশ নিয়ে শনিবার সকালে প্রিয়ঙ্কার ঘরের বাইরে পৌঁছে যান। তার কর্মসূচির কথা জানতে চান। প্রিয়ঙ্কার নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা আপত্তি করলে মিশ্র তাদের সঙ্গে তর্ক শুরু করে দেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা