শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১২ অপরাহ্ন

চামড়া শিল্পের স্থানান্তর এখনো কোনো সুফল আনেনি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯
  • ৩৫০ বার

পুরান ঢাকার হাজারীবাগ থেকে চামড়া শিল্পের স্থানান্তর নিয়ে পানি কম ঘোলা হয়নি। ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকাকে চামড়া শিল্পের দূষণ থেকে বাঁচাতে প্রথমে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়। এতে করে স্থানীয় বসতি যেমন এর ভয়াবহ দূষণ থেকে রক্ষা পাবে, একইভাবে এর দূষণ থেকে রক্ষা পাবে বুড়িগঙ্গা নদীও। প্রকল্পটি ২০০৩ সালে কার্যকর হতে শুরু করে ইতোমধ্যে প্রায় ১৭ বছর কেটে গেছে। এখনো চামড়া শিল্প হাজারীবাগ থেকে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়নি। একইভাবে সাভারের হেমায়েতপুরে একটি পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরী গড়ে উঠবে, সেটিও সম্ভব হয়নি।
ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই কথাটি কে না জানে। এই নদীটিকে উপলক্ষ করে ঐতিহাসিক ঢাকা গড়ে উঠেছে। অন্যভাবে বললে বুড়িগঙ্গা নদী না থাকলে এখানে রাজধানী ঢাকা গড়ে উঠত না। আমরা এতটাই অবিবেচক, প্রথমে এই নদীটিকে প্রায় হত্যা করে ফেললাম। হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্প সরে যাওয়া প্রায় শেষের পথে হলেও বুড়িগঙ্গা দূষণের অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়নি। অন্য আরো হাজারো উপায়ে বুড়িগঙ্গায় এখনো দূষণ চলছে। এ নদীটি নিয়ে এখনো এমন কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ কিংবা উদ্যোগ নেয়া হয়নি যাতে করে আবার ফিরে আসতে পারে পুরনো বুড়িগঙ্গার প্রাণ ও প্রকৃতি। তবে আগামী বছরের জুনের মধ্যে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের ওপর জোর দিয়েছে সরকার। অনেক বিলম্বে হলেও এবার হয়তো চামড়া শিল্প এখান থেকে পুরোপুরি সরে যাবে। বাস্তবতা হলো হেমায়েতপুরে যেখানে নতুন চামড়া শিল্প স্থানান্তরিত হয়েছে সেখানে কি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে এ শিল্পের কার্যক্রম চলছে?
চামড়া শিল্প আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী একটি খাত। সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিতে পারলে পোশাক শিল্পের মতোই বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের একটি খাত হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠান করতে পারতাম। সেটি আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু এ চামড়া শিল্পের সুযোগ দিতে গিয়ে আমরা অনেক ক্ষতি টেনে এনেছি। এখন হেমায়েতপুরে স্থানান্তরিত এ শিল্পও মারাত্মক পরিবেশ ও নদীদূষণের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হচ্ছে। হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্প সরাতে গিয়ে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। মালিকরা বরাবর এর বিরোধিতা করে এসেছিল। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে তারা সেখান থেকে সরতে বাধ্য হয়েছেন। মূলত বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে আদালতের পক্ষ থেকে এ নির্দেশ এসেছিল। এখন দেখা যাচ্ছে হেমায়েতপুরে ধলেশ্বরী নদীতে একই ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্য সরাসরি গিয়ে মিশছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার যে প্রতিশ্রুতি ছিল সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে অচিরেই ধলেশ্বরী রূপ নিতে যাচ্ছে বুড়িগঙ্গার। অন্য দিকে হেমায়েতপুরেও পরিবেশ ও প্রাণের একই ধরনের দূষণ বাড়াচ্ছে চামড়া শিল্প। বুড়িগঙ্গা ও পুরান ঢাকা দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে আমরা অন্য একটি নদী ও জনপদকে একই ধরনের বিপদের মুখে ফেলে দিতে যাচ্ছি।
চামড়া শিল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে শিল্প মালিক ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ এখন মুখোমুখি অবস্থানে। শিল্প মালিকরা দাবি করছেন বর্জ্য শোধনাগার ঠিকভাবে কাজ করছে না। অন্যরা বলছেন, এ অবস্থার জন্য শিল্প মালিকরা নিজেরাই দায়ী। বাস্তবে দেখা গেছে, নর্দমা দিয়ে চামড়া শিল্পের অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি ধলেশ্বরীতে গিয়ে মিশছে। কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারটির নির্মাণ ও প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা দায়িত্ব একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে তারা এটিকে নিয়মিত চালায় না। এমনকি এটি বর্জ্যকে যেভাবে টেনে নিয়ে পরিশোধন করার কথা সেভাবে করে না। আমরা দেখেছি সরকার চামড়া শিল্পের বিস্তারে অব্যাহতভাবে প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। জাতি এ শিল্প থেকে যেভাবে লাভবান হওয়ার কথা সেভাবে লাভবান হচ্ছে না। বরং নদী ও পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে এ শিল্প অনাকাক্সিক্ষতভাবে জনসাধারণের ক্ষতি করছে। নতুন শতাব্দীর শুরুতে টেকসই চামড়াশিল্প গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু হয়। আজ প্রায় ২০ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে এর আশানুরূপ অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এই অবস্থায় পুরো ব্যাপারটিকে সরকারের নতুন করে ভাবার দরকার। পরিবেশবান্ধব চামড়াশিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলে এ থেকে জনসাধারণকে শঙ্কামুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com