আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে তেমন বড় ধরনের কোনো চমক আসেনি। নবমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। আলোচনায় না থাকলেও কার্যনির্বাহী কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক কিছু তরুণ নেতা। তবে এ পর্যন্ত কার্যনির্বাহী কমিটির ৮১ সদস্যের মধ্যে ৭৪ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ জন নারী বিভিন্ন পদে জায়গা পেয়েছেন। ঘোষিত কমিটিতে গতবারের চেয়ে নারী প্রতিনিধিত্ব একটু বেড়েছে। তবে ৩৩ শতাংশের কোটা এখনো পূরণ হয়নি ক্ষমতাসীন দলে।
নতুন কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গতবারের চেয়ে নারী প্রতিনিধিত্বের হার একটু বেড়েছে। তবে ৩৩ শতাংশ পূরণ করতে পারেনি টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা এ দলটি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ২০০৯ (সংশোধিত)-এর ৯০ বি ধারা অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটিতে নারীদের জন্য কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ পদ নিশ্চিত করার বিধান আছে। সেক্ষেত্রে আরো এক বছর সময় পাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের গত কমিটিতে নারী প্রতিনিধির হার ছিল ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ; অর্থাৎ প্রায় ২০ শতাংশ। এবার তা বেড়ে ২৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ; অর্থাৎ ২৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যদিও ২০১২ সালের কমিটিতে নারী নেতৃত্বের হার ছিল মাত্র ১১ শতাংশ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা ৭৩ থেকে বাড়িয়ে ৮১ করা হয়। গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। দলের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৭৪ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী হলেন সর্বমোট ১৯ জন।
কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি হলেন শেখ হাসিনা। সভাপতিমণ্ডলীর ১৭ জন সদস্যের মধ্যে নারী হলেন তিনজন। তারা হলেন- সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। যুগ্মসাধারণ সম্পাদক পদে চারজনের মধ্যে একমাত্র নারী হলেন ডা: দীপু মনি। সম্পাদকমণ্ডলীর ২৯ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৫ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী হলেন ৬ জন। তারা হলেনÑ অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা: রোকেয়া সুলতানা। এখনো ঘোষণা করা হয়নি একটি সাংগঠনিক সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এবং ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক। এ ছাড়া ৮ জন বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদের মধ্যে একজনও নারী ঠাঁই পাননি। নতুন কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য পদে ২৫ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে নারী হলেন ৮ জন। তারা হলেন- আখতার জাহান, মেরিনা জামান কবিতা, পারভীন জামান, হুসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, সফুরা খাতুন, সানজিদা খানম, মারুফা আক্তার পপি ও গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা। এখনো তিনটি সদস্য পদে এখনো কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩৩ শতাংশের কোটা পূরণ করতে হলে ৮১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটিতে নারীর সংখ্যা হতে হবে ২৬ দশমিক ৭৩ অর্থাৎ ২৭ জন। এখন ঘোষিত কমিটিতে আছে ১৯ জন। ৩৩ শতাংশ পূরণ করতে হলে আরো ৮ জন নারীকে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দিতে হবে। যদিও পদ রয়েছে মাত্র সাতটি। এ ক্ষেত্রে সাতটি পদেই নারী প্রতিনিধি এলেও এবার কোনোভাবেই কোটা পূরণ হচ্ছে না।
সাতটি পদেই নারী নেত্রী ঘোষণা করা হলে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬ জন। বাকি থাকে মাত্র একজন, যা ৩৩ শতাংশ পূরণ হওয়ার পথেই ধাবিত হবে। বাকি সাতটি পদের মধ্যে চারটি সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রয়েছে এবং তিনটি কার্যনির্বাহী সদস্য পদ। এর মধ্যে কমপক্ষে তিনটি পদেও নারী নেত্রী ঘোষণা করা হলে ২৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৭ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। আর সাতটি পদের মধ্যে মাত্র একটি পদে নারী নেত্রী ঘোষণা করা হলে ২৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ থেকে কমে ২৪ দশমিক ৬৯ শতাংশে নেমে আসবে। সেক্ষেত্রে গতবারের থেকেও নারী প্রতিনিধিত্বের হার একটু বৃদ্ধি পাবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রবীণ রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, আগের চেয়ে আওয়ামী লীগে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে, এটা একটা ইতিবাচক দিক। বঙ্গবন্ধু-কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারীরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, পেছনের দিকে তাকালে দেখবেন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কম ছিল। এখানে আগের চেয়ে নারীদের অংশগ্রহণ কিন্তু বেড়েছে। আওয়ামী লীগেও নারী নেত্রীর অংশগ্রহণ আগের চেয়ে অনেক বেশি। তবে হ্যাঁ, প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে এগোতে থাকলে একদিন প্রত্যাশা পূরণ হবে।