মানুষের জীবনে আর্থিক দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে আর্থিক সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। ক্রেডিট কার্ড বিলাসবহুল পণ্য নয়, এটা প্রয়োজনীয়। একটা সময় উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরাই ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক ছিলেন। এখন ক্রেডিট কার্ড একটি লাইফস্টাইল পণ্য। ফলে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রও তৈরি হচ্ছে। ব্যাংকিং ক্যারিয়ার অনেকের কাছেই আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোয় বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো ক্রেডিট কার্ড বিভাগ। সময়ের সঙ্গে ব্যাংকগুলোয় আলাদা কার্ড বিভাগ হচ্ছে। তাই গত কয়েক বছরে এ বিভাগের কাজের সুযোগও অনেক বেড়েছে। বিস্তারিত লিখেছেন- শামস্ বিশ্বাস
ক্রেডিট কার্ড কী : ক্রেডিট কার্ড হলো একটি বিশেষ ধরনের পরিশোধব্যবস্থার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত প্লাস্টিক কার্ড। তা ওই পরিশোধব্যবস্থার ব্যবহারকারীদের ইস্যু করা হয়। এই কার্ডের বাহক পণ্য ও সেবা কিনতে পারেন এবং মূল্য পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন। সাধারণত স্থানীয় ব্যাংক বা ক্রেডিট ইউনিয়ন ভোক্তাদের কাছে এই কার্ডগুলো ইস্যু করে থাকে। ক্রেডিট কার্ডগুলোর আকার-আকৃতি আইএসও ৭৮১০ আদর্শ মেনে চলে। স্বাভাবিকভাবে অন্য সেবার মতো নয় ক্রেডিট কার্ড। এ কার্ড থেকে যে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে, এটি ব্যয়বহুল। পৃথিবীতে অন্য আর্থিক সেবার চেয়ে ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেশি। এটি একটি ২৪ ঘণ্টা, ৩৬৫ দিনের সেবা। তাই বেশি লোক ব্যবহার হয়।
কাজের সুযোগ : বর্তমানে কর্মরত বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোয় বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো ক্রেডিট কার্ড বিভাগ। এখন ব্যাংকগুলোয় আলাদা কার্ড বিভাগ হচ্ছে। একটা সময় ছিলÑ যখন হাতে গোনা ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হতো। তখন বাংলাদেশে এই কার্ড ব্যবহারকারীর সংখ্যাও ছিল অনেক কম। তা ছাড়া ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার প্রক্রিয়াও ছিল জটিল। বর্তমানে অনেক ব্যাংক থেকেই ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হচ্ছে। প্রক্রিয়াটাও সহজ হয়েছে। তাই গত কয়েক বছরে এ বিভাগের কাজের সুযোগও অনেক বেড়েছে। ভবিষ্যতে এই সেক্টরে আরও কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে।
কাজের যোগ্যতা : ব্যাংকভেদে ক্রেডিট কার্ড ডিভিশনে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিছু ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ড বিভাগের কর্মকর্তারা সেলস বিভাগের হয়ে কাজ করেন। কিছু ব্যাংকে আলাদা কার্ড বিভাগই রয়েছে। সাধারণত ক্রেডিট কার্ড বিভাগে নিয়োগ পাওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক পাস। বিশেষ কোনো বিষয়ে স্নাতক বাধ্যতামূলক নয়। তবে বিবিএ করা থাকলে কার্ড ডিভিশনে কাজ করতে সুবিধা হয়। কিছু ব্যাংকে শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর চাওয়া হয়। নিয়োগের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি আরও বিষয় দেখা হয়। এখানে যেহেতু গ্রাহকদের রাজি করানোর বিষয় থাকে, সেহেতু যাচাই করা হয় চাকরিপ্রার্থীর যোগাযোগক্ষমতা। তা ছাড়া স্মার্টনেস থাকা জরুরি।
যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে : বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক বেশকিছু ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ক্রেডিট কার্ড বিভাগে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে আছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এইচএসবিসি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, দ্য সিটি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এনসিএ, প্রাইম ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ইত্যাদি। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে আমেরিকান এক্সপ্রেস লিমিটেড, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স ইত্যাদি।
কাজের ক্ষেত্র ও দায়িত্ব : যারা ক্রেডিট কার্ড বিভাগে কাজ করতে চান, তাদের কাজের ক্ষেত্র অনেক। তা ছাড়া কাজে ভালো করলে, যোগাযোগ দক্ষতা ভালো থাকলে পদোন্নতি পাওয়া সহজ। প্রতিবছর ব্যাংকগুলোয় লক্ষাধিক নতুন কার্ড ইস্যু করা হয়। এর মাধ্যমেই বোঝা যায় ক্রেডিট কার্ড বিভাগে কাজের ক্ষেত্র কীভাবে প্রসারিত হচ্ছে। ক্রেডিট কার্ড বিভাগে কাজের সময় সাধারণ ব্যাংকের কর্মঘণ্টার সমান। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অফিস। কিছু ব্যাংকে প্রজেক্ট ভিত্তিতে কাজ করার সুযোগ থাকে। অনেক ক্ষেত্রে কর্মঘণ্টার বাইরেও কাজ করতে হতে পারে।
যেভাবে নিয়োগ হয় : নিয়োগ প্রক্রিয়া ব্যাংকগুলোর এইচআর ডিভিশনের মাধ্যমে হয়ে থাকে। অনলাইনে আবেদন করা যায় কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে। মাঝে মধ্যেই কার্ড ডিভিশনে কাজের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয় পত্রিকা ও অনলাইন জব সাইটগুলোয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভাইভার দিকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিছু ব্যাংকে শুরুতে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। তবে লিখিত পরীক্ষার চেয়ে মৌখিক পরীক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এইচআর ডিভিশনে আবেদনের মাধ্যমে ভাইভা বা লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রার্থী বাছাই করা হয় আবার ব্যাংকে কাজ করছেনÑ এমন কারও রেফারেন্সেও ডাকা হয় ইন্টারভিউয়ের জন্য। ভাইভার পর নির্বাচিত হলে ব্যাংক থেকে এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। প্রাথমিকভাবে নিয়োগ হয় ট্রেইনি অফিসার বা ট্রেইনি অ্যাসিসট্যান্ট অফিসার হিসেবে।
পদের বিন্যাস ও সুযোগ-সুবিধা : ব্যাংক অনুযায়ী ক্রেডিট কার্ড বিভাগের পদের বিন্যাস ভিন্ন। যেমন- কিছু ব্যাংকে চাকরি শুরু হয় ট্রেইনি অফিসার হিসেবে। তার পরের ধাপগুলো যথাক্রমে জুনিয়র অফিসার, সিনিয়র অফিসার, টিম লিডার, ম্যানেজার ও হেড অব কার্ডস। অন্যদিকে কিছু ব্যাংক ব্যাংকের সাধারণ পদের বিন্যাস অনুসরণ করে। সাধারণত এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের এক কর্মকর্তা কার্ড ডিভিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পদের বিন্যাস শুরু হয় ট্রেইনি অ্যাসিসট্যান্ট অফিসার থেকে। ক্রেডিট কার্ড বিভাগে কর্মরত ব্যক্তি ব্যাংকের অন্যসব কর্মকর্তার মতো সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে সেলস বিভাগের অংশ হিসেবে ক্লায়েন্টদের কাছে কার্ড বিক্রি করলে আলাদা কমিশন পাওয়ার সুযোগ থাকে।
বেতন ও আর্থিক সুবিধা : ক্রেডিট কার্ড বিভাগে নিয়োগ ব্যাংকের রেগুলার কর্মকর্তা হিসেবে হলে ব্যাংকের বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণত বেতন শুরু হয় ১৫ হাজার টাকা থেকে। ব্যাংকভেদে এই বেতন ২০ হাজার টাকাও হতে পারে। তবে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বেতন ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা। কিছু ব্যাংকের সেলস ডিপার্টমেন্টের হয়ে ক্লায়েন্টদের কাছে ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করা হয়। প্রতিমাসে এসব কর্মকর্তার নির্দিষ্ট কিছু কার্ড বিক্রির লক্ষ্য থাকে। ওই অনুযায়ী ক্লায়েন্টদের রাজি করিয়ে কার্ড বিক্রি করতে হয়। বেতন সাধারণত কম থাকে। তবে তাদের কার্ড বিক্রির ওপর কমিশন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে বেশি কার্ড বিক্রি করলে বেশি কমিশন পাওয়ার সুযোগ থাকে।