সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৪ অপরাহ্ন

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট কী? কাকে দিতে হবে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২৮৪ বার

দেশজুড়ে চলছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। সঙ্গত কারণেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনেকটা বাড়তি কিছু গুরুত্ব বহন করে।

যেমন সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা, নীতি-নৈতিকতা ও বিচার সালিশে ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে নির্বাচিত এই চেয়ারম্যান মেম্বারদের উপর। ফলে একজন সচেতন ও নীতিমান মানুষ মাত্রই খুবই গুরুত্বের সঙ্গে অবলোকন করে থাকেন এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে। পাশাপাশি এলাকায় একটা আমেজপূর্ণ আনন্দঘন অবস্থাও তৈরী হয় এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।

জানা থাকা ভালো

আমরা যে প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতি দেখছি বা অংশ নিচ্ছি তা হলো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অধীনে সরকার নির্বাচনের অপরিহার্য একটি পদ্ধতি। কিন্তু গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা, সম্পূর্ণ বিপরিতমুখী দুটি শাসনব্যবস্থা।

ইসলামি শাসন ব্যবস্তার নাম হলো খিলাফত। খিলাফত সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মদিনা নগর রাষ্ট্রে স্বয়ং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মাধ্যমে। তিনিই আধুনিক এই রাষ্ট্র-কাঠামোর প্রবর্তক। সর্বশেষ ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে উসমানি খিলাফতের খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল মজিদকে নির্বাসনের মধ্য দিয়ে কামাল আতাতুর্কের আনুষ্ঠানিক খিলাফত বিলুপ্তির ঘোষণা আসে। খিলাফতে নির্বাচন পদ্ধতি বহুমুখী।

ভোট কী? 

পাকিস্তানের বিখ্যাত আলেম মুফতি শফী (রহ.) এ সংক্রান্ত একটি পুস্তিকায় লিখেছেন যে, ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট হচ্ছে তিনটি বিষয়ের সমষ্টি। ১. সাক্ষ্য প্রদান ২. সুপারিশ ও ৩. প্রতিনিধিত্বের সনদ প্রদান।

অর্থাৎ কোন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া মানে ওই প্রার্থী ভালো এবং যোগ্য বলে আপনি সাক্ষ্য দিচ্ছেন। তিনি ভালো এবং যোগ্য বলে আপনি সুপারিশ করছেন। তিনি ভালো এবং যোগ্য বলে আপনি তার প্রতিনিধিত্বের বৈধতার সনদ প্রদান করছেন।

ইসলামে কারো পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া, সুপারিশ করা, সনদ দেওয়া এ তিনটি জিনিসেই গুরুত্বপূর্ণ। এবং স্পর্শকাতরও। তাই সর্বাধিক সতর্কতার বিকল্প নেই।

তবে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য দেওয়াটাই হলো মৌলিক বিষয়। আপনি যার পক্ষে সাক্ষ্য দিলেন বাস্তবেই যদি তিনি ভালো এবং যোগ্য হন এক্ষেত্রে আপনার সাক্ষ্যটা হবে সত্য সাক্ষ্য, অন্যথায় মিথ্যা সাক্ষ্য।

আর মিথ্যা সাক্ষ্য যে কত বড় কবীরা গুনাহ ও হারাম কাজ তা কি কারো অজানা রয়েছে?

সহিহ বুখারির একটি বর্ণনায় হযরত আবু বকর (রা.) বলেন যে, রাসুলুল্লাহ একদা এক জায়গায় হেলান দিয়ে বসা অবস্থায় তিনবার সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহগুলোর মধ্যে বড় কবীরা গুনাহের কথা বলব?

সাহাবীরা হ্যাঁ সূচক উত্তর দেওয়ার পর তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা (এ দুটি কথা বলার পর তিনি সোজা হয়ে বসলেন) এবং বললেন, শুনে নাও! মিথ্যা সাক্ষ্য অনেক বড় কবীরা গুনাহ।

বিখ্যাত হাদিস বিশারদ শামসুদ্দীন যাহাবী (রহ.) মিথ্যা সাক্ষ্যকে চারটি বড় গুনাহের সমষ্টি বলে আখ্যা দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে : ১. নিজে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার গুনাহ ২. যার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিচ্ছে তার উপর জুলুম করার গুনাহ। ৩. যার পক্ষে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছে তার উপরও প্রকৃতপক্ষে জুলুম করছে। কারণ, সে যা কিছু পাওয়ার যোগ্য ছিল না এ ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে তাকে এর অধিকারী করে তুলছে এবং এভাবে তাকে করছে জাহান্নামী। ৪. মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার একটি হালাল কাজকে হারাম বানিয়ে নেওয়ার গুনাহ।

ভোট কাকে দিব?

এখন প্রশ্ন হলো, ভালো এবং যোগ্য কে?  প্রচার মাইকে তো সবাই সবার সেরা এবং ফুলের মত পবিত্র চরিত্রের স্লোগান শোনা যায়। প্রকৃত সেরা এবং চরিত্রবান কে?এবং এর মানদণ্ড কী? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হলো শরিয়তে ইসলামিয়া। শরিয়তে ইসলামিয়া যাকে ভালো এবং যোগ্য বলবে সেই প্রকৃত ভালো এবং যোগ্য। তাকেই ভোট দিতে হবে।

কিন্তু, শরিয়তে ইসলামিয়া দিয়ে মাপতে গেলে প্রকৃতপক্ষে শতভাগ ভালো এবং যোগ্য প্রার্থী পাওয়া হয়তো অনেকটা দুঃসাধ্যই হয়ে পরবে।

বিশেষত বর্তমান নৈতিক ও চারিত্রিক অবক্ষয়ের প্রতিযোগিতার এ যুগে যেকোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলেও, সমাজের হাতেগোণা স্বল্প একটা অংশ ছাড়া, ভালো এবং যোগ্য লোক খোঁজে বের করাই তো মুশকিল। আর যারাও আছেন তারা নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিতে তেমন একটা স্বাচ্ছন্দবোধও করেন না।

ফলে আমাদের কে মন্দের ভালোটাই বেচে নিতে হবে। এবং খারাফের মধ্যে যে একটু কম খারাপ তার পক্ষেই সাক্ষ্য দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে শরীয়তের দৃষ্টিতে কাউকে ভোটদানের অর্থ হবে, এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, লোকটি তার প্রতিদ্বন্দ্বিদের তুলনায় কিছুটা হলেও ভালো।

ভোট কেন দেব?

বাস্তবতার বিবেচনায় সাধারণ দৃষ্টিতে আমরা দেখছি যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অন্যের গালমন্দ, গীবত-শেকায়েত, নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এবং নির্বাচনকে ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার, ভিআইপি মর্যাদা হাসিল করার, আধিপত্য অর্জন করার ও জনগণকে শোষণ করার একটি মাধ্যম হিসাবে এখন ব্যবহার করা হয়। তাহলে আমরা কেনো এমন ভোট দেবো?
প্রথম কথা হলো ভোট এটি আপনার নাগরিক অধিকার। তাছাড়া যেহেতু আমাদের শাসনব্যবস্থা খেলাফত ভিত্তিক নয়।  চাইলেই তা হুট করে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব না। ফলে গণতন্ত্র ও বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতির শত ভুল ত্রুটি সত্বেও, ইসলামভিত্তিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সকল চেষ্টা প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই আমাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে এবং ভোটও দিতে হবে।

কারো ব্যাপারে যদি খোদাদ্রোহিতা, ইসলাম-দুশমনী, রাষ্ট্র ও জনগণের স্বার্থ-বিরোধী হওয়ার সুস্পষ্ট আলামত থাকে, তাহলে ওই অসৎ ব্যক্তি বা প্রার্থীর বিজয় ঠেকানোর চেষ্টাও করতে হবে ভোটারাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন; তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না। যে কেউ তা গোপন করবে, তার অন্তর পাপপূর্ণ হবে। তোমরা যা কর, আল্লাহ তাআলা সে সম্পর্কে জ্ঞাত।  (সূরা বাকারা-২৮৩)

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com