সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ন

সারসকভ-২ : আল্ফা থেকে ওমিক্রন

ডা: মো: তৌহিদ হোসাইন
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১৫৪ বার

করোনাভাইরাসের নামকরণ
ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা, ভ্যাকসিন ও ওষুধ তৈরির সুবিধার্থে তাদের জিনগত গঠনের ওপর ভিত্তি করে ভাইরাসের নামকরণ করা হয়ে থাকে। ভাইরাসের নামকরণের জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ট্যাক্সোনমি অব ভাইরাস’ নামক একটি কমিটিও আছে।
কিন্তু মহামারী চলাকালে বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।

করোনাভাইরাস শব্দটি ল্যাটিন ভাষার ‘করোনা’ থেকে নেয়া হয়েছে যার অর্থ ‘মুকুট’। কারণ দ্বিমাত্রিক সঞ্চালন ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ভাইরাসটির আবরণে লেগে থাকা ব্যাঙের ছাতা-আকৃতির গøাইকোপ্রোটিনের কাঁটাগুলোর কারণে এটিকে অনেকটা মুকুট বা সৌর করোনার মতো দেখায় এবং এসব প্রোটিনকে স্পাইক প্রোটিন বলে।

দি ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ট্যাক্সনমি অব ভাইরাসেস ১১ ফেব্রæয়ারি, ২০২০ সালে ঘোষণা করে যে, নব আবিষ্কৃত ভাইরাসটির নাম হবে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রম ভাইরাস-২। এ নাম এ জন্য ঠিক করা হয়েছিল যে, নব আবিষ্কৃত ভাইরাসের ২০০৩ সালে পৃথিবীতে প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি করা আরেকটি ভাইরাস সিভিয়ার অ্যাকিউট রেস্পিরেটরি সিন্ড্রম ভাইরাসের সাথে জেনেটিকালি মিল ছিল। ভাইরাসটি দ্বারা সৃষ্ট রোগের অস্থায়ী নামকরণ করা হয় ২০১৯ সালে নভেল করোনাভাইরাস (এনসিওভি-১৯) বা হিউম্যান করোনাভাইরাস (এইচসিওভি-১৯)। এর পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাসচিব টেড্রস গ্যাব্রিয়াসেস আধানম ওই ১১ ফেব্রæয়ারি ২০২০ সালে সারসকভ-২ দ্বারা সৃষ্ট রোগের নাম দেন করোনাভাইরাস ডিজিজ-১৯ বা কোভিড-১৯।

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম শনাক্তকৃত ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ কে ৩০ জানুয়ারি ২০২০ সালে ‘আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সৃষ্টিকারী’ রোগ হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পরে ১১ মার্চ ২০২০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে বিশ্ব মহামারী রোগ হিসেবে ঘোষণা করে।

করোনাভাইরাসের মিউটেশন কী?
সব ভাইরাসই সময়ের ব্যবধানে পরিবর্তিত হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই পরিবর্তনে তেমন ইম্প্যাক্ট পড়ে না। কিছু কিছু পরিবর্তনের জন্য যখন ভাইরাসের কার্যকর গুণাগুণের পরিবর্তন হয়, ছড়িয়ে পড়ার এবং রোগের গভীরতা বাড়িয়ে দেয়, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, রোগ নির্ণয়ে, চিকিৎসা দিতে সমস্যা সৃষ্টি করে তখনই ভ্যারিয়েন্টের প্রশ্ন দেখা দেয়। ভাইরাল র‌্যাপলিকেশনের সময়ে ত্রæটিপূর্ণভাবে আরএনএ জেনেটিক কোডে যে পরিবর্তন হয় তা-ই মিউটেশন।
অথবা ভাইরাল র‌্যাপলিকেশনের সময়ে আরএনএ’র নিউক্লিউটাইড সিকুইন্সে যে অনাকাক্সিক্ষত পরিবর্তন ঘটে তা-ই মিউটেশন।
মানুষের শরীরের বাইরে করোনাভাইরাসের কোনো বংশবৃদ্ধি নেই। এরা মানুষের শরীরের বাইরে শুধু ভাইরাসের বাইরের এনভেলপ মেমব্রেনটির মাধ্যমে কোনো রকমে টিকে থাকতে পারেÑ একটি নির্দষ্ট সময় পর্যন্ত।
কেবল মানুষের শরীরের নির্দিষ্ট কোষের ভেতরেই করোনাভাইরাসের বংশবৃদ্ধি হয়। আর বংশবৃদ্ধি র‌্যাপলিকেশনের মাধ্যমেই হয়।
সব ভাইরাসেই র‌্যাপলিকেশন হয়ে বংশবৃদ্ধি হয়। তাই বলে সব র‌্যাপলিকেশনেই মিউটেশন হয় না।
প্রকৃতির সব প্রাণীই চায় তার মৃত্যুর পর যেন তার বংশধারা বজায় থাকে।

র‌্যাপ্লিকেশন মানে, এক ভাইরাস থেকে আরেক ভাইরাসের হুবহু কপি করা। কিন্তু মানুষের যেমন অনেক কপি প্রিন্ট করতে গেলে কিছু না কিছু, ভুল কপি বের হবেই, তেমনি ভাইরাসও কালে-ভদ্রে তার কপি করতে গিয়ে ভুল কপি করে। এই ভুল কপিরই বৈজ্ঞানিক নাম মিউটেশন।
একটি স্পাইক প্রোটিন হলো ১২৭৩টি পয়েন্টে ২০টি বিভিন্ন ধরনের অ্যামাইনো এসিডের ভিন্ন ভিন্নভাবে পুঁতির মালার মতো করে সাজানো একটি চেইন। এই ২০টি অ্যামাইনো এসিড ১২৭৩ পয়েন্টের কোনটি কোন জায়গায় বসবে তা ভাইরাসে আরএনএতে থাকা জেনেটিক কোড দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। একটি করোনাভাইরাসে গড়ে যে ৭৮টি স্পাইক প্রোটিন থাকে তার সংখ্যা বাড়লে সংক্রমণ ক্ষমতাও বেড়ে যায়।
একটি ভাইরাসের মিউটেশনের পর নিম্নোক্ত যেকোনো একটি ঘটনা ঘটবেই।
প্রথমত, শুধু জিনগত পরিবর্তন হয় কিন্তু ভাইরাসের গঠনে এবং চরিত্রে কোনো পরিবর্তনই হবে না।
দ্বিতীয়ত, গঠনের পরিবর্তন হবে কিন্তু চরিত্রের পরিবর্তন হবে না।
তৃতীয়ত, গঠনের ও চরিত্রের উভয় অবস্থার পরিবর্তন হবে।
এই গঠনের ও চরিত্রের পরিবর্তনে ভাইরাসটি নিউট্রাল, দুর্বল কিংবা ভয়ঙ্করও হয়ে উঠতে পারে।

ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট মানেই ভয়ঙ্কর নয়। সুখের বিষয় হলো আমাদের দুনিয়া তোলপাড় করা এই সারসকভ-২ ভাইরাসের মিউটেশন অন্যান্য করোনাভাইরাসের চেয়ে ধীর এবং অরিজিনাল সারসকভ-২ এর সংক্রমণ ক্ষমতা প্রতি একজন করোনা রোগীর দু-তিনজন। ফলে এর রিপ্রোডাকশন নম্বর ২.৫ তবে হামের ১৮-২০। কিন্তু ভ্যারিয়েন্টে পরিবর্তিত হতে হতে বর্তমান ওমিক্রনের রিপ্রোডাকশন নম্বর প্রায় ১০.
কিন্তু প্রতিক‚ল পরিবেশকে উপেক্ষা করতে গিয়ে যখন নতুন ভ্যারিয়েন্ট হয়ে যায় তখন সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যেতে পারে। এ জন্যই বিজ্ঞানীরা ভ্যারিয়েন্টের গতি প্রকৃতি সর্বদাই নজরে রাখছেন।
মিউটেশন শুধু হলেই হবে না, ভাইরাসের কোন জায়গায় কতটি মিউটেশন হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন মিউটেশন যদি স্পাইক প্রোটিনের আরবিডি অংশের এন৫০১ওয়াই ও ই৪৮৪কে সাইটে হয়, তা হলে ভাইরাস সহজেই মানব কোষে ঢোকার সুযোগ পায় এবং অ্যান্টিবডিকেও নিউট্রালাইজ করে।
জেনে রাখা ভালো যে সারসকভ-২ ভাইরাসটির মিউটেশনে বেশির ভাগ পরিবর্তন হয় স্পাইক প্রোটিনে। স্পাইক প্রোটিনের পরিবর্তনের এই নির্দেশনা তখনই পায় যখন ভাইরাসের আরএনএতে থাকা জেনেটিক কোড মিউটেশনের মাধ্যমে কিছুটা পরিবর্তিত হয়। এই স্পাইক প্রোটিনে যত পরিবর্তন হবে ততই ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

ভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্ট কেন?
প্রথমত, এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ভাইরাসের বংশবিস্তারের সুযোগ মানে র‌্যাপলিকেশন হওয়া, আর র‌্যাপলিকেশন মানে মিউটেশন, আর বারবার মিউটেশন মানেই ভ্যারিয়েন্ট ফরম্যাশন।
দ্বিতীয়ত, যে সমাজের লোকজনকে ভাইরাস হানা দেয় দীর্ঘ দিন রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারণে মানুষের শরীরে এক ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। সেই প্রতিরোধকে ওভারকাম করতে গিয়ে ভাইরাসও বারবার নতুন নতুন মিউটেশন ও ভ্যারিয়েন্ট ফরম্যাশন করতে থাকে।
ভাইরাস বিভিন্নভাবে আরো বেশি প্রতিক‚লতার মধ্যে পড়লে তা ডাবল ভ্যারিয়েন্ট এমন কি ট্রিপল ভ্যারিয়েন্টেও রূপান্তরিত হতে পারে। যেমন ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এখন আরো বিধ্বংসী হয়ে ডেল্টা প্লাসে রূপান্তর ঘটেছিল।
ভয়ঙ্কর ভ্যারিয়েন্টে কী কী পরিবর্তন হতে পারে?
প্রথমত, দ্রæত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা অর্জিত হয়। স্পাইক প্রোটিনের বিশেষ করে আরবিডি অংশে পরিবর্তনের কারণে সহজেই মানব কোষে ঢোকার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ইমিউন সেল কর্তৃক তৈরি নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি নিষ্ক্রিয় করতে পারে।
তৃতীয়ত, রোগের গভীরতা ও জটিলতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
চতুর্থত, রোগ শনাক্তকরণে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পঞ্চমত, চিকিৎসা অকার্যকর করে তুলতে পারে।
ষষ্ঠত, আরেকটি ভয়ঙ্কর ভ্যারিয়েন্টের সৃষ্টি হতে পারে।

ভ্যারিয়েন্ট নামকরণ
প্রকৃতিতে অনবরত ভাইরাসে যে পরিবর্তন হচ্ছে তা মূলত দুই ধরনের। একটি হলো জেনোটাইপিক পরিবর্তন আর আরেকটি হলো ফেনোটাইপিক পরিবর্তন। জেনোটাইপিক পরিবর্তন জিন সিকুইন্স স্টাডি করে জানা যায়। ফেনোটাইপিক পরিতন বর্তমান বিশ্বে দু’টি কর্তৃপক্ষ পারস্পরিক যোগসাজশে করোনা ভাইরাসের নামকরণে নিয়োজিত আছে। তার একটি হলো বিজ্ঞানীরা যারা ভ্যারিয়েন্টের আবিষ্কারক আরেকটি হলো পাবলিক হেলথ এজেন্সি। মে ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা করেন যে, করোনার ভ্যারিয়েন্টগুলোর নাম গ্রিক বর্ণমালার ক্রমানুসারে হবে। গ্রিক বর্ণমালায় ২৪টি অক্ষর আছে। তার মধ্যে প্রথম বর্ণ আল্ফা থেকে ১৫তম বর্ণ ওমিক্রন পর্যন্ত করোনা ভ্যারিয়েন্টগুলোর নাম দিয়ে পূর্ণ হয়েছে। মাঝখানে দু’টি বর্ণমালা নিউ (এনইউ) এবং জি (এক্সআই) ভ্যারিয়েন্ট নামকরণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ এনইউ (নিউ) বর্ণটি নিউয়ের (এনইডবিøউ) সাথে কনফিউজ করে। (এক্সআই) যার উচ্চারণ ‘জি’ বর্ণটি চীনের প্রেসিডেন্টের নামের সাথে কনফিউজ করে।
গ্রিক বর্ণমালার নামানুসারে করোনার মিউটেশনগুলোর নামকরণ করা হয়েছে সন্দেহ দূরীকরণ, সহজে চেনা, বোঝা ও নামের কলঙ্ক মোচনের জন্য। গ্রিক বর্ণমালার প্রথম বর্ণ আল্ফা শেষ বর্ণ ওমেগা।
সংক্ষেপে বলা যায় ভ্যারিয়েন্টগুলোর নামকরণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশমাফিক তিনটি কারণে সহজ বোধ্য করে রাখা হয়েছে।

প্রথমত, মেডিক্যাল সাইন্সের ঐতিহ্যগত কারণ। মেডিক্যাল সাইন্স এমনকি আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কার নামকরণে গ্রিক বর্ণমালাকে অনুসরণ করে আসছে। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় করোনা ভ্যারিয়েন্টগুলোর নাম গ্রিক বর্ণমালায় রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, সাধারণ মানুষ বৈজ্ঞানিক নামের মতো কঠিন একটি নামের তাৎপর্য বুঝে উঠতে পারার কথা নয়, অথচ এই রোগ সম্পর্কে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে কম বেশি জানা ও সচেতন থাকা জরুরি। এসব বিবেচনায় এনে মে ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে প্রতিটি ভ্যারিয়েন্ট যখনই আবিষ্কার হবে তা যদি ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট এবং ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন ধরনের বিবেচনায় আসে তা হলে তাদের আপাতত দুটো নাম নির্ধারণ করে ফেলা হবে। তার একটি হলো বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত দেয়া অরিজিনাল বৈজ্ঞানিক নাম যা বিজ্ঞানীরা রিসার্চের কাজে লাগাবেন। আর আরেকটি নাম থাকবে, যা সাধারণ মানুষের সতর্কতা ও বোঝার জন্য জরুরি। এটিকে সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি ভ্যারিয়েন্টের ‘ডাক নাম’। আসল নাম হলো এর ‘বৈজ্ঞানিক নাম’ যেটা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কারের পর নির্ধারণ করে থাকেন।

তৃতীয়ত, উহানে নতুন বা নোবেল করোনাভাইরাস যখন আবিষ্কার হলো তখন এর নাম রাখতে বেগ পেতে হয়নিই। নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট সামনে একের পর এক যখন আসা শুরু করল, তখন ভ্যারিয়েন্টগুলোর নাম সাময়িকভাবে যে দেশ থেকে ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তি হতো সে দেশের নামানুসারে ওই ভ্যারিয়েন্টের নামকরণ করা হতো। যেমন আল্ফা, বিটা, গামা ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের আবিষ্কারকালীন সময়ের নাম ছিল যথাক্রমে ইউকে, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু কেউই চায় না সেটি রাষ্ট্র হোক কিংবা কোনো ব্যক্তি যে নিজের নামের পাশে আরেকটি কলঙ্ক লেপন করা নাম যুক্ত হোক। যেমন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যখন আবিষ্কৃত হলো, তখন ইন্ডিয়ায় আবিষ্কার হওয়ায় একে ডাকা হতো ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট নামে। কিন্তু এ নামের সাথে মানুষের জন্য ক্ষতিকর একটি ভাইরাসকে পরিচিতির উদ্দেশ্য হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশ এই নামে ডাকাকে আপত্তি করল। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ব্যাপারটি আমলে নিয়ে ভৌগোলিক এলাকা অনুসারে নামকরণের প্রথার বিকল্প গ্রিক বর্ণমালাকে বেছে নেয়। এ পর্যন্ত ভ্যারিয়েন্টগুলোর নামের ব্যাপারে চারটি পদ্ধতি চালু আছে। প্রথম নামটি বৈজ্ঞানিক নাম যা মিউটেশন ও জেনেটিক পরিবর্তনকে প্রাধান্য দিয়ে নামকরণ করা হয়েছে। এ নামের ধারকবাহক সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা (বি.১.১.৭, বি.১.৩৫১, পি.১, বি.১.৬১৭.২ ইত্যাদি)। দ্বিতীয় ধরনের নামকরণ করা হয়েছে গ্রিক বর্ণমালার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যার উদ্ভাবক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (যেমনÑ আল্ফা, বিটা, গামা, ডেল্টা, ওমিক্রন প্রভৃতি)। তৃতীয় ধরনের নামকরণ করা হয়েছে ভৌগোলিক এলাকাকে গুরুত্ব দিয়ে (ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট, ইউকে ভ্যারিয়েন্ট প্রভৃতি)। চতুর্থ ধরনের নামকরণ হলো মিশ্র ধরনের।
অবশ্য সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, বেশির ভাগ বিজ্ঞানী একটি একক বংশ-নামকরণ পদ্ধতিতে সহজ বোধ করছেন। কারণ এ পদ্ধতিতে ভ্যারিয়েন্টের বিবর্তনীয় রূপ ব্যখ্যা করা সহজ হয়।

করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট প্যান্ডেমিক পরিস্থিতি, বিশ্বব্যাপী এর অপ্রতিহত প্রভাব এবং এপিডেমিওলজিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টগুলোকে অফিসিয়ালি ভ্যারিয়েন্টস আন্ডার সারভিলেন্সের অন্তর্ভুক্ত করে।

এর আওতায় ভ্যারিয়েন্টগুলোকে ভ্যারিয়েন্টস ইন মনিটরিং, ভ্যারিয়েন্টস আন্ডার ইনভেস্টিগেশন, ভ্যারিয়েন্টস অব ইন্টারেস্ট, ভ্যারিয়েন্টস অব কনসার্ন অ্যান্ড ভ্যারিয়েটস অব হাই কন্সিকুয়েন্সেস এই পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ভ্যারিয়েন্টগুলোর বিভিন্ন নামকরণ এপিডেমিওলজির গুরুত্ব অনুপাতে করা হয়েছে। ভ্যারিয়েন্টের এসব ধরন স্টাটিক নয়, বরং ডাইনামিক। আজকে যেই ভ্যারিয়েন্টটা ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট, কালকে সেটি তার ধ্বংস ক্ষমতার কারণে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্নে রূপ নিতে পারে। আবার আজকে যেটা ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন, কিছু দিন পর তার মারণঘাতী ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্টের কাতারে চলে আসতে পারে। একসময় বিলুপ্তও হয়ে যেতে পারে। তবে একটি সাধারণ কথা মনে রাখতে হবে যে, একটি ভ্যারিয়েন্ট যখন আবিভর্‚ত হয় তখন যে সংক্রমণশীলতা বা মারণক্ষমতা নিয়ে আসে, তা সাধারণত দিনে দিনে দুর্বল হয়ে যায় অথবা নতুন শক্তিধারী বা দুর্বল ভ্যারিয়েন্ট বা সাব-ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হয়; যা ভিন্নধর্মী হয়ে থাকে। কিন্তু একই ভ্যারিয়েন্ট আরেকটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট হওয়া ছাড়া শক্তিশালী হয় না।
ভ্যারিয়েন্ট নামকরণের পরিবর্তন ও বিলুপ্তকরণÑ সব ঘোষণাই দিয়ে থাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

ভ্যারিয়েন্টগুলোর কার্যকরী সংজ্ঞা
ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হবে যখন মিউটেশনের কারণে নিম্নবর্ণিত পরিবর্তনগুলোর একটি বা একাধিক লক্ষণীয়ভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদের কাছে প্রতীয়মান হয়।
– স্পাইক প্রোটিনের আরবিডি অংশের সাথে মানুষের ফুসফুস কোষের রিসেপটর এসিই-২ এর যুক্তকরণ সহজ ও দ্রæত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
– আগেই ভ্যাকসিন বা ইনফেকশনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডির ক্ষমতা খর্ব হয়।
– রোগ নির্ণয়ে জটিলতা ও চিকিৎসা সক্ষমতা কমে যায়।
– রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রোগের সিভিয়ারিটি বেড়ে যায়।

ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একটি ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্টকে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন তখনই বলা হবে যখন নিচের পরিবর্তন সূচকের এক বা একাধিক চরিত্র পাওয়া যাবে।
– দ্রæত ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি।
– রোগটি আরো মারাত্মক হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়া।
– ভ্যাকসিনের সক্ষমতা কমিয়ে অ্যান্টিবডি অধিকহারে নিউট্রাল করা।
– চিকিৎসা সক্ষমতা আরো কমে যাওয়া।
– রোগ নির্ণয়ে জটিলতা.

এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ভ্যারিয়েন্টস অব কনসার্নগুলো নিম্নরূপ :

আল্ফা ভারিয়েন্ট : বি.১.১.৭ (ইংল্যান্ড, সেপ্টেম্বর ২০২০)।
আল্ফা ভ্যারিয়েন্ট হলো চীনের উহানে আবিষ্কৃত সারসকভ-২ এর একটি ভ্যারিয়েন্ট। এটি নভেম্বর ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যে প্রথমে শনাক্ত হয়। ভ্যারিয়েন্টটিকে বিজ্ঞানীরা ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশনের আওতায় এনে এর ওপর ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায়। অতঃপর ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ সালে প্রথম ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে একে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যারিয়েন্টস অব কনসার্ন ঘোষণা করেন। ৩১ মে ২০২১ সালের আগ পর্যন্ত এই ভ্যারিয়েন্টের নাম ছিল ইউকে ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু যুক্তরাজ্যের ভেতরে ইটা (লিনিয়েজ বি.১.৫২৫) ভ্যারিয়েন্ট নামে আরো একটি ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব হয়েছিল বিধায় এই আল্ফা ভ্যারিয়েন্টটিকে কেন্ট ভ্যারিয়েন্ট নামেও ডাকা হতো। অতঃপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩১ মে ২০২১ সালে এটিকে আল্ফা ভ্যারিয়েন্ট নামে অভিহিত করে। এটি ৩ ডিসেম্বর ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৯২টি দেশে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এর স্পাইক প্রোটিনের এন৫০১ওয়াই মিউটেশন থাকায় মানব কোষের রিসেপ্টরের সাথে ভাইরাসের বাইন্ডিং এফিনিটি বেড়ে যায়, ফলে তা মানব কোষে সহজেই ঢুকে যেতে পারে। ‘এন৫০১ওয়াই’ মিউটেশন মানে স্পাইক প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড চেইনের ৫০১ নম্বর পজিশনের এস্পারাজিন (এন) নামক অ্যামাইনো এসিডটি টাইরোসিন (ওয়াই) নামক অ্যামাইনো এসিড দিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে। এ মিউটেশনটির অবস্থান স্পাইক প্রোটিনের রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইনেরও (আরবিডি) আরেকটি স্পেশাল অংশ যাকে রিসেপ্টর বাইন্ডিং মোটিফ (আরবিএম) বলা হয় সে অংশে। আরবিএমের এ অংশটি মানব কোষের এসিই-২ নামক রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়ে ভেতরে ঢোকে। এ মিউটেশনটি থাকলে ভাইরাস দুটো সুবিধা অর্জন করে। তার একটি হলো মানুষের রক্তে থাকা অ্যান্টিবডিকে সহজেই ফাঁকি দেয়া, আরেকটি হলো এসিই-২ রিসেপ্টরের সাথে বাইন্ডিং এফিনিটি বেড়ে যাওয়া। ফলে ভাইরাসটি খুব দ্রæত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই মিউটেশনটি বিটা ও গামা ভ্যারিয়েন্টেও বিরাজমান। এর ডি৬১৪জি নামক মিউটেশন থাকায় ভাইরাল র‌্যাপলিকেশন বেড়ে যায়। কিন্তু পি৬৮১এইচ মিউটেশনের কাজ কী তা জানা যায়নি। এটি অরিজিনাল উহানের ভাইরাসের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। তবে ডিজিজ সিভিয়ারিটিও ক্ষানিকটা বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু সৌভাগ্যবশত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ও মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি এটির বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর। এটির ই৪৮৫কে মিউটেশনের কারণে ভ্যাকসিন বা ইনফেকশন সৃষ্ট অ্যান্টিবডিকে ফাঁকি দিতে পারে।

বিটা ভ্যারিয়েন্ট : বি.১.৩৫১ (দক্ষিণ আফ্রিকা, মে ২০২০)
২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় আবিষ্কৃত এবং ১৩৯টি দেশে বিস্তার লাভকারী এই ভ্যারিয়েন্টটি ডিসেম্বর ২০২০ সালে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আল্ফা ভ্যারিয়েন্টের তিনটি মিউটেশন ছাড়াও বিটা ভ্যারিয়েন্টের কে৪১৭এন পজিশনে অতিরিক্ত একটি মিউটেশন আছে, যে কারণে রক্তে চলাচলকারী অ্যান্টিবডিকে নিউট্রালাইজ করে ফেলতে পারে। এটি আল্ফা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রমণশীল। একটু বেশি সংক্রমণশীল হওয়ায় আবার ডিজিজ সিভিয়ারিটি কম। বিটা ভ্যারিয়েন্টের মূল অস্ত্র রক্তে চলাচলকারী অ্যান্টিবডির প্রতি একধরনের রেজিস্টেন্স তৈরি করা। তার মানে যাদের ভ্যাকসিন দেয়া হয়ে গেছে বা আগে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে গেছে তাদের আবার আক্রান্ত হওয়ার চান্স বেড়ে যায়। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে কম সংক্রমণশীল হওয়ায় এটি ডেল্টা ভাইরাস দ্বারা অনেকাংশেই প্রতিস্থাপিত হয়েছে।

গামা ভ্যারিয়েন্ট : পি.১ ( ব্রাজিল, নভেম্বর ২০২০)
১১ জানুয়ারি ২০২১ সালে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন হিসেবে ঘোষিত এ ভ্যারিয়েন্টি অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর মতোই ই৪৮৪কে, এন৫০১ওয়াই ও ডি৬১৪জি পজিশনে মিউটেশন আছে। এটির কে৪১৭টি পজিশনেও আরেকটি মিউটেশন আছে, যে কারণে মানব কোষের সাথে বাইন্ডিং এফিনিটি বেড়ে যায়। তার মানে দ্রæত ছড়ায়। এর আরো একটি মিউটেশন যা এইচ৬৫৫ওয়াই পজিশনে আছে কিন্তু এর কাজ সম্পর্কে জানা যায়নি। এটি ভ্যারিয়েন্ট অব নন-কনসার্নগুলোর চেয়ে ১.৭-২.৪ গুণ বেশি সংক্রমণশীল। করোনা থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিবর্গ গামা ভ্যারিয়েন্ট থেকে মাত্র ৫৪-৭৯ শতাংশ প্রটেকশন দিতে পারে। তবে ভালো সংবাদ হলো প্রচলিত সব ভ্যাকসিনই এর বিরুদ্ধে কার্যকর।

করোনাভাইরাস হলো একটি প্রোটিন পার্টিকেল যার কেন্দ্রে থাকা রাইবোনিউক্লিক এসিড বা জিনোমটি সাধারণত ২৭ থেকে ৩৪ হাজার নিউক্লিওটাইডের অণু দিয়ে চেইনের মতো করে তৈরি। জিনোমটিকে তোয়ালের মতো প্যাঁচিয়ে রেখে সুরক্ষা দেয় ২৪৮-৩৬৫ অ্যামাইনো এসিড সমৃদ্ধ আরএনএ বাইন্ডিং প্রোটিন যাকে বলে নিওক্লিওক্যাপ্সিড প্রোটিন, আর পুরো জিনোম এবং নিউক্লিওক্যাপসিড প্রোটিনকে এনভেলপের মতো ঢেকে রাখে লিপিড বাই লেয়ারের একটি আবরণ যাকে বলে এনভেলপড মেমব্রেন।

করোনায় গড়ে মোট ৭৮টি স্পাইক প্রোটিন আছে। গড়ে এক হাজার ২৭৩টি এমাইনো এসিড দিয়ে তৈরি প্রতিটি স্পাইক প্রোটিন এন- টার্মিনাস (এমাইনো এসিড ১-১৩ নম্বর পর্যন্ত) এবং আরবিডি (এমাইনো এসিড ১৪-১২৭৩ নম্বর)-এই দুই অংশে বিভক্ত। আরবিডি অংশ আবার এস১ সাবিউনিট (১৪-৬৮৫ এমাইনো এসিড) এবং এস২ সাবিউনিট (৬৮৬-১২৭৩ এমাইনো এসিড)-এই দুই অংশে বিভক্ত যারা রিসেপ্টর বাইন্ডিং এবং মেমব্রেন ফিউশনের জন্য দায়ী।

প্রকৃতপক্ষে স্পাইক প্রোটিন হলো প্রকৃতির ২০টি এমাইনো এসিড দিয়ে পুঁতির মালার মতো করে সাজানো একটি চেইন। কোন অ্যামাইনো এসিড কোথায় বসবে তা জেনেটিক্যালি পূর্ব নির্ধারিত। জেনেটিক কোডে পরিবর্তনের ফলে এক হাজার ২৭৩ পয়েন্টের যেকোনো অ্যামাইনো এসিডের একটি, অন্য একটি অ্যামাইনো এসিড দিয়ে পরিবর্তিত কিংবা সংযোজন-বিয়োজন হলেই মিউটেশন।

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট : বি.১.৬১৭.২ ( ভারত, অক্টোবর, ২০২০)
১১ মে, ২০২১ সালে ভারতে আবিষ্কৃত ভ্যারিয়েন্টি ১৭৬টি দেশে সংক্রমণ করে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃৃত সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ভ্যারিয়েন্ট এটি।
ডেল্টার বৈজ্ঞানিক কোড নাম : বি.১.৬১৭
লিনিয়েজ বি.১.৬১৭-এর তিনটি ভিন্নধর্মী সাব লিনিয়েজ বা সাব-টাইপ বা সাব-ভ্যারিয়েন্ট আছে। এগুলো হলোÑ বি.১.৬১৭.১; বি.১.৬১৭.২ এবং বি.১.৬১৭.৩। এর সবগুলো সাব-টাইপেই পি৬৮১আর মিউটেশন হয়। এ ছাড়া এই বি.১.৬১৭ লিনিএজের মধ্যে আছে এল৪৫২আর, ই৪৮৪কিউ এবং ডি৬১৪জি নামে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মিউটেশন।

গবেষণায় দেখা গেছে, ডেল্টায় পি৬৮১আর মিউটেশন থাকার কারণে এতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাসতন্ত্রে অন্য ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্তদের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশি ভাইরাস থাকে। ফলে হাঁচি-কাশি ও কথার মাধ্যমেও অনেক বেশি ইনফেকশন ছড়ায়।
ডি৬১৪জি : মানে স্পাইক প্রোটিনের অ্যামাইনো এসিড সিকুইন্সের ৬১৪ নম্বর পজিশনে বসা এস্পারটিক এসিড অ্যামাইনো এসিডটি গ্লাইসিনে রূপান্তর হয়।

এই মিউটেশনের ফলে ভাইরাসের সারফেসে যে স্পাইক প্রোটিন থাকে তার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। মানুষের তৈরি ফুরিন এনজাইমটিকে করোনাভাইরাস হাইজ্যাক করে স্পাইক প্রোটিনকে কাজে লাগিয়ে সেলে ঢোকে। ফলে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সহজেই মানব শরীরের সেলে ঢুকে যায়। এ কারণে এদের সংক্রমণ ক্ষমতা বেড়ে যায়।

এল৪৫২আর : মানে পজিশন ৪৫২-তে অ্যামাইনো এসিড লিউসিনের পরিবর্তে আরজিনিন প্রতিস্থাপিত হয় ফলে ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন মানুষের সেলের এসিই-২ রিসেপ্টরের প্রতি অধিক হারে আকৃষ্ট হয়।

ডেল্টার এই ভ্যারিয়েন্টটি কাপ্পা এবং এপ্সিলন ভ্যারিয়েন্টেও পাওয়া যায়। এই মিউটেশনের কারণে রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমাইন প্রোটিনকে কাজে লাগিয়ে এন্টিবডি দ্বারা ভাইরাস নিউট্রালাইজেশন প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়।

ডি৬১৪জি : ডেল্টায় যতগুলো স্পাইক মিউটেশন হয় তার একটির নাম ডি৬১৪জি।
ডি৯৫০এন : ডেল্টার এই মিউটেশনটি অন্য কোনো ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যায় না। এই স্পাইক মিউটেশনের নাম ডি৯৫০এন। এই মিউটেশনটি রিসেপ্টর বাইন্ডিং ডোমেইনের এরিয়ার বাইরে যাদের কাজ হলো ভাইরাসকে মানুষের কোষের সাথে মিশে শরীরে ঢুকতে সাহায্য করা। এর কারণে ভাইরাল লোডও বেড়ে জায়।

ভ্যারিয়েন্টগুলোতে নেই কেবল ডেল্টাতেই আছে। কিছু মিউটেশন থাকার কারণে এটি যেমন বেশি সংক্রমণশীল তেমনি বেশি রোগ সৃষ্টিকারী। এর এল৪৫২আর পজিশনে মিউটেশন থাকার কারণে বেশি ইনফেক্টিভ। টি৪৭৮কে মিউটেশন থাকার কারণে আমাদের শরীরের ইমিউন সেল চিনতে পারে না। অর্থাৎ ইমিউন সেল থেকে পালিয়ে থাকতে পারে। আর পি৬৮১আর পজিশনে মিউটেশন থাকার কারণে রোগটিকে বেশ সিভিয়ার করে ফেলতে পারে। অতিরিক্ত কে৪১৭এন মিউটেশনের কারণে নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা প্লাসের জন্ম হয়েছে নেপালে। এটি অরিজিনাল উহানের স্ট্রেইনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি সংক্রমণশীল। আলফার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি থাকে এই ভ্যারিয়েন্টে। অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ডেল্টার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন কম কার্যকর।

ডেল্টার স্পাইক প্রোটিনের এন-টারমিনাল ডোমেইনে আরেকটি মিউটেশন হয় যার কাজ এন্টিবডি বাইন্ড করতে বাধা দেয়া।

ভাইরাসের জেনেটিক চেঞ্জ হয় যখন ভাইরাসটি হোস্ট পরিবর্তন করে। মানব শরীরের বাইরে এর রূপান্তর সম্ভব নয়।

ডেল্টা ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড মাত্র চার দিন অথচ উহানে আবিষ্কৃত অরিজিনাল সারসকভ-২-এর গড় ইনকিউবেশন পিরিয়ড ছিল সাত দিন।

ওমিক্রন বি.১.১.৫২৯ : গত ২৬ নভেম্বর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন সবচেয়ে খারাপ ও উদ্বেগ সৃষ্টিকারী এ পর্যন্ত পঞ্চম ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন এই ভ্যারিয়েন্টটির নাম দেন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট-বি.১.১.৫২৯। ধারণা করা হচ্ছে, এই ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি সংক্রমণশীল, মারাত্মক, ভ্যাকসিন কার্যকারিতা দ্রুত বিনষ্টকারী প্রকৃতির হবে। এ ছাড়াও এই ভ্যারিয়েন্ট ইমিউন সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে অধিক সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন। এরা শুধু বয়স্ক নয় বরং অল্প বয়স্কদেরও আক্রান্ত করছে।

ওমিক্রনের জন্ম কিভাবে হলো?
প্রথমত, ইমিউনো কম্প্রামাইজড রোগীর দীর্ঘমেয়াদি অসম্পূর্ণ চিকিৎসা যে নতুন ভ্যারিয়েন্ট উৎপত্তির সবচেয়ে বড় কারণ এ ব্যাপারে সবাই একমত।

দ্বিতীয়ত, রিভার্স জুনোসিস প্রক্রিয়ায় এর উৎপত্তি। এ কথা সর্বজনবিদিত যে কোভিড-১৯ এসেছে বাদুর থেকে মানুষে, তারপর ধারণা করা হয় তা মানুষ থেকে অন্য প্রাণীতে, আবার অন্য প্রাণী থেকে মানুষে।

তৃতীয়ত, মলনুপিরাভির নামে এন্টিকরোনা ভাইরাল ড্রাগের অসম্পূর্ণ এবং অসতর্ক প্রয়োগ।
ফুসফুসের শ্বাসনালীতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন প্রায় ৭০ গুণ দ্রুত র‌্যাপলিকেট করে ফলে এটি পূর্ববর্তী ডেল্টার তুলনায় কম গুরুতর কারণ এটি ফুসফুসে ডেল্টার তুলনায় ১০ গুণ কম আক্রান্ত করে। ওমিক্রন ডেল্টার তুলনায় ৯১ শতাংশ কম মারাত্মক, ৫১ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকিও কম।
ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ভ্যাকসিন ইন্ডিউসড এন্টিবডির ক্ষমতা ৪০ গুণ কমিয়ে দিতে পারে।

আলফা, বিটা, গামা এবং ডেল্টার স্পাইক প্রোটিনে মিউটেশন সংখ্যাÑ ১০, ১১, ১২ ও ৯। আর ওমিক্রনের আছে ৬০টি মিউটেশন। এর মধ্যে ৫০টি অ্যামাইনো এসিড পরিবর্তনকারী মিউটেশন এবং ১০টি সাইলেন্ট মিউটেশন।

ওমিক্রনের মিউটেশন স্পাইক প্রোটিন, নিউক্লিওক্যাপসিড প্রোটিন এবং নিউক্লিওটাইড অণুতে সংঘটিত হয়।

স্পাইক প্রোটিনের ৩৬টি মিউটেশনের মধ্যে ২৩টি মিউটেশন অন্য ভ্যারিয়েন্টগুলোতেও পাওয়া যায়। বাকি ১৩টি ওমিক্রন স্পাইক প্রোটিনের মিউটেশন কেবল ওমিক্রনের জন্যই নির্দিষ্ট।
ওমিক্রনের সাব-ভেরিয়েন্ট : গবেষকরা ওমিক্রনের আরো চারটি সাব-ভ্যারিয়েন্টের প্রমাণ পেয়েছেন। এগুলোÑ বিএ.১/বি.১.১.৫২৯.১, বিএ.২/বি.১.১.৫২৯.২, বিএ.৩?/বি.১.১.৫২৯.৩ এবং বি.এ.৩/বি.১.১.৫২৯.৪ নামে পরিচিত। মিউটেশনে পার্থক্য থাকার পাশাপাশি ডেল্টা ও ওমিক্রনের মধ্যে উপসর্গগত পার্থক্যও বিদ্যমান। ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে দ্বিগুণ এবং অরিজিনাল ভার্সনের চেয়ে চারগুণ সংক্রমণ ক্ষমতাসম্পন্ন।

মুখের স্বাদ এবং ঘ্রাণশক্তি মোটামোটি ঠিক থাকে ওমিক্রনে। কিন্তু ডেল্টায় দু’টিই বেশ প্রভাবিত হয়। এ ছাড়া ওমিক্রনে ব্রেক থ্রু ইনফেকশন, রি-ইনফেকশন, আপার রেস্পিরেটরি ট্রাক্ট ইনফেকশন, ভ্যাকসিন ফাঁকি দেয়া ইত্যাদি বেশি। ডেল্টার মারণক্ষমতা ওমিক্রনের চেয়ে অনেক বেশি।

ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট : মাত্র দু’টি ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে ঘোষণা করেছে।

ল্যাম্বডা (সি.৩৭) : পেরুতে প্রথম শনাক্ত হয়। ২৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে ঘোষণা করে। এন্টিবডির বিরুদ্ধে আলফা কিংবা বিটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও বেশি রেজিস্ট্যান্স গড়ে তোলে। কিন্তু সব মিলিয়ে অতটা প্রভাব বিস্তার করতে না পারার কারণে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট নাম ধারণ করেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।
মিউ (বি.১.৬২১) : গ্রিক বর্ণমালার ১২তম বর্ণ। জানুয়ারি, ২০২১ সালে কলম্বিয়াতে প্রথম শনাক্ত হয়। দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি রাষ্ট্রে কিছুদিন সামান্য প্রভাব বিস্তার করার পর এখন প্রভাব নিভু নিভু।

ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশন : এপসিলনÑ বি.১.৪২৭/বি.১.৪২৯ (আমেরিকা, মার্চ, ২০২০) ২০২০ সালের জুলাই মাসে ক্যালিফোর্নিয়াতে শনাক্ত হয়। মে, ২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে এপসিলন নামকরণ দিয়ে ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট হিসেবে ঘোষণা করে। তবে জুন, ২০২১ সালের পির থেকে এটিকে ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশনের আওতায় নিয়ে আসে।

জিটা : পি.২ (ব্রাজিল, এপ্রিল, ২০২০)। এটি ব্রাজিলে ২০২০ সালে শনাক্ত হয় এবং ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্টের মর্যাদা পায়। কিন্তু জুলাই, ২০২১ সালে একে ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশনের নামে নামাঙ্কিত করা হয়। থিটা (পি.৩) : (ফিলিপাইন, জানুয়ারি, ২০২১) হু’র হিসাবে এটাও বিলুপ্তপ্রায় ভ্যারিয়েন্ট।

ভ্যারিয়েন্টস আন্ডার মনিটরিং
ইটা : বি.১.৫২৫ (একাধিক দেশে, ডিসেম্বর, ২০২০) শনাক্ত হওয়ার পর দ্রুত ২৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়লে মার্চ, ২০২১ সালে ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে এমন দু’টি মিউটেশন (ই৪৮৪কে এবং এফ৮৮৮এল) আছে যা ইতঃপূর্বে অন্য কোনো ভ্যারিয়েন্টে ছিল না। তবে বর্তমানে এটি বিলুপ্তপ্রায় ভ্যারিয়েন্ট।
কাপ্পা : বি.১.৬১৭.১ (ভারত, অক্টোবর, ২০২০)
অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট : ডেলমিক্রনÑ মূল সংক্রমণ সংখ্যার তুলনায় এদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। ডেলমিক্রন হলো বিরল ধরনের কো-ইনফেকশনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
যখন একই ব্যক্তিকে একই সাথে একই সময়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত করে। ডেলমিক্রন নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট না হওয়ার কারণে আলাদা কোনো উপসর্গও নেই।

ডেল্টা ও ওমিক্রন এই দু’টি ভ্যারিয়েন্টেরই তাদের নিজস্ব জিন অদলবদল করার ক্ষমতা থাকায় ডেলমিক্রনে দুই ভ্যারিয়েন্টেরই স্পাইক প্রোটিন থাকে। এই প্রক্রিয়াকে রিকম্বিনেশন বলে। ওমিক্রনের উচ্চ সংক্রমণ এবং ডেল্টার মারাত্মক রোগ তৈরি করার ক্ষমতা মিলেমিশে ডেলমিক্রন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারে যদিও এটি খুবই বিরল ঘটনা।

টুইন্ডেমিক : মানে যমজ প্যান্ডেমিক। অর্থাৎ যদি কোনো কারণে দু’টি ভিন্ন নামের ভাইরাস দ্বারা সারা বিশ্বে একই সাথে দু’টি প্যান্ডেমিক মহামারী সমান তালে চলে তাকেই টুইন্ডেমিক বলে।
আমরা জানি, ১৯১৮ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে একটি বড় ধরনের মহামারীতে বিশ্বে কোটি কোটি লোকের প্রাণহানি হয়েছিল। সে ভাইরাসই রিফটিং-শিফটিং হয়ে গত ১০০ বছরে বেশ কয়েকটি মহামারী বিশ্ববাসীকে অনেক ভুগিয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের নতুন নতুন জেনেটিক পরিবর্তনের ফলে বছর বছর নতুন ভ্যাকসিন নিতে হয়। সম্প্রতি আমেরিকার চিকিৎসক, সংক্রামক রোগ এবং অতিমারী বিশেষজ্ঞ সে দেশের এক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি বছরে ফ্লুয়ের নতুন একটি স্ট্রেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রতি বছরই বিজ্ঞানীরা একটি আন্দাজ করে নেন সে বছরের শীতে ফ্লুয়ের জীবাণু কেমন আকার নেবে। সেই হিসাবে টিকাও তৈরি করা হয়। কিন্তু এ বছর এইচ৩এন২ নামের নতুন একটি প্রজাতির ফ্লু-ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এটির গড়ন সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কোনো আন্দাজ ছিল না। তাদের কোনো পূর্বাভাস না থাকার ফলে এ বছর ফ্লুয়ের যে টিকাটি বাজারে এসেছে, তা জীবাণুটির প্রায় কোনো প্রভাব ফেলছে না। ফলে হু হু করে বাড়ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা-আক্রান্তের সংখ্যা। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা হয় ‘টুইন্ডেমিক’ অর্থাৎ যমজ অতিমারী। কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করলেও বর্তমান প্যান্ডেমিকে এর কোনো প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

শীত কেটে গেলে এই সমস্যা কমবে বলেও আশা। সারা বিশ্বে টুইন্ডেমিক হলেও উপমহাদেশে এর সম্ভাবনা খুব কম। এখানে ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ বেশি বিধায় একই সাথে করোনা প্যান্ডেমিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলা নগর

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com