শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৮ অপরাহ্ন

এবার হিজাব নিষিদ্ধ আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে!

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১৮৩ বার

এবার হিজাব বিতর্কের আঁচ ছড়িয়ে পড়েছে উত্তর প্রদেশের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ পরিস্থিতিতে আলিগড়ের ধর্ম সমাজ কলেজ একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেই নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, কলেজে নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সম্প্রতি, কর্নাটকের উদুপিতে ৬ ছাত্রীকে হিজাব পরিহিতা অবস্থায় কলেজে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়। এর পরই সেই প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়ে আরো অনেক রাজ্য। সেই বিক্ষোভকে সমর্থন জানিয়ে আলিগড় কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখায়। পাল্টা গেরুয়া ওড়না গায়ে জড়িয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে বেশ কিছু মানুষ বিক্ষোভে শামিল হয়। এর পরই আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় এই নির্দেশিকা জারি করল। পুবের কলম।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ‘আলিগড়ের ধর্ম সমাজ কলেজ একটি নোটিশ জারি করেছে। নির্ধারিত ইউনিফর্ম ছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।’ কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ড. রাজ কুমার বর্মা এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘কলেজের শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখেই এ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। আমরা মুখ ঢেকে শিক্ষার্থীদের কলেজ প্রাঙ্গণে প্রবেশের অনুমতি দেবো না; কারণ সম্প্রতি ক্যাম্পাসে কিছু শিক্ষার্থীকে হিজাব ও বোরকা পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে। গেরুয়া ওড়না গায়ে দিয়েও কলেজে প্রবেশের অনুমতি নেই।’
উল্লেখ্য, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটির (এএমইউ) ছাত্ররা হিজাব পরার অধিকারের দাবিতে দক্ষিণ রাজ্যে তাদের সহকর্মীদের সমর্থনে ক্যাম্পাসে একটি প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে।

ক্যাম্পাসের ভেতরে মিছিল করতে গিয়ে তাদের পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তার পরই আলিগড়ের ডিএস কলেজ নির্ধারিত ইউনিফর্ম না পরা শিক্ষার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। এ দিকে হিজাব বিতর্কে উত্তপ্ত গোটা দেশ। সেই উত্তাপের আগুন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। কর্নাটকের উদুপিতে তৈরি হওয়া বিতর্কের আগুনে শামিল অন্য রাজ্যগুলো। চিকমাগালুর, উদুপি, শিবমোগা, গদগ ও চিত্রদুর্গ জেলার কলেজগুলোতে বিক্ষোভে শামিল হয় একাধিক শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এ দিকে হিজাব বিতর্ক নিয়ে কর্নাটক হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে এ-সংক্রান্ত একাধিক পিটিশনের শুনানি চলছে। গত সপ্তাহেই আদালতের পক্ষ থেকে মামলার শুনানি শেষ না হওয়া অবধি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের ধর্মীয় পোশাক না পরে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

কোনো মেয়ে নিজের ইচ্ছায় হিজাব পরেন না : যোগি আদিত্যনাথ

স্কুল-কলেজে মুসলিম মেয়েদের হিজাব পরা নিয়ে কর্নাটকের বিতর্কের মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ বলেছেন, কোনো মহিলাই নিজের ইচ্ছায় হিজাব পরেন না। মুসলিম মেয়েদের ওপর জোর করে হিজাবের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে যোগি বলেন, ‘কোনো মহিলা নিজেদের ইচ্ছায় হিজাব পরেন না। তিন তালাকের মতো কুপ্রথাও কি মহিলারা কখনো গ্রহণ করেছিলেন? ওই সব মেয়ে এবং বোনদের জিজ্ঞেস করে দেখুন।’

তিনি আরো বলেন, এটি একটি খারাপ প্রথা, যা কিছু লোক জোর করে নারীর স্বাধীনতা খর্ব করতে চায়। কেন্দ্রীয় সরকার তিন তালাক প্রথা নিষিদ্ধ করে মুসলিম মেয়েদের রেহাই দিয়েছে বলেও দাবি করেন যোগি। তার কথায়, ‘আমি ওঁদের চোখের জল দেখেছি। নিজেদের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে চোখের জল আটকে রাখতে পারছিলেন না তারা। জৌনপুরের এক মহিলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানান।’

অন্য দিকে এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, হিজাব নিয়ে যদি এত বিতর্ক, তাহলে যোগি আদিত্যনাথের পোশাক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে না কেন? যদিও বিরোধীরা বলছেন, আসল ইস্যু থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে নির্বাচনের সময় এই ইস্যু নিয়ে এসেছে বিজেপি। এবিপি নিউজ চ্যানেলে অ্যাঙ্কর পঙ্কজ ঝায়ের সাথে কথা বলার সময়, আসাদউদ্দিন ওয়াইসি জানান, কেউ যদি খ্রিষ্টান ক্রস পরে আসে তবে কোনো আপত্তি নেই, কেউ বিন্দি বা সিঁদুর পরলে, সে ক্ষেত্রেও আপত্তি নেই কিন্তু হিজাবে আপত্তি কেন? আবার অ্যাঙ্কর পঙ্কজ তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ বলেছেন, গাজওয়া-ই-হিন্দ থেকে দেশ চলবে না, সংবিধান থেকে চলবে, এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন। এই প্রশ্নের উত্তরে ওয়াইসি বলেন, ‘তাকে জিজ্ঞাসা করুন গাজওয়া-ই-হিন্দ মানে কী? মুখ্যমন্ত্রী যোগি যে পোশাক পরেন তা নিয়ে কেন প্রশ্ন তোলা হয় না তা জানতে চাওয়া হয়। হিজাবের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে যোগির গেরুয়া বসনের কথা উঠে এসেছে অনেকের মুখেই। গণতান্ত্রিক, ধর্ম নিরপেক্ষ দেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যোগি যদি বিশেষ ধর্মের প্রতি অনুরাগে গেরুয়া বসন পরতে পারেন, তাহলে মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরে স্কুলে যেতে পারবে না কেন?

ইন্ডিয়া টুডে নিউজ চ্যানেলের উপস্থাপক অঞ্জনা ওমকাশপ উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথকে প্রশ্ন করেছিলেন- দেশের প্রত্যেকের যখন তাদের পছন্দের পোশাক পরার স্বাধীনতা রয়েছে, তখন কেন তাদের হিজাব পরা থেকে বিরত করা হচ্ছে? এই বিষয়ে, সিএম যোগি বলেছিলেন, ‘কোনো মেয়ে স্বেচ্ছায় হিজাব পরে না।’

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com