মানুষ সবসময় নিজের কল্যাণের কথা চিন্তা করে। দুনিয়ায় সে কিভাবে ভালো থাকবে এ নিয়ে সে ব্যস্ত। অথচ তার প্রকৃত কল্যাণ কোথায় সে কথা ক’জন জানতে চায়? খুব কম মানুষই আছে যারা ইহকালের সাথে পরকালকে সমান গুরুত্ব দিয়ে ভাবে। পরকালকে অনেকেই গৌণ করে ভাবতে চায়। একজন মানুষ যখন কালিমা গ্রহণ করে সে তখন এ কথার সাক্ষ্য দেয়, সর্বাবস্থায় সে আল্লাহর হুকুম মেনে চলবে। রাসূল সা:-এর অনুসরণ করবে। তার কোনো কথা ও কাজ দ্বীনের বিপক্ষে যাবে না। আখিরাতের প্রতি এই দৃঢ় বিশ^াস তার দুনিয়ার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। সে কখনো মন্দের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে না।
মানুষ যখন আল্লাহকে তার বন্ধু বানিয়ে নেয়, সে কখনো আল্লাহর বিরুদ্ধে যেতে পারে না। তাঁর ভালোবাসে তাকে সত্য ও ন্যায়ের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। যখনি সে কোনো কাজের দিকে এগিয়ে যায়, আল্লাহর স্মরণ তার অন্তরে জাগ্রত হয়। কাজের পরিশুদ্ধতা নিয়ে চিন্তা করে। তাই আমরা যখনি কোনো কাজের চিন্তা করব আল্লাহকে স্মরণে রাখব। তাহলে আর কোনো অন্যায় হবে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘…আর যে ব্যক্তি তার রবের স্মরণ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নেয়, তিনি তাকে দুঃসহ শাস্তিতে প্রবেশ করাবেন।’ (সূরা জিন, আয়াত-১৭)
বিপদ-আপদে আপনি আল্লাহকে স্মরণে রাখবেন, আপনি বিজয়ী হবেন। কেউ আপনাকে হারাতে পারবে না। কারণ সর্বশক্তিমান আপনার সহায় হবেন। পৃথিবীর সব কিছু পাওয়ার চেয়ে যদি আপনি আল্লাহকে পেয়ে যান তাতেই বেশি লাভবান হবেন। কারণ দেয়ার মালিক আপনার কাছের হয়ে গেল। আপনার প্রয়োজন তার চেয়ে আর কেউ বেশি বুঝবে না।
এ জন্য আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ^াস রাখুন। তিনি আপনাকে সাফল্যের উচ্চ শিখরে নিয়ে যাবেন। দেখুন, নমরুদ যখন হজরত ইবরাহিম আ:-কে আগুনে নিক্ষেপ করল, তখন ইবরাহিম আ: আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন। ঈমানের পরীক্ষায় জয়ী হওয়ায় আল্লাহর সাহায্য তার কাছে এলো। হজরত ইউনুস আ:-কে মাছ গিলে নিলেও তিনি একটুও বিচলিত না হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করলেন, আল্লাহর সাহায্য তার কাছে পৌঁছে গেল। আপনিও এ রকমভাবে স্মরণ করুন, মাহরুম হবেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব …।’ (সূরা আল বাকারা-১৫২)
যুগে যুগে কালে কালে যারা আল্লাহকে স্মরণ করেছেন আল্লাহ তাদের ভুলে যাননি। নানাভাবে তাদের সাহায্য করেছেন।
পুরস্কৃতও করেছেন। বদর যুদ্ধে শক্তির বিচারে মুসলমানদের পরাজয় অনিবার্য থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা তাদের বিজয়ী করে বিশ^বাসীর কাছে দৃষ্টান্ত করে রেখেছেন। সুতরাং ইবাদত হতে হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য। দুনিয়াবি স্বার্থের জন্য ঈমান নিয়ে খেলা করা মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। শেষ পর্যন্ত তাতে না পেলাম দুনিয়া, হারালাম আখিরাত এই পর্যায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে। আখিরাতকে কেন্দ্র করে দুনিয়াবি কাজের মধ্য দিয়ে যদি সম্মান অর্জিত হয়, তা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। তবে এ কথা সত্য যে, আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাকে কখনো অসম্মানিত করেন না।
দুনিয়ায় ঈমানের পরীক্ষা হয়, কখনো কষ্ট আসে। তার মানে এই নয় যে, তাকে অসম্মানিত করা হয়েছে। বরং তাকে সম্মানের উচ্চ মাকামে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আবু জাহেল ও আবু লাহাবের কাছে হজরত মুহাম্মদ সা: দোষী হতে পারে, কারণ তিনি প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাসের ওপর আঘাত হেনেছেন, তাদের স্বার্থকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছেন। কিন্তু সত্যের কাছে তিনি এক মহান আদর্শ। মানুষ তার কারণে সত্যের দিশা পেয়েছে। তাই হজরত মুহাম্মদ সা:-এর আদর্শ আজো সেরা আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আর আবু জাহেল ও আবু লাহাবদের অপমৃত্যু হয়েছে।
অস্ত্র দিয়ে, শক্তি দিয়ে মুসলমানদের বিজয় হয়নি। মুসলমানদের বিজয় হয়েছে আল্লাহ তায়ালার সাহায্যে। আর এই সাহায্য তখনই তাদের কাছে এসেছে যখন তারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত হতে পেরেছে। আল্লাহর ওপর নিজেদের বিশ^াসকে অবিচল রেখেছে। তাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র আল-কুরআনে বলেছেন, ‘… আল্লাহকে বেশি পরিমাণ স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সূরা আনফাল : ৪৫)
তাই কোনো অবস্থায়ই মানুষের আল্লাহকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আল্লাহকে ভুলে যাওয়া মানে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেয়া। মর্যাদাকে বিনষ্ট করা। আল্লাহ মানুষকে সৎপথের দিকে আহ্বান করেন। কিন্তু যে মানুষ এই আহ্বান শোনার পরও নিজেকে গুটিয়ে নেয়, তার ব্যাপারে আল্লাহর কোনো দায় থাকে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা তাই তো বলেছেন, ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহও তাদেরকে তাদের নিজেদের ভুলিয়ে দিয়েছেন।..’ (সূরা হাশর-১৯)
যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে নিজেদেরকে গাফেল রাখে তারা হতভাগ্য। আল্লাহ যাদের ওপর গোশশা হন, তাদের পরিণতি হতাশা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। আর তিনি যাদের গুনাহগার বলেন, এরা নিসঙ্কোচে জাহান্নামের অধিবাসী।
লেখক : সাহিত্যিক ও গবেষক