বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২ অপরাহ্ন

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সংকটের আভাস

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ১৪৬ বার

ইউক্রেনে রুশ হামলার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সংকটের আভাস দিলেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে তার প্রভাব সব ক্ষেত্রেই পড়ে। যানবাহন, কৃষি-সবকিছুর ওপর প্রভাব পড়ে যখন কোনো দেশের ওপর অবরোধ দেওয়া হয়। এর মাত্রাটা ব্যাপক হলে সারাবিশ্বের জন্যই একটা চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি হলে এর মাত্রা বাড়তেই থাকবে। অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, ইউক্রেন সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে বড় প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরেও।

বাল্টিক অঞ্চলের যে সমুদ্রপথ ধরে রাশিয়ার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যগুলো এতদিন রপ্তানি হচ্ছিল, সেসব এলাকাও যুদ্ধে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে সেসব এলাকার চলমান রপ্তানি আদেশ এবং ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগে পড়ার কথা বলেছেন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে যুদ্ধের ডামাডোলে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল তেলের মূল্য ১০০ মার্কিন ডলারে উঠেছে। কয়েকগুণ বেড়েছে এলএনজি গ্যাসের মূল্য। বেড়েছে সারের মূল্যও। উচ্চমূল্যে এসব পণ্য সরকারকে কিনতে হবে। পাশাপাশি দেশের গমের মোট চাহিদার অর্ধেক আমদানি হয় রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের কারণে গমসহ বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে এর দাম বেড়ে গিয়ে চাপের মুখে ফেলছে সাধারণ মানুষকে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর আমাদের সময়কে বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কিছুটা প্রভাব বাংলাদেশে ওপর পড়বে। বিশেষ করে তেল, গ্যাস ও সারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেনে আমাদের রপ্তানি বাজার রয়েছে, সেখানেও কিছুটা প্রভাব পড়বে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে তেমন প্রভাব পড়বে না। কারণ রাশিয়া ও ইউক্রেনে খুব বেশি পণ্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হয় না। তবে যুদ্ধ দ্রুত সমাধান না হলে সংকট দীর্ঘ মেয়াদি রূপ নেবে।

নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমাদের সময়কে বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির একটা বড় বাজার হয়ে উঠছিল রাশিয়া। ইউক্রেনের সঙ্গে দেশটি যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া বাংলাদেশে পোশাক রপ্তানিকারকরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হব আমরা। আর এ যুদ্ধ যদি আশপাশের দেশে ছড়িয়ে পড়ে, তা হলে রপ্তানি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ ইউক্রেনের পাশেই জার্মানি ও পোল্যান্ডের মতো বড় বাজার। রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি এলসি খোলার পদ্ধতি না থাকায় নেদারল্যান্ডস, নটর ডেম, সুইডেন ও নরওয়ে হয়েও রাশিয়ার পিটার্সবুর্গে বাংলাদেশের পণ্য যায়। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সেখানেও প্রভাব ফেলবে। ফলে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যাপারে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়গুলোর প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বলেছে রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ে কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য চলবে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। তার মধ্যে রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৫৯ কোটি ডলারের, যা দেশীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ৭৪ কোটি টাকার সমান। অন্যদিকে ইউক্রেনে রপ্তানি হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ ডলারের বা ১০০ কোটি টাকার তৈরি পোশাক। ইউক্রেনের বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়ছিল। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ৭৯ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৬৪ লাখ ডলারের। তৈরি পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় প্লাস্টিক, চামড়া, জুতা, সিরামিক, খেলনা, ম্যাট্রেস, হিমায়িত খাদ্য, পাট ইত্যাদি রপ্তানি হয়। ইউক্রেনে পোশাকের বাইরে ওষুধ, প্লাস্টিক, জুতা, ম্যাট্রেস, খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্য যায়।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বাজেটে ৪৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি ধরা হয়েছে। এটি এখন ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কৃষি খাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকা। সারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এটি ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সার, গ্যাস ও জ্বালানির মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এগুলো আমদানি করতে সরকারকে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। এতে বেড়ে যাচ্ছে ভর্তুকির অঙ্ক। ক্রমেই চাপে পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।

জানা গেছে, গম, ভুট্টা ও সূর্যমুখী তেলের সরবরাহে এক ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সারাবিশ্ব যত গম রপ্তানি করে তার প্রায় ৩০ শতাংশ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। এ ছাড়া ভুট্টার প্রায় ২০ শতাংশ রপ্তানি হয় এ দুই দেশ থেকে। গম, ভুট্টা দিয়ে শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন হয়। সূর্যমুখী তেল রপ্তানির ৮০ শতাংশই করে এ দুই দেশ। ফলে ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের উত্তেজনা দীর্ঘস্থায়ী হলে চলতি মৌসুমে গম ও ভুট্টার সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেবে। ফলে এসব পণ্য থেকে উৎপাদিত দ্রব্যের দাম বাড়বে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ভুট্টার দামও বেশ চড়া।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com