আগামী ১৯ মার্চ সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী ‘হজ-ওমরাহ সম্মেলন ও মেলা’। সেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জেদ্দায় আয়োজিত হজ মেলায় অংশ নিতে আগামী ১৭ মার্চ ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সৌদি আরব যাচ্ছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ধর্মমন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করবেন সৌদি সরকারের কর্মকর্তারা। সেখানে করোনা মহামারীর বর্তমান অবস্থাসহ হজ পালনের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এ বছর বিদেশীদের হজ পালনের সুযোগ দেয়া হবে কিনা, দিলেও কত লোককে দেয়া হবে তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করবেন বিশ্বের নেতারা। সেখানে সীমিত পরিসরে হলেও বাংলাদেশসহ বিদেশীদের হজের সুযোগ আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
করোনা মহামারীর কারণে গত দুই বছর ধরে বিদেশীদের হজ পালনের অনুমতি দেয়নি সৌদি আরব। যেখানে স্বাভাবিক সময়ে সারাবিশ্বের ২৫ লাখের মতো মানুষ হজ পালন করে থাকেন, সেখানে ২০২০ সালে শুধু সৌদি আরবের ১০ হাজার নাগরিক এবং গত বছর সৌদি আরবে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী ৬০ হাজার নাগরিককে হজ পালনের সুযোগ দেয়া হয়। এবারো বিদেশীরা হজ পালনের সুযোগ পাবেন কি না সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশে এখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সৌদি আরবসহ সারা বিশ্বেই করোনায় আক্রান্তের হার কমছে। এ পরিস্থিতিতে হজ মেলা ও সম্মেলনের আয়োজন করেছে সৌদি আরব। গত দুই বছর বিদেশীরা হজ পালনের সুযোগ না পাওয়ায় লাখ লাখ মানুষ হজ পালনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আয়োজিত সম্মেলনে হজে বিদেশীদের সুযোগ দেয়া হবে কিনা তা হয়ে উঠতে পারে মুখ্য বিষয়। কারণ বিদেশীরা হজে যাওয়ার সুযোগ পেলেই কেবল বিভিন্ন ফিসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো: ফরিদুল হক খান নয়া দিগন্তকে বলেন, আগামী ১৯ থেকে ২৩ মার্চ জেদ্দায় হজ সম্মেলনে আমাদের ডেকেছে। আমরা যাব। সম্মেলনে হজের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, হজের বিষয়টি সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। তারা বিদেশীদের অনুমতি দেবে কিনা দিলে কতজনকে দেবে, কী কী বিধিনিষেধ থাকবে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আমরা এখনো পাইনি। সম্মেলনে হজের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ ছাড়া হজের নানাবিধ খরচ নিয়ে আলোচনা হবে। হজের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সৌদি সরকারের সাথে হজচুক্তির বিষয়টি আসবে। চুক্তি ছাড়া হজের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেয়া সম্ভব নয়। মন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি এ বছর বাংলাদেশীরা হজে যাওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। তবে কত লোক যেতে পারবেন তা এখনি বলা যাচ্ছে না।
কোটার সম্পূর্ণ লোকও নিতে পারে; আবার কমও হতে পারে। আবার নাও নিতে পারে। তবে এবার সুযোগ দিলেও হজের খরচ বাড়বে বলে তিনি জানান। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, হজের সুযোগ দিলেও ওমরাহর মতো নানা বিধিনিষেধ থাকবে। আগে যেখানে এক রুমে চার-পাঁচজন থাকতে পারত, এবার দুইজন থাকতে হবে। বাসে ৪৫ জনের জায়গায় ২০ জন যেতে হবে। বিমান ভাড়া বেড়ে যাবে। এছাড়াও আরো নানারকম বিধিনিষেধ ও পদ্ধতির কারণে খরচ বাড়তে পারে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাধারণত হজ মৌসুমের প্রায় সাত-আট মাস আগেই হজের বিষয়ে নানা উদ্যোগ ও প্রক্রিয়া শুরু করে মন্ত্রণালয়সহ হজসংশ্লিষ্টরা। এ সময়ে হজচুক্তি, প্যাকেজ ঘোষণা, হজ নিবন্ধন, বিমানের শিডিউল প্রস্তুত হয়। কিন্তু এ বছর হজের আর মাত্র চার মাস বাকি থাকলেও এখনো কোনো প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি। তবে ধর্ম মন্ত্রণালয় গত নভেম্বরেই হজের প্রস্তুতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সংস্থা, এজেন্সির সাথে বৈঠক করেছে, যেন সৌদি আরব অল্প সময়ের নোটিশে হজের অনুমতি দিলেও হজযাত্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করা যায়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৭ থেকে ১২ জুলাই হজ অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য এক লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ জনের হজকোটা রয়েছে।