দেশের প্রাচীনতম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দানকারী সংগঠনটি ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। দিনটি উপলক্ষে আজ শনিবার দুপুর আড়াইটায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুনর্মিলনীর আয়োজন করেছে ছাত্রলীগ। এতে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যের পূর্ণ দায়িত্বপ্রাপ্তির ঘোষণা আসতে পারে।
পাকিস্তান সরকারের চাপিয়ে দেওয়া ‘রাষ্ট্রভাষা উর্দু’র বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে একঝাঁক মেধাবী তরুণ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের আন্দোলনে মূল ভূমিকা রাখা আওয়ামী লীগের জন্মের এক বছর আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল গৌরব ও ঐতিহ্যের এ ছাত্র সংগঠনটি। ‘শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি’ নীতি ও স্লোগান নিয়ে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ’৬২-র শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-র ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন- প্রতিটি গণআন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ছাত্রলীগ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বর্ণাঢ্যভাবে পালন করতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংসদের পক্ষ থেকে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব সাংগঠনিক কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৭টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে কেক কাটা হবে।
দুপুরে থাকছে পুনর্মিলনী। ৬ জানুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাশে বটতলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করা হবে। ৭ জানুয়ারি সকাল ১০টায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতার সামনে দুস্থদের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার রাতে আনন্দ মিছিল করেছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের পাশাপাশি সারাদেশের ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতারা উপস্থিত থাকবেন। তবে বিতর্কিত হয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ হারানো রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কার্যক্রমে সংগঠনের প্রায় সবাই সন্তুষ্ট। শোভন-রাব্বানীর পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখক ভট্টাচার্য দায়িত্ব পান। এর পর পেরিয়ে গেছে তিন মাস। ইতোমধ্যে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও সাদাসিধে জীবনাচরণ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নজর কেড়েছে। এ কারণে তাদের পূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাহিয়ান খান জয় বলেন, এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে চমক হিসেবে থাকছে পুনর্মিলনী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্মিলনীর অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি সাবেক নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।