শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ পূর্বাহ্ন

রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার ঠিক রাখা সরবরাহে যেন টান না পড়ে

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০২২
  • ২৪২ বার

বর্তমানে চাল, ডাল, তেল, সবজিসহ প্রতিটি জিনিসের দাম চড়া। দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা তাতে সীমিত আয়ের মানুষ সবচেয়ে কষ্টের মুখোমুখি। স্বল্প আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে তারা প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়ছেন। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে ব্যয় নির্বাহ করছেন। কেউবা ধারদেনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আসন্ন রমজানে স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। লক্ষণীয়, রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা, প্রতি বছরই সেগুলোর দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।
অবস্থা এমন যে, দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও অসৎ চক্র কারসাজি করে খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় সব নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করে থাকে। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে বছরে প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ টন চালের চাহিদা রয়েছে। বিপরীতে চালের উৎপাদন হয় তিন কোটি ৭৬ লাখ টন। গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৯ লাখ ৫৯ হাজার টন। ৯ মার্চ পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সরকারি মজুদ ১৯ লাখ ৩৩ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ১৭ লাখ ৭৬ হাজার টন, গম দুই লাখ ২০ হাজার টন এবং ধান ৩৭ হাজার টন। পেঁয়াজের চাহিদা ২৫ লাখ টন। শুধু রমজানে চাহিদা চার থেকে সাড়ে চার লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ লাখ চার হাজার টন। আমদানি হয় ছয়-সাত লাখ টন। স্থানীয় উৎপাদিত পেঁয়াজ সংরক্ষণকালে প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষতি ২৫ শতাংশ। আমদানি করা পেঁয়াজে প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষতি ৮-১০ শতাংশ। ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। রমজানে চাহিদা আড়াই থেকে তিন লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় দুই লাখ তিন হাজার টন। আমদানি করা হয় ১৮ লাখ টন। অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের আমদানি পাঁচ লাখ টন। সয়াবিন বীজের আমদানি হয় ২৪ লাখ টন, যা থেকে চার লাখ টন অপরিশোধিত তেল হয়। অপরিশোধিত পাম তেলের আমদানি হয় ১১ লাখ টন। অপরিশোধিত তেল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে ২০ শতাংশ। পরিশোধিত চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন। রমজানে চাহিদা তিন লাখ টন। গত দুই মাসে চার লাখ ৮৮ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় দুই লাখ ৬০ হাজার টন বেশি। একইভাবে রমজানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় মসুর ডাল, ছোলা, খেজুর প্রভৃতি পণ্য। এসব পণ্যের ঘাটতি নেই বলে সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে।
রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদেরও মানসিক পরিবর্তন দরকার। তাদের নীতিনৈতিকতা মেনে ব্যবসায় করা উচিত। তবে সৎ উপদেশ দিলেই কেউ আপনা আপনি ভালো হয়ে যাবেন এমন নয়; তাই অতিরিক্ত মুনাফার লাগাম টানতে সরকারকে অবশ্যই কঠোর হতে হবে। মুশকিল হলো- বর্তমানে সরকারি অনেক সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ীদের পক্ষে চলে যাচ্ছে।
সময়ে সময়ে দেশে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার জন্য দায়ী প্রচলিত বাজারব্যবস্থা। কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত কৃষিপণ্য পৌঁছতে অনেক হাতবদল হয়। এসব পণ্য যতবার হাতবদল হয়, ততই দাম বাড়ে। এ ছাড়া কৃষিপণ্য শহরাঞ্চলে পৌঁছাতে পরিবহন টোল ও চাঁদাবাজির শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে করে বহুগুণে বেড়ে যায় দাম। এ জন্য আসন্ন রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে, পণ্য সরবরাহ বাধাহীন করতে পরিবহন টোল ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা অত্যাবশ্যক।
বাজার বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে বড় প্রয়োজন বাজার নজরদারি জোরদার করা। এ ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকারসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। একই সাথে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি ও মজুদকারীর বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। তবেই পবিত্র রমজানে মানুষ একটু স্বস্তিতে রোজা রাখতে পারবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com