জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার রেশ ধরে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আক্রমণাত্মক কথাবার্তা অব্যাহত রাখলেও মিত্রদের কাছ থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে মনে হচ্ছে। অন্যদিকে রোববার রাতে ইরান ঘোষণা করেছে, এই মার্কিন আগ্রাসনের মুখে ২০১৫-র পারমাণবিক চুক্তি আর মানবে না তারা। প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি জানান, যেকোনো মুহূর্তে তার দেশ পরমাণু অস্ত্রবিষয়ক গবেষণা এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করে দিতে সক্ষম। এই চুক্তি থেকে ২০১৮-তেই বেরিয়ে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
ইরানের পক্ষ থেকে প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় ট্রাম্পের নির্দেশে নানা দেশের সঙ্গে বার্তালাপ শুরু করে দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইও। হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, পম্পেইও ফোনে কথা বলেছেন পাকিস্তান সেনাপ্রধান কামার বাজওয়ার সঙ্গে। ইরাক ও আফগানিস্তানের সঙ্গেও কথা হয়েছে তার। সৌদি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও হোয়াইট হাউসের কথা হয়েছে। কূটনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, ইরানকে ‘জবাব’ দিতে আমেরিকা অন্য দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে চাইছে। বিশেষত ট্রাম্পের নজর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দিকে।
কিন্তু আফগানিস্তান যে সেটা করতে দেবে না, শুক্রবারই তা স্পষ্ট করে দেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরফ গনি। তার কথায়, ‘‘২০১৪-য় কাবুল-ওয়াশিংটনের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ক যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিল, তা মেনে কোনোভাবেই অন্য দেশের উপর আঘাত হানতে আমাদের মাটি কাউকে ব্যবহার করতে দিতে পারি না।’’
রোববার একই সুরে ‘না’ বলল পাকিস্তানও। বার্তা দিয়েছে সৌদি আরবও। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রিয়াদের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, ড্রোন হামলার আগে সৌদি রাজপরিবারের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি আমেরিকা। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখার আর্জি জানিয়ে ইরাকের তদারকি প্রধানমন্ত্রী আদেল আব্দেল মাহদিকে ফোন করেন সৌদি যুবরাজ মোহম্মদ বিন সালমান। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, আমেরিকার মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি ও আরব আমিরাতের উপরেও হামলা চালাতে পারে ইরান।
এদিকে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে এ বার ‘খুব দ্রুত এবং ‘বড় হামলা’ হবে ইরানে। টু্ইটারে লিখলেন, ইরানের ৫২টি ‘টার্গেট’ ঠিক করে রেখেছে আমেরিকা। কাসেম সোলাইমানি খুনের বদলা চেয়ে গোড়া থেকেই ফুঁসছে ইরান। মুখে ‘যুদ্ধ চাই না’ বলছেন বটে, কিন্তু ধারাবাহিক হুমকি দিয়ে চলেছেন ট্রাম্পও। কয়েক বছর আগে ইরানের মার্কিন দূতাবাসে ৫২ জনকে পণবন্দি করার পাল্টা হিসেবেই এই সংখ্যা বেছেছেন ট্রাম্প। তাঁর কথায়, ‘‘এগুলি ইরান ও তার সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বড়সড় হামলা হবেই। আমেরিকা আর কোনও হুমকি সহ্য করবে না।’’ এ দিকে শনিবারই ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়’ এই দাবিতে আমেরিকার ৩৪টি প্রদেশের ৮০টি শহরে পথে নামেন অসংখ্য মানুষ।
শুক্রবার ভোররাতে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাইরে মার্কিন ড্রোন হানায় নিহত হন ইরানের রেভুলিউশনারি গার্ড কোরের কুদস ফোর্সের কমান্ডার সোলাইমানি।