যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল নিহত হওয়ার পর থেকে দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দেশ দুটি পরস্পরের বেশকিছু লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। আক্রান্ত হলে জবাব দিতে এসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হবে ঘোষণা দিয়ে রাখছেন দেশগুলোর নেতারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তেহরান আমেরিকানদের ওপর বা মার্কিন সম্পদের ওপর হামলা চালালে ইরানের ৫২টি লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র অত্যন্ত কঠিন হামলা চালাবে। অন্যদিকে ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংবলিত ৩৫টি স্থাপনায় তারা আঘাত হানার হুমকি দিয়েছে ইরান।
জেনারেল কাসেম সোলেইমানির মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ‘নির্দিষ্ট মার্কিন সম্পদে হামলা চালানোর বিষয়ে ইরান খুব নির্ভয়ে কথা বলছে’ বলে শনিবার এক টুইটে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ৫২টি লক্ষ্যস্থল নির্ধারণ করেছে। এগুলোর মধ্যে কিছু ইরান ও ইরানের সংস্কৃতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উঁচুস্তরের। ওই লক্ষ্যস্থলগুলোতে ও ইরানে খুব দ্রুত ও অত্যন্ত কঠিন আঘাত হানা হবে। যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো হুমকি প্রত্যাশ্যা করে না বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
বিবিসি জানায়, ইরানের ওই ৫২ লক্ষ্যস্থল ১৯৭৯ সালে তেহরানে মার্কিন দূতাবাস দখল করে নেওয়ার পরবর্তী এক বছর ধরে যে ৫২ মার্কিন নাগরিককে জিম্মি করে রাখা হয়েছিল তাদের প্রতিনিধিত্ব করছে বলে জানান তিনি।
এদিকে ট্রাম্পের এই টুইটের কিছুক্ষণ পরই যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক হয়। নিজেদের ‘ইরান সাইবার সিকিউরিটি গ্রুপ হ্যাকার্স’ বলে পরিচয় দেওয়া হ্যাকাররা ওই ওয়েবসাইট হ্যাক করার দাবি করে।
আমেরিকান ফেডারেল ডিপোজিটরি লাইব্রেরি প্রোগ্রামের সাইটে পাঠানো বার্তায় লেখা ছিল, ‘এটি ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের বার্তা। এই অঞ্চলে আমাদের বন্ধুদের সমর্থন দেওয়া বন্ধ করব না আমরা : ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনতা, ইয়েমেনের নিপীড়িত জনতা, সিরিয়ার জনতা ও সরকার, ইরাকের জনতা ও সরকার, বাহরাইনের নিপীড়িত জনতা, লেবানন ও ফিলিস্তিনের প্রকৃত মুজাহিদিন প্রতিরোধ সব সময় আমাদের সমর্থন পাবে।’
ওয়েবপেজটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি বিকৃত ছবিও দেওয়া হয়েছে। তাতে ট্রাম্পকে মুখম-লে আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় দেখানো হয়েছে, যেখানে তার মুখ থেকে রক্তপাত হচ্ছে। ‘এটি ইরানের সাইবার সক্ষমতার একটি ক্ষুদ্র নমুনা,’ লিখেছে হ্যাকাররা।
৩৫ মার্কিন টার্গেটে নিশানা ইরানের
ইসরায়েলের তেলআবিবসহ মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫টি টার্গেটে হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইরান। শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে এমন হুমকি দেন ইরানের সিনিয়র এক কমান্ডার। তিনি ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরমান প্রদেশে রেভোল্যুশনারি গার্ড কোরের কমান্ডার জেনারেল গোলাম আলি আবু হামজে।
টাইমস অব ইসরাইলের খবরে বলা হয়, গোলাম আলি বলেছেন, পশ্চিমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট হলো হরমুজ প্রণালি। এখান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুলসংখ্যক ডেস্ট্রয়ার এবং যুদ্ধজাহাজ অতিক্রম করে। অনেক আগেই এখানে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটে নিশানা করেছে ইরান। তেলআবিবসহ এই অঞ্চলে মার্কিন ৩৫টি টার্গেট রয়েছে আমাদের সক্ষমতার অধীনে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হামলার হুমকির কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তেহরান। এ নিয়ে কথা বলেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। গতকাল রবিবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা একটি যুদ্ধাপরাধ। পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি শেষ হতে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।