সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :

জেএনইউ আক্রমণের মূল নিশানা ছিল মুসলিম ছাত্ররা : প্রত্যক্ষদর্শী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২০
  • ২৮৭ বার

ভারতের নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দিল্লির জহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি বা জেএনইউ-তে রোববার রাতে সশস্ত্র মুখোশধারী বাহিনী তাণ্ডব চালানোর পর অভিযোগের আঙুল উঠছে শাসক দল বিজেপির ছাত্র সংগঠনের দিকেই। আর ওই হামলার মূল নিশানা ছিল মুসলিম ছাত্ররা, দাবি এক প্রত্যক্ষদর্শীর।

ওই হামলার আগে-পরে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ভিডিও, ছবি ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট বিশ্লেষণ করে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম হামলাকারীদের বিজেপি সমর্থক বলেই চিহ্নিত করছে।

জেএনইউ-তে জখম হওয়া ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপকরাও সবাই বিভিন্ন বামপন্থী দলের, তারাও এই হামলার জন্য সরাসরি দায়ী করছেন বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-কে।

জেএনইউ-তে নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানাতে দিল্লি ছাড়াও কলকাতা-মুম্বাই-হায়দরাবাদসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এদিন প্রতিবাদ মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দিল্লির জেএনইউ-তে লাঠিসোঁটা, লোহার রড নিয়ে গুন্ডারা তাণ্ডব চালানোর পর এদিন ভোররাত পর্যন্ত দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে চলেছে ছাত্রছাত্রীদের তুমুল প্রতিবাদ।

বিক্ষোভরত ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি অধীনে থাকা দিল্লি পুলিশের প্রচ্ছন্ন মদতেই ক্যাম্পাসে এমন নারকীয় হামলা চালানো সম্ভব হয়েছে।

রাজনীতিবিদ যোগেন্দ্র যাদব জেএনইউ মূল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে যেমনটা বলছিলেন, ‘পুলিশই এই গুন্ডাদের সুরক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকিয়েছে।’

‘এতদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আদর্শগত হামলা চালানো হচ্ছিল, এখন শুরু হয়েছে শারীরিক আঘাত!’

জেএনইউ ছাত্র সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ঐশী ঘোষ এদিন জানান, ‘সবরমতী টি-পয়েন্টের সামনে গুন্ডারা লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আমার কপাল ফাটিয়ে দেয়।’

‘ছাত্ররা তক্ষুণি অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে হাসপাতালে না-পাঠালে খুব খারাপ কিছু হয়ে যেত।’

মারধর থেকে বাদ যাননি অধ্যাপকরাও। রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছনো সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট যেমন বলছিলেন, ‘অধ্যাপিকা সুচরিতা সেনকে ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে মাথায় থেঁতলে মারা হয়েছে।’

‘ফি কমানোর জন্য ছাত্রদের বৈধ আন্দোলন থামানোর জন্য সরকার আর কত নিচে নামবে?’, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

ওই হামলার প্রত্যক্ষদর্শী, জেএনইউ ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা ভারতী বিবিসিকে বলছিলেন, ‘গুন্ডারা লেডিজ হোস্টেলেও দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে। তাদের হাতে লাঠি, কুড়াল সবই ছিল – বিশেষ করে আক্রমণের নিশানা করা হয়েছিল মুসলিম ছাত্রদের।’

‘পেরিয়ার হোস্টেলের ১৫৬ নম্বর রুমে কাশ্মিরি ছাত্ররা ছিল – ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে ওদের দরজা ভাঙা হয়, ভয়ে ওরা ব্যালকনি থেকে লাফ দেয়!’

এদিকে, ‘ইউনিটি এগেইন্সট লেফট’, ‘ফ্রেন্ডস অব আরএসএস’ ইত্যাদি নামধারী হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে হামলার প্রস্তুতির নানা প্রমাণ মিলেছে, সেগুলো এদেশের সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরালও হয়ে উঠেছে।

সে সব প্রমাণ সংকলন করে ভারতের অনেক গণমাধ্যমই আক্রমণকারীদের বিজেপি সমর্থক বলে চিহ্নিত করছে – যদিও তাদের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ) আবার পাল্টা দুষছে বামপন্থীদেরই।

এবিভিপি-র সাধারণ সম্পাদক নিধি ত্রিপাঠী দাবি করেছেন, ‘আমাদের সমর্থকরা গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রেশনের শেষ দিনে নাম নথিভুক্ত করাতে গেলে বামপন্ধী গোষ্ঠীর দলবল হোস্টেলে ঢুকে তাদের বেধড়ক পেটায়।’

‘এই হামলা তারাই চালিয়েছে, যারা চায় না ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরুক’, এক রেকর্ড-করা ভিডিও বার্তায় বলেছেন তিনি।

এদিন সকালে দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে দাঁড়িয়ে দিল্লি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আভাদেও হাবিব বিবিসিকে বলছিলেন, ‘গত মাসে জামিয়াতে ঢুকে পুলিশ নির্যাতন চালানোর পর এবার আক্রমণ জেএনইউ-তে, যা আর মেনে নেয়া সম্ভব নয়।’

দিল্লির আম্বেদকর ইউনিভার্সিটির ছাত্রী অদিতিও বলছিলেন, ‘জেএনইউ ক্যাম্পাস থেকে অবিলম্বে পুলিশ হঠাতে হবে!’

এদিকে, জেএনইউ-র প্রতি সংহতি জানাতে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা হায়দরাবাদের ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটিও এদিন ছিল প্রতিবাদে উত্তাল।

প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে মুম্বাই আইআইটি বা আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতেও।

সূত্র : বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com