মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ অপরাহ্ন

ন্যায়বিচারের আশা ঝুলে আছে ৯ বছর

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২০
  • ২৬৭ বার

এপারে বাংলাদেশ, ওপারে ভারত। মাঝে সীমান্তে উঁচু কাঁটাতারের বেড়া। তাতে হাত-পা ছড়িয়ে উল্টো ঝুলে আছে ছোট্ট একটি মেয়ে। লাল জামা গায়ে, মাথার চুল ঝুঁটি বাঁধা। ২০১১ সালের এক সকালে এমন একটি ছবি কাঁপিয়ে দিয়েছিল বিশ্ববিবেক। এর পর পেরিয়ে গেছে ৯ বছর। কিশোরী ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচারের আশাও যেন অলঙ্ঘনীয় এক কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে আছে।

সীমান্তে ফেলানী হত্যার ৯ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। দীর্ঘ এ সময়েও মেয়ে হত্যার ন্যায়বিচার না পেয়ে হতাশ তার বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম।

ফেলানীর বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী গ্রামে। সে ছিল নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগমের বড় সন্তান। বাবার সঙ্গে সে ভারতে কাজ করত। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে ৯৪৭ নম্বর আন্তর্জাতিক ৩ নম্বর সাব পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাঁটাতার ডিঙিয়ে বাবার সঙ্গে ভারত থেকে দেশে ফিরছিল ফেলানী। এ সময় টহলরত চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে।

আজ পারিবারিকভাবে পালন করা হবে ফেলানীর নবম মৃত্যুবার্ষিকী। আয়োজন করা হয়েছে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। গতকাল এ বিষয়ে বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গিয়েছি, কিন্তু ৯ বছরেও বিচার পেলাম না।

নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার বিএসএফের ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারকাজ শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করেন আদালত। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায়বিচারের আশায় পত্র দেন। ভারতের সুপ্রিমকোর্টে পরপর দুটি রিটও করা হয়। এর পর ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনঃবিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা একাধিকবার স্থগিত হয়।

২০১৫ সালে বাংলাদেশের আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) আরও একটি ক্ষতিপূরণ মামলা করে। ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সে দেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫ লাখ রুপি দিতে অনুরোধ করে। এর জবাবে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়। এর পর ২০১৬ ও ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য হলেও তা হয়নি এখনো।

ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, কুড়িগ্রাম জেলা জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে বিচারাধীন ফেলানীর পরিবারের পক্ষ থেকে আনীত রিটে বিভিন্ন পক্ষ ইতোমধ্যে জবাব দাখিল করেছে বলে জেনেছি। ফলে এখন রিটটির চূড়ান্ত শুনানি হতে পারে বলে মনে হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com