কোরআন শরিফে আল্লাহ বলেছেন, তোমরা নামাজ কায়েম কর, জাকাত প্রদান কর, আর নিজেদের জন্য কল্যাণকর যা কিছু আগেভাগে পাঠাবে তা আল্লাহর নিকট পাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সব কাজকর্ম দেখছেন (সূরা বাকারা-১১০)।
নবী যুগের মানুষেরা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে জাকাত আদায় করেছেন। আরববাসীর নিত্যসঙ্গী ছিল অভাব। অভাবের তাড়নায় দেবতাদের পর্যন্ত চেটে খেয়েছেন, পশুর রক্ত, চামড়া, হাড় কিছুই বাদ পড়ত না তাদের খাদ্য তালিকা থেকে। নবী (সা)-এর জাকাত ব্যবস্থার ছোঁয়ায় মাত্র কয়েক বছরে অর্থনৈতিক এমন পরিবর্তন এসেছে আরবে জাকাত নেওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যেত না। জাকাতের পূর্ণ সফলতা তখন মুসলমানরা ভোগ করেছেন। কারণ খোলাফায়ে রাশেদা ও তাদের পরবর্তী যুগে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জাকাতবিষয়ক কার্যক্রমের জন্য স্বতন্ত্র ৮টি দপ্তর ছিল। দুর্নীতিমুক্ত কঠোর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জাকাত আদায় ও উপযুক্ত স্থানেই বণ্টন হতো (ইসলামী অর্থনীতি ১৭০)। আজকের আধুনিক
বিশ্বে বিভিন্ন মুসলিম দেশে সরকারি আইন ও প্রশাসনিকভাবে জাকাত আদায় করা হয়। সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, সুদান, কুয়েত, ইরান, পাকিস্তান ও ইয়ামেনে এ ব্যবস্থা চালু আছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতেও মুসলিম প্রধান এলাকায় সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন পরিকল্পিতভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টন করে। বাংলাদেশের সরকার বাস্তবমুখী উদ্যোগ ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করলে দরিদ্রজনগোষ্ঠীর স্থায়ীভাবে অভাব মুক্তির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক চলমান ধারায় প্রাথমিক সংস্কার করেও স্থায়ী দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। জাকাতের অধিকারী আট শ্রেণির লোককে আল্লাহ বলেছেন- সদকা তো কেবল গরিব, মিসকিন এবং সদকা আদায়ে নিযুক্তদের জন্য। যাদের ধর্মের প্রতি চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্যও। দাসমুক্তি ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথ ও মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান, আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় সূরা তওবা-৬০)।
এ আয়াতের ভিত্তিতে বিত্তবানরা নিজস্ব এলাকায় গরিব অসহায় চিহ্নিত করে স্বাবলম্বী হিসাবে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করবে। পঞ্চাশ, একশ টাকা করে হাজার মানুষকে না দিয়ে তিন-চারটি পরিবারের স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করবে। তাদের জন্য রিকশা, ভ্যান, নৌকা, সেলাই মেশিন, গাভী, ছাগল বা এ জাতীয় উপকরণ কিনে দেবে। তা হলে দেখা যাবে একজন বিত্তবানের প্রচেষ্টায় প্রতি পাঁচবছরে ২০-২৫টি পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। যারা কাজ করতে অক্ষম যেমন : বৃদ্ধ, পঙ্গু, রোগী তাদের এলাকাভিত্তিক কল্যাণ ফান্ড গঠন করে নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তা ছাড়া মানব কল্যাণমূলক কাজ যেমন মেধাবী অথচ গরিব ছাত্রের উন্নত শিক্ষার জন্য স্কুল মাদ্রাসা কলেজ ও পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডিসপেনসারি নির্মাণ করা। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, সিডর, আইলা তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্তদের সাহায্য ও পুনর্বাসনে জাকাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। দেশের সব জাকাত প্রদানকারীর কাছে প্রত্যাশা থাকবে দুঃখীদের স্থায়ী কল্যাণের ব্যবস্থা করুন। ইসলামের মৌলিক চেতনা জীবনে বাস্তবায়িত করুন।
লেখক : সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম