এতকাল মন্ত্রীদের ভাই বা আত্মীয়, পিএস কিংবা এপিএসদের নানা প্রতাপ ও দৌরাত্ম্যের কথা জানা যেত। কিন্তু এবার মন্ত্রীর স্ত্রী ও তার আত্মীয়দের সম্পর্কে একই রকম ক্ষমতা অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে তিনজন বিনা টিকিটে এসি কক্ষে যাত্রা করছিলেন। পরে শোভন শ্রেণির টিকিট কেটে এসিতে থাকতে চেয়েছেন। বেরসিক টিটিই তাদের খায়েশ পূরণে বাদ সেধেছিলেন। কিন্তু মন্ত্রীর স্ত্রী বলে কথা! তার প্রতাপ এতই বেশি যে, সেই টিটিই যাত্রা শেষ হতে না হতেই মোবাইল ফোনবার্তার মাধ্যমে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ পেয়ে গেলেন। সংশ্লিষ্ট ডিসিও নিজেও অত্যন্ত করিৎকর্মা। মন্ত্রীর স্ত্রীর নির্দেশ যে মন্ত্রীর চেয়েও বড়, তা তিনি জানতেন। তাই আদেশ পালনে দেরি করেননি। তবে গণমাধ্যম পেছনে লেগেই ছিল। এবার আমাদের সময়ে প্রকাশিত হলো ‘ভাবি সিন্ডিকেট নামে পরিচিত মন্ত্রীর ভার্যার বিভিন্ন অপকর্মের কথা।
মন্ত্রী মহোদয় স্ত্রীর কেলেঙ্কারিতে বিব্রত বোধ করেছেন, সন্দেহ নেই। ঘটনার চেয়েও বেশি সমস্যা হলো মিষ্টি কথার প্রলেপ দিয়ে এ ঘটনা ঢাকা সম্ভব হয়নি, বরং সন্দেহবাতিকগ্রস্ত গণমাধ্যম কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের করে ফেলেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এর স্বাভাবিক পরিণতি হলো মন্ত্রীর পদত্যাগ। কিন্তু বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলেও এ রকম কোনো মূল্যবোধ তৈরি হয়নি। মন্ত্রী নন, প্রথমে নন্দ ঘোষ হিসেবে ঘটনায় সম্পৃক্ত টিটিই শফিকুল ইসলামকে বলি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এতে কাজ না হওয়ায় এখন তাকে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বরখাস্ত করেছেন যে ডিসিও, তাকেই বলির পাঁঠা বানানোর চেষ্টা চলছে। এভাবে যদি এতবড় ঘটনা চাপা দেওয়া হয়, তা হলে তা সরকার ও দেশের জন্য ভালো হবে না বলেই আমরা মনে করি।
বর্তমান সরকার তৃতীয় মেয়াদ শেষ করতে চলেছে। এ সরকার গত দশ বছরে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। দেশের অর্থনীতি ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তিত হয়েছে এবং হচ্ছে। তবে এবার সরকারের কাছে জনগণের কামনা হলো প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সচল ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা। তা হলেই নাগরিক অধিকার ঠিকভাবে রক্ষিত হবে। ফলে আমাদের ধারণা, এদিক থেকে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের পদত্যাগ সরকারের ভাবমূর্তি অক্ষুণœ রাখত। এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া যায়নি এবং যাবেও না। তাই জনপ্রত্যাশার দিকে নজর রেখে একটি ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে। টিটিই বা তার ঊর্ধ্বতন কোনো ব্যক্তি নন, এ দায় নিয়ে সরে যেতে হবে স্বয়ং মন্ত্রীকেই। আমরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ কামনা করি।