আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার এবং সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা জুলুম নির্যাতন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হুমকি-ধামকি ও অপহরণের মাধ্যমে প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদেরকে এলাকা ছাড়া করা হচ্ছে। হামলা চালিয়ে আহত করা হচ্ছে।
বুধবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মহিলা সংরক্ষিত আসন-৬ এর ১৬, ১৭ ও ২১নং ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ফজলে নুর তাপসের সমর্থকরা জোর করে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ধরে এনে প্রার্থীতা বাতিলে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপসের লোকজন বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। কথা না শুনলে তাদের বাসাবাড়ীতে পুলিশ পাঠিয়ে পরিবারের সদস্যদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে আবারো ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের মতোই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও প্রহসনের নির্বাচন করতে চায় বর্তমান অবৈধ শাসকগোষ্ঠী। বর্তমান জনবিচ্ছিন্ন সরকার তাদের কাঙ্খিত একদলীয় শাসনকে চিরস্থায়ী রুপ দিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকে ধারাবাহিকভাবে মিথ্যা, উদ্ভট এবং বানোয়াট মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার ও জুলুম নির্যাতন করছে, এখন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদেরও নির্বাচন থেকে সরাতে জুলুম শুরু করেছে।
রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে সারাদেশে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার এবং সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শণ দেশকে এক চরম নৈরাজ্যকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এধরণের নৈরাজ্যকর অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনদের প্রতিহিংসার রাজনীতির নির্মম শিকার হয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ প্রায় দুই বছর ধরে কারাবন্দি। সরকারী ষড়যন্ত্রে তাকে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাকে পিজি হাসপাতালের কারা প্রিজনে রেখে সুচিকিৎসা না দিয়ে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। তাকে সম্পূর্ণ অচল করে দেয়া হয়েছে। কোনো কিছুই খেতে পারছেন না। কিছু মুখে দিলেই বমি হয়ে উঠে যাচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশের কারণে চিকিৎসকদের জরুরী কল দিলেও তারা চিকিৎসা দিতে দেশনেত্রীর রুমে যাচ্ছেন না। তার শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। বাস্তবে তার অবস্থা মরনাপন্ন। এক্ষুনি জরুরি ভিত্তিতে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসা না করালে জীবনহানির আশঙ্কা করছি আমরা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে-শেখ হাসিনা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পৃথিবী থেকে বাদের খাতায় রাখতে উঠেপড়ে লেগেছেন।
রিজভী আরো বলেন, এই সরকার মনে করে বাংলাদেশের মানুষের প্রাণশক্তি বেগম খালেদা জিয়া জনগণের মাঝে সক্রিয় থাকলে অপকর্ম করা যাবে না। লুটপাট করা যাবেনা। দেশকে বিদেশীদের কাছে বিক্রি করা যাবে না। ভোট ডাকাতি করা যাবে না। একারণে একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আর এই মিথ্যা মামলা নিয়ে তারা গভীর চক্রান্ত ও প্রহসন করছে। দুটি মিথ্যা মামলার রায়ে সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে তাঁকে সাজা দিয়ে কারাগারে বন্দী রেখে হত্যা চেষ্টা চলছে। আমি বলবো, মিথ্যা আর প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসুন। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা বন্ধ করুন। মাদার অফ ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিন। দেশনায়ক তারেক রহমানের নামে যত মিথ্যা মামলা দিয়েছেন প্রত্যাহার করুন।
নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডাঃ আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ফরহাদ হোসেন আজাদ, আকম মোজাম্মেল হক প্রমুখ।