মসজিদ মহান আল্লাহ তায়ালার ঘর। এই ঘর আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়ে থাকে। বর্তমানে মসজিদ নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষ সভাপতি-সেক্রেটারি হওয়ার জন্য হামলা-মামলা পর্যন্ত করছে। অনেকে দায়িত্বে এসে মসজিদের নানা কাজ করে মানুষের নজরে আসার চেষ্টা করছে। অনেকে আবার মসজিদের টাকা নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে। হিসাবের তোয়াক্কা না করে যার যেমন মন চায়, তেমনি করে তা খরচ করছে। মসজিদের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের মসজিদ উন্নয়নের কাজ করার পাশাপাশি মসজিদ পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং আদবের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।
মসজিদ শব্দটি আরবি। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সিজদার স্থান। পরিভাষায় ওই স্থানকে মসজিদ বলা হয়, যার মালিক এই বলে বানিয়ে দিলো যে, আমি ওটাকে মসজিদ বানালাম এবং ওই স্থানে যাওয়ার রাস্তাও পৃথক করে দেয় এবং নামাজ পড়ার জন্য অনুমতি দিয়ে দেয়। যদি একজন মুসলমানও নামাজ পড়ে তাহলে মালিকের মালিকানা চলে যাবে। (কাওয়াইদুল ফিকহ-৪৮৩)
মসজিদসমূহ জান্নাতের বাগান : মসজিদ আল্লাহর ঘর এবং কিয়ামত দিবসে মসজিদ ছাড়া পুরো পৃথিবী বিলীন হয়ে যাবে। আর এই মসজিদসমূহ একটি অপরটির সাথে মিলিত হয়ে এক স্থানে অবস্থান করবে এবং এগুলো জান্নাতে চলে যাবে। মহানবী সা: হাদিসে ইরশাদ করেন, যখন তোমরা জান্নাতের বাগানসমূহ অতিক্রম করবে তখন তার ফলসমূহ ভোগ করো, কেউ একজন জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতের বাগান কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, মসজিদসমূহ জান্নাতের বাগান। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হলো হে আল্লাহর রাসূল! এর ফল ভোগ করার অর্থ কী? উত্তরে তিনি বলেন, মসজিদে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লালাহু আল্লাহু আকবার’।
মসজিদ নির্মাণের গুরুত্ব : যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং তদনুযায়ী কাজ করে তারাই মসজিদ নির্মাণ করে থাকে। ‘কেবল তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহ রক্ষণাবেক্ষণ করবে, যারা ঈমান আনে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি এবং নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় ও আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। তাদেরই সৎপথপ্রাপ্তির আশা আছে।’ (সূরা তওবা-১৮) হজরত উসমান রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।’
মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে যারা : আমাদের দেশে দেখা যায়, যারা এক সময় চোর, ডাকাত, মদপানকারী, সন্ত্রাসী, নিয়মিত কবিরা গুনাহে লিপ্ত ছিল এবং বর্তমানে যারা ফাসিকে জড়িত শ্রেণীর ব্যক্তিরা রয়েছে তারাই মসজিদে দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে। আল্লাহ তায়ালা মসজিদে দায়িত্ব পালন করার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য ও ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এমন হতে পারে না যে, মুশরিকরা আল্লাহর মসজিদসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ করবে যখন তারা নিজেদের কুফরির স্বীকৃতিদাতা। তাদের সব কর্ম নিষ্ফল এবং তারা জাহান্নামে স্থায়ীভাবে থাকবে।’ (সূরা তওবা-১৭)
ক. পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া : মসজিদে যারা দায়িত্ব পালন করবে, তাদেরকে পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে হবে যা আল্লাহ তায়ালার দেয়া শর্ত। ঈমানদারগণ ছাড়া অন্য ধর্মের মানুষ আল্লাহর ঘর মসজিদ সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান রাখে না, সম্মান করতে জানে না এবং মসজিদের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে জানে না। স্বভাবতই ঈমানদারদের মসজিদের প্রতি টান বেশি থাকে।
খ. পরকালের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হওয়া : পরকালের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করাই ঈমান। আখিরাতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস না থাকলে পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যায় না। তাই যিনি মসজিদের দায়িত্ব পালন করবে তাকে অবশ্যই আখিরাতের প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসের মাধ্যমে পূর্ণ ঈমানদার হতে হবে। কাফের ও মুশরিকরা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে না।
গ. আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় না করা : যিনি মসজিদের দায়িত্ব পালন করবেন, তিনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করতে পারবেন না। দুনিয়ার কোনো মানুষকে ভয় করে অথবা মানুষের তোষামোদি করে তাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে এমন ধরনের মানুষ মসজিদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। একমাত্র কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী মসজিদ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রিত হবে।
গ. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি হওয়া : পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতসহকারে পড়া প্রত্যেক সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের জন্য ফরজ। মসজিদের যিনি দায়িত্ব পালন করবেন, তাকেও আমলদার অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায়কারী হতে হবে।
মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ : যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং তদনুযায়ী কাজ করে তারাই মসজিদ নির্মাণ ও এর পরিচালনা করবে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যখন কোনো ব্যক্তিকে মসজিদ নির্মাণ ও পরিচর্যা করতে দেখো, তখন তোমরা তার ঈমান সম্পর্কে সাক্ষ্য দিতে পারো। কারণ আল্লাহ তায়ালা বলেন, কেবল সেই ব্যক্তিই আল্লাহর মসজিদসমূহের আবাদ করবে, যে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে।’
মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা : মসজিদ পরিষ্কার করলে তার জন্য অশেষ সওয়াব নির্ধারিত রয়েছে বলে হাদিসে এসেছে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু বিদূরিত করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।’ (ইবনে মাজাহ)
মসজিদ আল্লাহর ঘর। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে মসজিদের আদবের সামান্যতমও খেলাফ হয়। যেহেতু মসজিদসমূহ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম। তাই, আল্লাহর এই নিদর্শনসমূহের সম্মান রক্ষা করা প্রতিটি ঈমানদার মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
লেখক : সহকারী মাওলানা, চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম