সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন

ইসলামে পোশাকের মূলনীতি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২
  • ১২২ বার

নারী-পুরুষের সৌন্দর্যের অন্যতম মাধ্যম হলো পোশাক। ইসলামী শরিয়তে পোশাকের ব্যাপারে রয়েছে চমৎকার ও যৌক্তিক মূলনীতি। ইসলামে নির্দিষ্ট কোনো বিশেষ পোশাক নেই, নেই কোনো নির্দিষ্ট ডিজাইন বা আকৃতি। বিভিন্ন দেশ, অঞ্চল, আবহাওয়া ও মৌসুমভেদে পোশাকের রয়েছে ভিন্নতা এবং স্বাধীনতা। তবে ইসলামী শরিয়তে পোশাকের কিছু মৌলিক নীতি ও সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, কোন ধরনের পোশাক গ্রহণীয় এবং কোন ধরনের পোশাক বর্জনীয়। মুসলিম নারী-পুরুষের জন্য পোশাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে এসব নীতিমালা এবং সীমারেখা মেনে চলা জরুরি।

পোশাক খুব পাতলা না হওয়া : পোশাক এমন পাতলা ও মিহি হতে পারবে না যাতে শরীর দেখা যায় এবং সতর প্রকাশ পেয়ে যায়। যেমন- পাতলা সুতির কাপড়, নেটের কাপড় ইত্যাদি। অবশ্য পাতলা কাপড়ের নিচে সেমিজ জাতীয় কিছু ব্যবহার করলে তা জায়েজ হবে। এ প্রসঙ্গে হজরত আলকামা ইবনে আবু আলকামা তার মা থেকে বর্ণনা করেন, একবার হাফসা বিনতে আবদুর রহমান তার ফুফু উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা রা:-এর কাছে এলেন। তখন তার পরনে ছিল একটি পাতলা ওড়না। হজরত আয়েশা রা: তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং একটি মোটা ওড়না পরিয়ে দিলেন।

পোশাক আঁটসাঁট না হওয়া : পোশাক এমন আঁটসাঁট ও ছোট মাপের হতে পারবে না, যা পরলে শরীরের সাথে লেপ্টে থাকে এবং দৈহিক গঠন ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু ইয়াজিদ মুযানি রা: বলেন, হজরত ওমর মহিলাদেরকে কাবাতি (মিসরে প্রস্তুতকৃত এক ধরনের সাদা কাপড়) পরতে নিষেধ করতেন। লোকেরা বলল, এই কাপড়ে তো ত্বক দেখা যায় না। তিনি বললেন, ত্বক দেখা না গেলেও দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফুটে ওঠে।

পোশাকে বিজাতিদের অনুসরণ না হওয়া : পোশাকের ক্ষেত্রে কাফের-মুশরিক ও ফাসেক লোকদের অনুসরণ-অনুকরণ সাদৃশ্য অবলম্বন করা যাবে না। বিশেষত সেসব পোশাকের ক্ষেত্রে যা অমুসলিমদের বৈশিষ্ট্য এবং তাদের নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা: বলেন, নবী করিম আমাকে উসফুর (ছোট ধরনের লাল বর্ণের ফুল গাঠ) দ্বারা রাঙানো দু’টি কাপড় পরতে দেখে বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে কাফেরদের পোশাক। অতএব তুমি তা পরিধান করো না।’

অন্য হাদিসে নবী করিম সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদেরই দলভুক্ত’।
পোশাকে অহঙ্কার প্রদর্শন না হওয়া : পোশাকের মাধ্যমে অহঙ্কার ও লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ উদ্দেশ্যে হওয়া যাবে না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে সুখ্যাতি ও প্রদর্শনীর পোশাক পরবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তাকে লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন।’ অন্য হাদিসে নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি অহঙ্কারবশত মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দিকে দৃষ্টিপাত করবেন না।’

পুরুষ ও নারীর পোশাক এক রকম না হওয়া : পুরুষদের জন্য মেয়েলি পোশাক এবং নারীদের জন্য পুরুষদের পোশাক পরা এবং একে অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করা নিষেধ। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সা: সেসব পুরুষের প্রতি লানত করেছেন, যারা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে (তাদের মতো আকৃতি, তাদের পোশাক ও তাদের চাল-চলন গ্রহণ করে)। আর সেসব নারীর প্রতিও লানত করেছেন, যারা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নারীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারিণী নারীকে নবী সা: লানত করেছেন।

পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ পোশাক : পুরুষের জন্য তিন ধরনের কাপড় পরিধান করা হারাম এবং কবিরা গুনাহ।
১. পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় পরিধান করা হারাম। নবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রেশমি কাপড় পরিধান করবে, কিয়ামতের ময়দানে তার জন্য কোনো অংশ থাকবে না।’

২. পুরুষদের মহিলাদের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। যেসব পুরুষ মহিলাদের পোশাক পরিধান করে তাদের জন্য আল্লাহর লানত রয়েছে মর্মে হাদিসে এসেছে।
৩. অহঙ্কারবশত পুরুষরা পায়ের গিরার নিচে কাপড় পরিধান করা।

মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ পোশাক : মহিলাদের জন্যও তিন ধরনের কাপড় পরিধান করা হারাম।
১. মহিলারা পুরুষের অনরূপ কাপড় পরিধান করা।
২. মহিলাদের এমন পোশাক পরিধান করা, যা পরপুরুষদের আকর্ষণ করে।
৩. বর্তমানে প্রচলিত বিভিন্ন বিজাতীয় পছন্দের যৌন উত্তেজক খোলামেলা পোশাক পরিধান করা।

অপচয় ও বিলাসী পোশাক না হওয়া পোশাক পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে অপচয় ও অপব্যয় করা, বিলাসিতা করার জন্য বা শখের বশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক ক্রয় করা অথবা মাত্রাতিরিক্ত উচ্চমূল্যেও পোশাক ক্রয় করা নিষেধ। হজরত আমর ইবনে শোয়াইব তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা খাও, পান করো, অন্যদের দান করো এবং কাপড় পরিধান করো যে পর্যন্ত অপচয় ও অহঙ্কার করা না হয়।

নারীর পোশাক গোপন রাখা : নারীর পোশাকও পর্দার আওতাভুক্ত। তাই গায়রে মুহাররাম ও পরপুরুষের সামনে অলঙ্কার ও পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা যাবে না। যাতে তাদের প্রতি পুরুষরা আকৃষ্ট হয়। ইমাম জাহাবি রা: বলেন, যেসব কর্ম নারীর ওপর লানত করে তা হলো অলঙ্কার ও আকর্ষণীয় পোশাকের সৌন্দর্য প্রকাশ করা ও ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সুগন্ধি ব্যবহার করা। প্রাচীন জাহেলি যুগে নারীরা নির্লজ্জ সাজসজ্জার সাথে নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াত।

পুরুষের পোশাক টাখনুর নিচে না পরা : পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরা নিষেধ এবং তা কবিরা গুনাহ। হজরত আবু হুরায়রাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘কাপড়ের যে অংশ টাখনুর নিচে যাবে তা জাহান্নামে জ্বলবে’।

হজরত আবু হুবাইব ইবনে মুগাফফাল গিফারি রা: মুহাম্মদ কুরাশিকে লুঙ্গি টেনে চলতে দেখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি নবী সা:-কে বলতে শুনেছি, যে অহঙ্কারবশত পায়ের নিচে কাপড় ফেলে চলবে সে জাহান্নামে গিয়ে এভাবে চলবে।

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামী শরিয়তে পোশাক কেমন হবে তার নীতিমালা এবং সীমারেখা সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে। এসব নীতিমালার লঙ্ঘন এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ-অনুকরণ করা যাবে না। ব্যত্যয় ঘটলে দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

লেখক : সহকারী মাওলানা, চরণদ্বীপ রজভিয়া ইসলামিয়া মাদরাসা, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com