৬০ হাজার রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীকে কমিউনিটি সেবা সম্পর্কিত দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ প্রদান করবে জাতিসঙ্ঘের ‘বিশ্ব খাদ্য সংস্থা’ (ডব্লিউএফপি)। এ জন্য ব্যয় হবে ২৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে অনুদান চুক্তির শর্তানুযায়ী এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
এ জন্য ডব্লিউএফপির সাথে খুব শিগগরই একটি ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে। চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য আগামী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি সার-সংক্ষেপ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ক্রয় সংক্রান্ত বৈঠকে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ২৯৭ কোটি টাকার মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা খাতে ব্যয় হবে ১৭ কোটি ৩০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। সাধারণ পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মাধ্যমে ক্যাম্পের ভূমিক্ষয় রোধে ৯০ হেক্টর জমিতে দেশী প্রজাতির ঘাস রোপণ ও সংরক্ষণের সহায়তা কাজ, ক্যাম্পের পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ৬ কিলোমিটার ঢাল সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সহায়তা কাজে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিয়োগ করা হবে।
সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট প্রায় সাত লক্ষাধিক বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। তারা কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় স্থাপিত ক্যাম্পে বসবাস করছে। এসব রোহিঙ্গার মধ্যে বিপুলসংখ্যক তরুণ রয়েছে যাদেরকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত না করলে সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ডে (যেমন-মাদক, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি) লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদেরকে উৎপাদনশীল কাজে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ক্যাম্পের মৌলিক সুবিধাদির উন্নয়ন করা, সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এই প্রকল্পটি প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়। ’
প্রকল্পটির মুখ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ক্যাম্পের বিদ্যমান সেবাগুলোর মান উন্নতকরণ ও জনগণের রিসাইল্যান্স বৃদ্ধি করাই প্রকল্পটির মুখ্য উদ্দেশ্য।’
সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘প্রকল্পটির মাধ্যমে ক্যাম্পের ভূমিক্ষয় রোধে ৯০ হেক্টর জমিতে দেশী প্রজাতির ঘাস রোপণ ও সংরক্ষণের সহায়তা কাজ, ক্যাম্পের পরিবেশ-পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় ৬ কিলোমিটার ঢাল সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের সহায়তা কাজে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিয়োগ করা হবে।
এ ছাড়া ২ দশমিক ৪ কিলোমিটার পায়ে চলার পথ ও বাঁশের সাঁকো নির্মাণ, পুনর্বাসন, সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজও সম্পন্ন করা হবে। ৬০ হাজার রোহিঙ্গা তরুণ ও তরুণীকে কমিউনিটি সেবা প্রদান সম্পর্কিত ডব্লিউএফপি কর্তৃক ব্যবহৃত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদান প্রভৃতি কাজ সম্পাদন করা হবে। প্রকল্পটির মেয়াদ তিন বছর (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত)।
জানা গেছে, প্রকল্পটির কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-ডব্লিউডি-০১ এ বর্ণিত কমিউনিটি ওয়ার্কফেয়ার অ্যান্ড সার্ভিস সাপোর্ট কর্মকাণ্ডের জন্য ৩০৫ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রাণালয়ের সার-সংক্ষেপে এ সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে, ‘প্রকল্পটি বাস্তব কাজ সম্পাদনের জন্য জাতিসঙ্ঘের কোনো অঙ্গসংস্থা বা কোনো এনজিওকে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সংস্থান রাখা হয়েছে। এ প্রকল্পে উপকারভোগীদের কাজের বিনিময় অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নগদ অর্থ প্রদানের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থা কক্সবাজারে অবস্থিত ক্যাম্পগুলোয় রোহিঙ্গাদের ‘ই-ভাউচার’ এর মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে থাকে। এ বিষয়ে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার অভিজ্ঞতা, সামর্থ্য ও প্রয়োজনীয় বুথ স্থাপন ইতোমধ্যে রয়েছে। তাই এ বিষয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার কাছে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাব আহবান করে। পরবর্তীতে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা সাড়ে ৩ কোটি মার্কিন ডলারের একটি প্রস্তাব গত ২৭ অক্টোবর দুর্গোগ মন্ত্রণালয়ের জমা দেয়।’
এই প্রস্তাবের ব্যয় বিভাজনে উল্লেখ করা হয়, ‘স্টাফ ও পার্সোনাল কাজে ব্যয় করা হবে ১৭ কোটি ৩০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। জেনারেল অপারেটিং কস্ট ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। বিভিন্ন দ্রব্যাদি ও সেবা খাতে ২৩৯ কোটি ৭৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কো-অপারেটিং পাটনার্স খাতে ২২ কোটি ৬৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা এবং ইনডাইরেক্ট কস্ট খাতে ধরা আছে আরো ১১ কোটি ৪২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। মোট ব্যয় হবে ২৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।’
জানা গেছে, আগামী বুধবার ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে।