সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

রিজিক বৃদ্ধির কিছু উপায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২
  • ১১১ বার

এই পৃথিবীতে মানুষের যত দৌড়ঝাঁপ ও কর্মতৎপরতা তার সবই রিজিককে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়। রিজিক অর্জন করার জন্য মানুষ দিনরাত হার খাটুনি খাটে ও ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করে। আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করার সাথে সাথে বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়।

রিজিককে দুই প্রকারে বিভক্ত করা যায় : এক প্রকার হলো পানাহার ও ধন-সম্পদের সাথে সম্পৃক্ত। অন্য প্রকার হলো মন-মানসিকতা ও অভ্যন্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট। নেককার স্ত্রী, অনুগত সন্তান-সন্ততি, সুস্থতা, আল্লাহর ইবাদত করার তৌফিক প্রাপ্তি, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, মান-মর্যাদা, পদ-পদবি, সম্মান ও খ্যাতি প্রভৃতি শেষোক্ত প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। উভয় প্রকার রিজিক বৃদ্ধি পায় এমন কিছু উপায় কুরআন হাদিসের আলোকে আমরা এখানে উল্লেখ করছি।

তাকওয়া অবলম্বন : রিজিক বৃদ্ধির উপায়গুলোর মধ্য থেকে সবার আগে অবস্থান করে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। মানুষ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হয়। সমস্যাসঙ্কুল পরিস্থিতির শিকার হয়। অনাহার-অর্ধাহারের সম্মুখীন হয়। অভাব-অনটন, দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ লোকদের ওপর চেপে বসে। অতিশয় গরম, প্রচণ্ড শীত, অনাবৃষ্টি ও অতিবৃষ্টি মানুষের জীবনকে নাকাল করে দেয়। অনেক সময় তারা এমন বালা-মুসিবতের শিকার হয় যা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পায় না। পরিস্থিতির প্রতিকূলতার কারণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও দিশেহারা হয়ে যায়। যদি কোনো ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে বা মহান আল্লাহর আজাব-গজবকে ভয় করে এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে, তাহলে সে সব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার জন্য রিজিকের ব্যবস্থাও হতে পারে। এ মর্মে আল কুরআনে এসেছে- ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন।’ (সূরা তালাক, আয়াত : ৩-৪)

ক্ষমা প্রার্থনা করা : মহীয়ান আল্লাহর দরবারে অপরাধ ও গুনাহ খাতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি ও স্খলনের জন্য অনুতাপ প্রকাশ করা বান্দাহর রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আল্লাহ তায়ালার কাছে আপন কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হলে এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি বান্দাহর প্রতি দয়া ও করুণা করেন। তার ওপর অফুরন্ত নেয়ামত বর্ষণ করেন। তার সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদে বরকত দান করেন। বান্দাহর জীবনকে সুখী ও সমৃদ্ধ করে দেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।’ (সূরা নুহ, আয়াত : ১১-১৩)

বিয়ে করা : বহু লোক বিয়ে করতে কেবল এ কারণে বিলম্ব করে যে, আরেকটু স্বাবলম্বী হয়ে নিই। আরেকটু ধনী হয়ে নিই। তারা ভাবে, এখন বিয়ে করলে স্ত্রীকে খাওয়াব কী? পরাব কী? অথচ বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সচ্ছলতা লাভের অন্তরায় নয়, বরং সহায়। কুরআন-হাদিসে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে সচ্ছলতা লাভের অন্যতম উপায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিয়েহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা নূর, আয়াত-৩২)

চারিত্রিক নিষ্কলুষতা অর্জন করার জন্য যে ব্যক্তি বিয়ে করবে তাকে মহান আল্লাহ সাহায্য করবেন মর্মে হাদিসে প্রতিশ্রুতি এসেছে। ‘হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি এমন যাদের প্রত্যেককে সাহায্য করা মহান আল্লাহ নিজের ওপর অপরিহার্য করে নিয়েছেন। আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদ, যে বিয়েকারী চারিত্রিক পবিত্রতার উদ্দেশ্যে বিয়ে করে, যে মুকাতাব গোলাম মুক্তিপণের অর্থ আদায়ের ইচ্ছা রাখে।’ (সুনানে আন-নাসায়ি, হাদিস-৩১২০)

পরপর হজ ও উমরাহ পালন : রিজিক বৃদ্ধিকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের আরেকটি উপায় হলো পরপর হজ ও উমরাহ সম্পাদন করা। হজ ও উমরাহ পালন করলে বাহ্যিকভাবে যদিও প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ হয়। কিন্তু মহান আল্লাহ এই টাকা-পয়সার পরিবর্তে অন্য টাকা-পয়সা দান করেন। হজ ও উমরাহ পালনকারীর ধন-সম্পদে ভরপুর বরকত প্রদান করেন। ফলে তার দারিদ্র্য বিমোচন হয়ে যায় ও জীবন প্রাচুর্যময় হয়ে ওঠে। সাথে সাথে হজ ও উমরাহ আদায়কারী ব্যক্তির পাপরাশিও ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, তোমরা পরপর হজ ও উমরাহ একত্রে আদায় করতে থাকো। কেননা এ হজ ও উমরাহ দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে দেয়, লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা যেমনভাবে হাঁপরের আগুনে দূর হয়।’ (সুনানে তিরমিজি-৮১০)

আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা : মনে হয় এমন কোনো লোক পৃথিবীতে নেই যে চায় না, আমার আয়ু বর্ধিত হোক এবং আমার রিজিক প্রশস্ত হোক। এই আয়ু বর্ধিত হওয়া এবং রিজিক প্রশস্ত হওয়ার অন্যতম উপায় হলো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। স্বজন-পরিজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে কে ধনী কে নির্ধন, কে সহায়, কে অসহায়, কে সম্ভ্রান্ত কে অসম্ভ্রান্ত, কে অভিজাত কে অনভিজাত, কে শিক্ষিত ও কে অশিক্ষিত ইত্যাদির মধ্যে তারতম্য করা সমীচীন নয়। আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা হলে রিজিক বৃদ্ধি পায় ও আয়ু বর্ধিত হয়। হজরত আনাস ইবনু মালিক রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি চায়, তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বর্ধিত হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণœ রাখে।’ (সহিহ বুখারি -৫৯৮৬)

আল্লাহর পথে ব্যয় : মানুষের যত সম্পদ রয়েছে সব সম্পদ আল্লাহ প্রদত্ত। আল্লাহ তায়ালা যদি কাউকে সম্পদ দান না করেন, তাহলে সে দরিদ্র ও পরনির্ভর থাকে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালা যাকে সহায়-সম্পত্তি প্রদান করেন সে-ই কেবল বিত্তশালী ও আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। কোনো ব্যক্তি যখন আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ থেকে দান করে তখন মহান আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন। তিনি প্রফুল্ল হয়ে তার সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন। তার রিজিক পরিবর্ধিত করেন। এ জন্য সাধ্য অনুযায়ী আল্লাহর পথে ব্যয় করতে থাকা নিজের স্বার্থেই কাম্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলুন, আমার পালনকর্তা তাঁর বান্দাহদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং সীমিত পরিমাণে দেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তদস্থলে বিনিময় প্রদান করেন। তিনি উত্তম রিজিকদাতা।’ (সূরা সাবা-৩৯)

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2019 bangladeshdailyonline.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com