টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে। বিশ্ববাসীর শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে আখেরি মোনাজাতটি বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার মুরুব্বি মাওলানা সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম। তিনি জানান, দিল্লির মাওলানা জামশেদ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন। মোনাজাতে অংশ নিতে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি টঙ্গীর আশপাশে এসে অবস্থান নিয়েছেন।
মোনাজাতে অতিরিক্ত মাইক: আখেরি মোনাজাত প্রচারের জন্য গণযোগাযোগ অধিদফতর ও গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। জেলা তথ্য অফিস জানিয়েছে, গণযোগাযোগ অধিদফতর ইজতেমা ময়দান থেকে আবদুল্লাহপুর ও বিমানবন্দর রোড পর্যন্ত এবং গাজীপুর জেলা তথ্য অফিস ইজতেমা ময়দান থেকে চেরাগাআলী, টঙ্গী রেলস্টেশন, স্টেশন রোড ও আশপাশের অলিগলিতে পর্যাপ্ত মাইক সংযোগের ব্যবস্থা করেছে।
আখেরি মোনাজাতে যানবাহন চলাচলে নির্দেশনা: লাখো মুসল্লির সমাগম নির্বিঘ্ন করতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। ইতিমধ্যে কয়েক লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছেন। মুসল্লিদের ইজতেমা ময়দানে আসা এবং আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিদের বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ টঙ্গীমুখী সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ করবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো: আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, ইজতেমায় মুসল্লিদের আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে শনিবার দিবাগত ভোর রাত ৪টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চৌরাস্তায় এবং ঢাকার মহাখালী থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা গাড়ি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কোনাবাড়ি থেকে বন্ধ থাকবে। এছাড়া টঙ্গীমুখী সকল শাখা সড়কগুলো বন্ধ থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ ট্রাফিক ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে। পুলিশ কমিশনার বলেন, ইজতেমায় যোগ দেয়া বৃদ্ধ মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শাটল বাসের ব্যবস্থা থাকবে। ইজতেমাস্থল থেকে চৌরাস্তামুখী ৩০টি এবং মহাখালীমুখী ৩০টি বাস চলাচল করবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ভাল রয়েছে। ইজতেমার নিরাপত্তার জন্য সকল কার্যক্রম চলমান আছে।
বিশেষ ট্রেন: টঙ্গীর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা জানান, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে রেলওয়ে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে। ইজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকল আন্তঃনগর ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে।এছাড়া ১৬টি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা থাকছে।
ইজতেমায় বিদেশি মুসল্লি: ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রথম দিনই ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, লিবিয়া, আফ্রিকা, লেবানন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইরাক, সৌদি আরব, ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের ৩২টি দেশ থেকে প্রায় আড়াই সহস্রাধিক মুসল্লি এ পর্বের ইজতেমায় যোগ দেন। ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ময়দানে পৃথক তাঁবুতে রয়েছেন মেহমানরা। তাদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুক্রবার ভোরে শুরু হয় হজের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ফজরের নামাজের পর ভারতের মাওলানা মুহাম্মদ ওসমানের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ৫৫তম ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়া তাবলীগ জামাতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারী তাবলীগের সদস্যরা এ পর্বে অংশ নিচ্ছেন।
বিশ্ব ইজতেমার এবারের পর্বে ভারতের নিজামুদ্দিন মারকাজের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভি যোগদান না করলেও তার পক্ষে তাবলীগের শীর্ষ মুরব্বি ও আলেমসহ ৩২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছেন। সূত্র : ইউএনবি।