যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আসছে নতুন নতুন টেলিভিশন চ্যানেল, সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এগুলোকে আমরা গণমাধ্যম হিসেবে জেনে থাকি। এসব গণমাধ্যম সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল। ‘সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ’ তেমনই একটি বিষয়। এই বিষয়ে পড়ে হতে পারেন একজন দক্ষ গণমাধ্যমকর্মী। এ নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন- আজহারুল ইসলাম অভি
কাজের সুযোগ
বিশ্বের বিভিন্ন পেশার মধ্যে সাংবাদিকতা শুরু থেকেই একটি মহৎ ও সম্মানজনক পেশা হিসেবে বিশ্বজন স্বীকৃত। তবে একটা সময় ছিল- যখন মানুষ সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারত না। তবে পরিবর্তনের হাওয়ায় তরুণ-তরুণীরা ঝুঁকছে সাংবাদিকতাকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে। বিশ্বব্যাপী তো বটেই, বাংলাদেশেই সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগের কাজের পরিধি দিন দিন বাড়ছে, বাড়ছে নানা মাধ্যমে কাজের সুযোগও। সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার শুধু সাংবাদিকতাই নয়। সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগের শিক্ষার্থীরা গণসংযোগ, বিজ্ঞাপন এজেন্সি, ফিল্ম মেকিং, ব্যাংকিং এবং শিক্ষকতার মতো বিভিন্ন পেশায় নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এই বিভাগের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনি লেখাপড়া করা অবস্থায় সাংবাদিকতা করতে পারবেন। পৃথিবীতে যোগাযোগের বিস্তর চাহিদা। তাই স্নাতক ও মাস্টার্স শেষ করেই আপনি যোগাযোগের যে কোনো খাতে কাজ করতে পারবেন অনায়াসেই।
পড়াশোনা
এ অঞ্চলে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক সূচনা ঘটে বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে এক বছর মেয়াদি পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স চালু হয়। ১৯৬৯ সালে এ বিষয়ে দুই বছর মেয়াদি মাস্টার্স পড়ানো শুরু হয়। ১৯৭৭-৭৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে তিন বছর মেয়াদি অনার্স চালু হয়। আরও পরে সেটি ৪ বছরে রূপান্তর করা হয়। নব্বইয়ের দশকে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। এরও পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ খোলা হয়েছে। বর্তমানে দেশের বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও সাংবাদিকতা বা মিডিয়া স্টাডিজ নামে এ বিষয়ে লেখাপড়া চালু রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগ রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদি অনার্স পড়া যায়। এ ছাড়া স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতায় মাস্টার্স করারও সুযোগ রয়েছে। সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগের শিক্ষার্থীদের ইউরোপ-আমেরিকাসহ বহু দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স এবং পিএইডি ডিগ্রি করার সুযোগ রয়েছে।
ডিপ্লোমা কোর্সে প্রশিক্ষণ
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেয়াদে সংক্ষিপ্ত ও ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট’ দীর্ঘদিন ধরে এ দেশে সাংবাদিকদের পেশাগত মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। দক্ষ সাংবাদিক তৈরির জন্য অত্র ইনস্টিটিউট সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্স পরিচালনা করছে। শিক্ষাজীবনে একটি দ্বিতীয় বিভাগসহ অনার্স কোর্স কিংবা ¯স্নাতক পাস কোর্স সম্পন্নকারী যে কেউ কোর্সটিতে ভর্তি হতে পারবেন। এ জন্য ভর্তিযুদ্ধে নামতে হবে। কারণ ডিপ্লোমা কোর্সের আসন সংখ্যা মাত্র ৫০টি। গণমাধ্যমকর্মীদের এই প্রশিক্ষণ কোর্সে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষায় লিখিত ও এমসিকিউ মিলিয়ে প্রশ্ন থাকে।
আয়-রোজগার
স্থায়ী ও অস্থায়ী মেয়াদে একজন সাংবাদিক অ্যান্ট্রি লেভেল মাসে গড়ে ২০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন। এ পেশায় অভিজ্ঞতার সঙ্গে সঙ্গে আয় বুদ্ধির সুযোগ আছে। তবে বেতনসীমা প্রতিষ্ঠান ও কাজের ধরন অনুযায়ী আলাদা হয়। সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগে পড়ে অন্য পেশায় গেলে সেখানেও অ্যান্ট্রি লেভেলে এই অঙ্কের কাছাকাছি আয় হবে।
ক্যারিয়ার গ্রাফ
সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগে পড়া যে একজন সাংবাদিকের ক্যারিয়ার হবে, তা প্রতিষ্ঠান আর কাজের ওপর নির্ভর করে। সংবাদপত্র বা ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে সাধারণত একজন সংবাদদাতা হিসেবে আপনার ক্যারিয়ার শুরু হবে। ২-৩ বছরের মধ্যে কাজের মানের ওপর ভিত্তি করে স্থায়ী প্রতিবেদকের পদ পাবেন। এর পর কোনো নির্দিষ্ট বিভাগে উপ-সম্পাদনার কাজ পেতে পারেন। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে একজন সাংবাদিক পুরো পত্রিকার মূল সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। টেলিভিশন চ্যানেল আর রেডিওর ক্ষেত্রে প্রতিবেদক কিংবা সংবাদ পাঠক বা উপস্থাপক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। পরে সম্পাদক, প্রযোজক, বার্তাকক্ষ নিয়ন্ত্রকসহ অন্যান্য সিনিয়র পদে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।