ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার বাচোরে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের একটি ভোটকেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণার পর পুলিশের গুলিতে ৯ মাস বয়সী এক শিশু নিহত হয়েছে। গুলিবর্ষণের ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় কাটছে না আতঙ্ক। বন্ধ করে রাখা হয়েছে নির্বাচনী এলাকায় গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখানো স্বাভাবিক হচ্ছে না মহেশপুর এলাকার সুন্দরপুর বেলমার্কেট।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, গত ২৭ জুলাই নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৮০০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হওয়ায় দোকান বন্ধ রেখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
এ সময় দরিরুল ইসলাম নামে এক পান দোকানিসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে স্থিরভাবে দোকান খুলতে পারি না। পান বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। মামলা হওয়ার পর থেকে বাজারে মানুষ আসে না। যেখানে প্রতিদিন দুই তিন হাজার টাকা বিক্রি হতো এখন ২০০ টাকাও হয় না।
দরিরুল ইসলাম বলেন,‘কেন্দ্রটির প্রায় ১৮০০ ভোটার। সবাইতো অন্যায় করেনি। আমি ভোট দিয়ে চলে আসছি পরে কি হয়ছে সেটাও জানি না। পরে শুনেছি তারপরেও আমি আতঙ্কে আছি। এলাকার কেউ বাড়িতে থাকতে পারে না। ভোট দেওয়াই কি আমাদের অপরাধ হয়ে গেল।’
‘যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের চিহ্নিত করে যেন সাজা দেওয়া হয় প্রশাসনের কাছে এটাই দাবি। ঘটনা ঘটলো ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। আমরা সেখানকার ভোটার না হয়েও দোকানপাট বন্ধ রেখে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। রাতে বাড়িতে থাকতে পারিনা এই বুঝি পুলিশ আসলো এমন ভয়ে আছি। কত যে কষ্টে আছি তা বলে বুঝাতে পারব না,’ বলেন এই ব্যবসায়ী।
স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। দিন এনে দিন খাই। মারামারি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তারপরও আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিরা। একদিন কাজ না করলে- না খেয়ে থাকতে হয়। এখন অনেকজনের নামে অজ্ঞাতনামা মামলা হয়েছে। আমি নিজেই অনেক ভয়ে আছি। কাকে কখন তুলে নিয়ে যায় বলা যায় না। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।’
মামলার পর থেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভাংবাড়ি মহেশপুর ফুটকিবাড়ি গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে যায়। বাড়িতে আয় রোজগারের কোনো মানুষ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন গৃহবধূরা। আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে ওই এলাকার পরিবারগুলো। তবে আতঙ্কিত না হয়ে প্রত্যেককেই নিজ বাড়িতেই অবস্থান করার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষিদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন।
গত ২৭ জুলাই রাণীশংকৈল উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। শিশু সুরাইয়াকে নিয়ে মা মিনারা বেগম রাণীশংকৈল ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোটের ফলাফল দেখতে যান। ভোট শেষে ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাচোর ইউনিয়নের ভাংবাড়ি ভি.এফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পরাজিত ইউপি সদস্য সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন শিশু সুরাইয়া। সেদিনের সেই ঘটনায় পুলিশ ও প্রিসাইডিং অফিসার বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। মামলাগুলোতে ৮০০ জনকে অজ্ঞাতনামা করে মামলা করা হয়।