পৃথিবী থেকে যখন আমাদের প্রিয়জন, বন্ধুবান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজন কেউ চিরবিদায় হয়ে যায় তখন তাদের উদ্দেশ্যে আমরা ‘ওপারে ভালো থাকবেন’ বাক্যটি ব্যবহার করে থাকি। ওপারে ভালো থাকবেন ক্যাপশন দিয়ে মৃতের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে সমবেদনা জানাই। তবে লাভ ক্ষতির হিসাব করলে ওই বাক্যের ব্যবহার একেবারেই নিরর্থক।
একজন মানুষ মৃত্যুর পর মহান আল্লাহ তায়ালার আদালতের আসামি হয়ে যায়। আর একজন আসামির ভালো কিংবা মন্দ থাকা নির্ভর করে তার কর্মের ওপর। আমরা হাজারবার যদি ‘ওপারে ভালো থাকবেন’ লিখে পোস্ট করি তবে এতে মৃত ব্যক্তির কোনো উপকার হবে না।
ধরুন, আপনার ঘনিষ্ঠ কোনো বন্ধু অপরাধ করার কারণে পুলিশের কাছে আটক হলো। আর আপনি তাকে বলে দিলেন ‘কারাগারে ভালো থাকবেন’। আপনার এ কথার দ্বারা আপনার বন্ধুর কোনো উপকার হবে না, বরং মনে মনে আপনার প্রতি কিছুটা রাগান্বিত হবেন। কেননা আইনি প্রক্রিয়ায় তার মুক্তির জন্য যা করণীয় সেটি না করে এমন সান্ত্বনার বাণী শুনালেন যা সামগ্রিক বিবেচনায় নিতান্তই মূল্যহীন।
অনুরূপভাবে মৃত ব্যক্তি যিনি কবরের আসামি হয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে, কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী তার মুক্তির জন্য যেটা করণীয় সেটা না করে অনর্থক কিছু করলে এতে মৃতের কোনো উপকার হবে না।
গভীর সাগরে ডুবে যাওয়ার সময় একজন মানুষ বাঁচার জন্য ছটফট করে। কোনো বস্তুর ওপর ভর করে বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে দুই হাত আচড়ে সামান্য খড়কুটা খুঁজে বেড়ায়, ঠিক তেমনি মৃত ব্যক্তিরাও নাজাত লাভের জন্য ছটফট করতে থাকে। দান সদকা, তেলাওয়াত কিংবা দোয়া ইস্তেগফার করে তার নামে কেউ সওয়াব রেসানি করল কিনা সেই আশায় থাকে। আর আমরা পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মানুষগুলো এসব না করে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বেতাল হয়ে যা ইচ্ছে করে যাচ্ছি।
আমাদের আপনজন কেউ মারা গেলে তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনায় নিকটাত্মীয় জীবিতরা যেসব কাজ অব্যাহত রাখতে পারেন এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের দরজা বন্ধ হয় না। ১. সদকায়ে জারিয়া ২. যদি কেউ এমন সন্তান রেখে যায়, যে সন্তান মা-বাবার জন্য দোয়া করবে ৩. এমন দ্বীনি শিক্ষা রেখে যায়, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে। (মুসলিম ১৬৩১, তিরমিজি ১৩৭৬, নাসায়ি ৩৬৫১, আবু দাউদ ২৮৮০, ৩৫৪০, আহমদ ৮৬২৭, দারেমি ৫৫৯)
কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত নয় এমন কাজকে সর্বদা বর্জন করে তাদের রূহের মাগফিরাতের লক্ষ্যে কুরআন সুন্নাহর নির্দেশনা অনুযায়ী আমাল করা উচিত।
লেখক : শিক্ষক, আবাবিল মডেল মাদরাসা, ধামরাই, ঢাকা