বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারকে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের অনুসারী সাজিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে একটি ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা। আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারা দেশ ও জাতি প্রতিবাদ করে। দেউলিয়া ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসী ও খুনিদের আদালতের মাধ্যমে শাস্তি হয়। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির পরিণতিতে অপরাধী ও খুনি হয়ে ওঠা ২০ জনের বেশি মেধাবী ছাত্রের জীবন বিপন্ন হওয়ার চিত্র জাতি দেখল। যে ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না, খুনি সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ মদখোর ও মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে এমন দৃশ্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখতে চাই না। ছাত্রদের জীবন বিপন্ন করে সেরকম ছাত্ররাজনীতি বুয়েটের ক্যাম্পাসে থাকা উচিত নয় মর্মে মতামত সর্বস্তরের মানুষের। ছাত্ররা শিক্ষায় মননে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক পরিবার, সমাজ, দেশ-জাতি গঠনে ভূমিকা রাখুক সবাই চায়। এমতাবস্থায় বুয়েটে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি চালুর প্রক্রিয়া সমর্থনযোগ্য নয়।
আবরার হত্যাকাণ্ডের পরে খুনিদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল সারা দেশ। পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট ও সুশীলসমাজের ভূমিকায় মিডিয়ার প্রচারণায় আবরার হত্যার বিচারের রায় হয়। আদালতের রায় দ্রুততার সাথে বিচার হওয়ার ব্যাপারটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সিনিয়র সিটিজেন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক ও সুশীলসমাজ। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসীদের শাস্তি হলে অন্য অপরাধীরা সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ড থেকে দূরে থাকবে। সন্ত্রাসীরা যখন দেখে যে খুনের বিচার হয় না, তখন তাদের সাহস বেড়ে যায়। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। আবরারের বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ সালে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো: কামরুজ্জামান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড, পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে একটি পরিবারের আশা-ভরসা, স্বপ্ন-সব ধুয়েমুছে শেষ হয়ে গেছে। যেমনটা ১৯৬৯ সালে মেধাবী ছাত্রনেতা আসাদ হত্যাকাণ্ড একটি স্বাধীন দেশের স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছে। শিক্ষাঙ্গনে আবরার ও বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী কারা? তাদের তো কোনো বিচার হলো না। কারা তাদের উদ্বুদ্ধ করেছে এ ধরনের অপকর্ম বা খুন করতে সেটার তো কোনো তদন্তও হলো না।
এই ছেলেগুলো যখন প্রতিযোগিতায় টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিল, বাবা মায়ের স্বপ্ন নিয়েই এসেছিল। বাবা-মায়ের দুঃখ-কষ্ট যদি থেকেও থাকে, তারা সেখান থেকে তাদের আলো দেখাবে, এমন স্বপ্ন নিয়েই এসেছিল। তারা তো ক্রিমিনাল হিসেবে কেউ আসেনি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাহলে তাদের ক্রিমিনাল বানাল কে? তাদের উদ্বুদ্ধ করল কে বা কারা এমন নিকৃষ্টতম কাজ করতে? এসব প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আবরার হত্যাকারীরা কোন রাজনৈতিক দলের? বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলে হত্যাকারীরা কাদের কাছে হত্যার প্রশিক্ষণ পেয়েছে তা জানা যেত।
শিক্ষকদের কাছে শিক্ষার্থীরা সন্তানতুল্য। সেই সম্পর্ক যখন ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে না থাকবে, তত দিন পর্যন্ত এই পরিস্থিতি কোনো দিন ভালো হবে না। এখানে শিক্ষার্থীকে শাসনও করতে হবে, ভালোও বাসতে হবে। ওদের স্নেহও দিতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, তোমরা এখানে এসেছ বাবা-মায়ের স্বপ্ন নিয়ে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে, লেখাপড়াই তোমাদের এখানে মুখ্য ব্যাপার। কে কোন দল করল, অন্য দল করলে তাকে রুমে ঢুকতে দেয়া যাবে না, পেটাতে হবে, বের করে দিতে হবে, এসব অপরাজনীতি থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মুক্ত করতে হবে। এ ধরনের ভাবনাচিন্তা কেনই বা আসছে না ছাত্রদের মধ্যে। তাদের তো মূল চিন্তাই হবার কথা পড়াশোনা করা।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে বুয়েটের সাবেক ছাত্র, অভিনেতা, নাট্যকার ও লেখক আবুল হায়াত তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘রাজনীতি থাকলে ভালো হবে, না রাজনীতি ছাড়া ভালো চলবে, এটি চট করে বলা কঠিন। তবে আমরা যে পরিবেশে লেখাপড়া করেছি, বড় হয়েছি, সেখানে রাজনীতি দরকার হয়নি। আমরা আমাদের সমস্যার কথা উপাচার্যকে গিয়ে বলতে পেরেছি। এখন ইউকসু নেই। তার ওপর ছাত্ররাজনীতির খারাপ প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া সেখানে উপাচার্য, প্রভোস্ট, শিক্ষক, ছাত্র- সবার মধ্যেই দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিবেশটা ভালো নেই, যা ফেরাতে হবে যেকোনো মূল্যে।’
বিবেকবান মানুষ চোখের পানি ধরে রাখতে পারবেন না। আবরার হত্যাকারী ইফতির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যা আছে- ‘৪ অক্টোবর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে একটি নির্দেশনা দেয়। এতে বলা হয়, আবরার শিবির করে, তাকে ধরতে হবে।’ এরপর মেসেঞ্জার গ্রুপে সাড়া দেয় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা। আবরার তখন বাড়িতে থাকায় ও সকালকে বলে, ‘ওকে বাড়ি থেকে ফিরতে দেন। ৬ অক্টোবর রাত ৮টার কিছু পর আবরারকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতে রবিন বেশ কয়েকটি চড় মারে আবরারকে। রাফাত স্টাম্প এনে সকালের হাতে দেয়, স্টাম্প দিয়ে চার-পাঁচটি আঘাত করে সকাল। এতে স্টাম্পটি ভেঙে যায়। বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক অনিক সরকার স্টাম্প দিয়ে আবরারের হাঁটু, পা, পায়ের তালু ও বাহুতে মারতে থাকে।
তখন জিয়ন আবরারকে চড় মারে এবং স্টাম্প দিয়ে হাঁটুতে বাড়ি দেয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সকাল ক্যান্টিনে খেতে যায়। মিনিট বিশেক পর ফিরে এসে দেখে, আবরার অসুস্থ হয়ে পড়েছে, মেঝেতে শুয়ে আছে। সকাল তখন আবরারকে ধমক দিয়ে উঠে দাঁড় করায়। কয়েকটি চড় মারে। মুজাহিদ তখন কক্ষে থাকা স্কিপিং রোপ দিয়ে আবরারকে মারে। সকাল আবার স্টাম্প দিয়ে আবরারের হাঁটু ও পায়ে আঘাত করে। তানভীর তখন চড়-থাপ্পড় মারে। রাত ১১টার দিকে অনিক আসে। হঠাৎ অনিক স্টাম্প দিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে এলোপাতাড়ি শতাধিক আঘাত করে। আনুমানিক রাত ১২টার পর অনিক আবরারকে মারা থামিয়ে কক্ষের বাইরে যায়। তখন আবরার অসুস্থ হয়ে পড়ে ও জানায় তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরই আবরার বমি করে।
তখন রবিন আবরারকে দেখে বলে, ‘ও নাটক করছে।’ এরপর আবরারকে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে শুইয়ে দেয়া হয়। এ সময় অমিত সাহা খুদে বার্তা পাঠিয়ে সব কিছু জানতে চায় এবং আবরারকে আরো মেরে আরো তথ্য বের করতে বলে। আবরারের অবস্থা খুব খারাপ জানালে অমিত তাকে হল থেকে বের করে দিতে বলে। এর কিছুক্ষণ পর রবিন ও অনিক ২০০৫ নম্বর কক্ষে আসে। আবরারকে দেখে তারা বলেন, ‘ও ঠিক আছে।’ এরপর তারা চলে যায়। এ সময় আবরার আবার বমি করে। রবিন তখন আবরারকে পুলিশের হাতে দেয়ার জন্য নিচে নামাতে বলে। ১৭ ব্যাচের ছেলেরা আবরারকে নিচে নামানোর চেষ্টা করে। ব্যর্থ হলে তোশকসহ আবরারকে ধরে দোতলা ও নিচতলার সিঁড়িতে নামিয়ে রাখে।
তখন আবরার বারবার বলছিল যে তার খুব খারাপ লাগছে। সাধারণ সম্পাদক রাসেল তখন নিচে নেমে হলের প্রধান ফটকে পুলিশের সাথে কথা বলছিল। এ সময় মুনতাসির দৌড়ে এসে বলেন, আবরারের হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। সকাল তাকে মালিশ করতে বলে। ইসমাইল ও মনির তখন অ্যাম্বুলেন্সে ফোন দেয়। অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেরি হওয়ায় তামিম বাইক নিয়ে বুয়েট মেডিক্যালের চিকিৎসক নিয়ে আসে। চিকিৎসক আসার পরপরই অ্যাম্বুলেন্স আসে। চিকিৎসক সিঁড়িতে আবরারকে দেখে বলেন, ও মারা গেছে। পরে সকাল একটি কক্ষে গিয়ে শুয়ে থাকে। সেখান থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে চলছে লেজুড়বৃত্তিক সন্ত্রাসী ও গডফাদারদের নিয়ন্ত্রিত ছাত্ররাজনীতি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রনেতার সংগঠন ও ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বক্তব্য (ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত): গত ১০ বছরে চবিতে আটজন ছাত্র খুন হয়েছেন। তবে আমি নিশ্চিত, তার আগের ২০ বছরের হিসাব ধরলেও চ্যাম্পিয়ন হবে। আমাদের সময়টা বেশ জটিলই ছিল। শিবির আর ছাত্রলীগ তখন সমান শক্তিশালী। প্রচণ্ড গোলাগুলিতে প্রায়ই চবির পাহাড়ে প্রতিধ্বনি হতো। ২০০৭ সালে দেশের অন্যতম বড় বিদ্যাপীঠ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পরই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হই রিয়েল ভাই, ওসমান ভাইয়ের মাধ্যমে। কলেজ জীবনে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন ভাই ও ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের ভিপি, বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ ভাইয়ের মাধ্যমে চট্টল বীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়ে ওঠা ছাত্রলীগের প্রতি ছিল আলাদা একটা টান।
জেনে রাখা উচিত, সে সময়ে ক্যাম্পাস ছিল শিবিরের একক আধিপত্য। প্রত্যেক আবাসিক হলে তাদের একক আধিপত্য ছিল। শিবিরের সাথে যুক্ত না থাকলে হলে বা কটেজে থাকা সম্ভব ছিল না। ফ্যাকাল্টি থেকে হল পর্যন্ত তাদের নজরদারি চলত। এমনকি ক্লাস রুম পর্যন্ত তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তার পরেও বগিভিত্তিক রাজনীতিতে ছাত্রলীগ সরব ছিল। অবস্থাটা এমন ছিল সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেমে আসত পিনপতন নীরবতা। ২০০৮ এর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ করার জন্য মধ্যরাতে ক্যাম্পাসে ছিলাম। ফলাফল নিয়ে ফেরার পথে চবি ২নং গেট এলাকায় একটি মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ায় সেখান থেকে সশস্ত্র কয়েকজন নেমে আমার পরিচয় জানতে চায়, ছাত্রলীগ করি কিনা জানতে চায়। ২নং গেটে আমার মায়ের মামার বাড়ি থাকায় আমি তখন বলি সেখানে বেড়াতে আসছি। ওই দিন আল্লাহর রহমতে বেঁচে যাই, পরে বুঝেছিলাম সেদিন এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে একে ৪৭ রাইফেল ছিল।
২০০৮ সালের শেষদিকে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে পাল্টে যেতে থাকে দৃশ্যপট। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। ২০০৮ এর আগে যারা খেয়ে না খেয়ে ছাত্রলীগ করত তারা ধীরে ধীরে কোণঠাসা হতে থাকে। নব্য ছাত্রলীগের উদ্ভব হয়, তারা শিবিরের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ না হয়ে নিজেদের ভেতর বগি দখল আর হলের রুম দখলে রত হয়। ২০০৯ এর শুরুর দিকে শাহজালাল হলের সামনে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে আমার সামনেই তিনজন বড় ভাইকে তিন ফুট চার ফুট লম্বা রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। এই তিনজন অমিত দা (সোহাগ-জাকির কমিটিতে সহ-সম্পাদক), অভি দা ও মিথুন ভাই। তাদের জখম হওয়া শরীর জামা ও হাতে চাপা দিয়ে আমরা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসি। সেখানে জরুরি বিভাগেও এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বিরোধী গ্রুপ আমাদের ওপর হামলা চালায়। সেদিনের সেই রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর আমি চবি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে সরে আসি। যে রাজনীতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমার মায়ের কোলে ফিরে যাওয়ার গ্যারান্টি দিতে পারে না আমি সেই রাজনীতি করতে চাই না। যদিও নগর রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম।
ধীরে ধীরে এই নব্য ছাত্রলীগের কুলাঙ্গারেরা রাতের ট্রেনে টুকটাক ছিনতাই করত। হোটেলে ভাত খেয়ে বিল দিত না, চা-সিগারেট খেয়ে বিল না দেয়া, মাদক সেবনসহ সব ধরনের অবৈধ কাজ করতে লাগল। এমনকি তাদের ইভটিজিং ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের কারণে মেয়েরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারত না। মেয়েদের জন্য এক নৈরাজ্যজনক অবস্থার সৃষ্টি করল এরা।
গত ১৭ জুলাই ২০২২ এক ছাত্রীর সাথে সঙ্ঘটিত হয়েছে অত্যন্ত গর্হিত একটি ঘটনা। এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়কে অপবিত্র করেছে, আমাদের দিয়েছে লজ্জা ও নিন্দা। তাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নেশাগ্রস্ত, ইভটিজার, নারী নির্যাতনকারী বদমাশদের বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান দিতে হবে এবং কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যারা রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন করেছে তাদের বিচার হতেই হবে। এদেরকে সমূলে উগরে ফেলতে হবে, নইলে অদূরভবিষ্যতে আরো মাশুল দিতে হবে।
বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালু হলে আবারও হত্যাকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়বে না, আবারো হত্যাকারী সৃষ্টি হবে না, কোনো মায়ের বুক খালি হবে না এ নিশ্চয়তা কে দেবে? দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে। বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুযোগ দিন।
লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ