মৃত্যু এক চিরন্তন বাস্তবতা। বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবার জন্য অবধারিত সুনিশ্চিত এই মৃত্যু। মৃত্যুর থাবা থেকে কেউই রেহাই পাবে না। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমরা সবাই চাই আমাদের মৃত্যুটা যেন সুন্দর হয়। উত্তম প্রস্থান আমাদের সবার কাম্য। চিরবিদায়ের সূচনাটা যেন প্রশান্তিকর হয়- জীবনজুড়ে একজন মুমিনের এটাই মৌলিক কামনা।
কিন্তু সবার মৃত্যু এক রকম হয় না। আমরা আমাদের চার পাশে প্রায়ই হঠাৎ মৃত্যুর চিত্র দেখতে পাই। নিঃসন্দেহে এটি খুবই দুঃখজনক এবং মর্মান্তিক। হঠাৎ মৃত্যু একটি ভয়ানক আজাবের নাম। উবায়দ ইবন খালিদ সালামি রা: থেকে বর্ণিত- যিনি নবী সা:-এর জনৈক সাহাবি ছিলেন। তিনি বলেন, নবী সা: বলেছেন, হঠাৎ মারা যাওয়া আল্লাহর গজবের পাকড়াওস্বরূপ, (যাতে সে তওবার সুযোগ না পায়)। (আবু দাউদ : ৩০৯৬)
হাদিসে এসেছে কিয়ামতের আগে হঠাৎ মৃত্যুর পরিমাণ বেড়ে যাবে। আনাস বিন মালিক রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: বলেন, ‘কিয়ামতের একটি আলামত হলো, ‘হঠাৎ মৃত্যু’ প্রকাশ পাওয়া।’ (ত্বাবারানি)
হঠাৎ মৃত্যু, মন্দমৃত্যুসহ সব ধরনের অপমৃত্যু থেকে বাঁচার উপায় এবং এ বিষয়ে ইসলামে যেসব নির্দেশনা রয়েছে-
এক. অধিক পরিমাণে হঠাৎ মৃত্যু থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। রাসূলুল্লাহ সা: সব ধরনের মন্দমৃত্যু থেকে বাঁচতে অধিক পরিমাণে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন।
হজরত আবুল ইয়াসার রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: আল্লাহর দরবারে এভাবে দোয়া করতেন- ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ হতে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই গহ্বরে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ হতে, আমি আপনার নিকট হতে আশ্রয় চাই পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ হতে এবং অতি বার্ধক্য হতে। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই মৃত্যুকালে শয়তানের প্রভাব হতে, আমি আশ্রয় চাই আপনার পথে জিহাদ থেকে পলায়নপর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা হতে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে মৃত্যুবরণ হতে।’ (সুনানে নাসায়ি : ৫৫৪৬, সুনানে আবু দাউদ ১৫৫২)
কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ সা: এভাবে দোয়া করতেন-
‘হে আল্লাহ! আমি মন্দমৃত্যু ও হঠাৎ মৃত্যু থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’
দুই. ঘর থেকে বের হওয়ার সময় নবী সা:-এর শেখানো দোয়া পড়ে নেয়া। বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ঘরের বাইরে যেতে হয়। রাস্তাঘাটে চলাচল করতে হয়। এ অবস্থায় নিরাপত্তার বিকল্প নেই। নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যায়।
আনাস ইবনে মালেক রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেন, ‘যদি কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’(অর্থ : আল্লাহর নামে, আল্লাহ তায়ালার ওপরই নির্ভর করলাম, আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ছাড়া বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই।) তবে তাকে বলা হয় (আল্লাহ তায়ালাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, তুমি হেফাজত অবলম্বন করেছ (অনিষ্ট থেকে)। তাতে শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়। (তিরমিজি : ৩৪২৬)
তিন. নিয়মিত দান সাদাকা করা। দান সাদাকা মানুষকে আল্লাহর ক্রোধ ও মন্দমৃত্যু থেকে বাঁচায়। আনাস ইবনে মালিক রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন- ‘নিশ্চয়ই দান সাদাকা আল্লাহর রাগকে নির্বাপিত করে এবং মন্দমৃত্যু থেকে বাঁচায়।’ (জামে তিরমিজি : ৬৬৪)
গত ১৫ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় বিআরটির গার্ডারে পিষ্ট হয়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আল্লাহ তাদের মাফ করে জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিবাসী করুন। আর আমাদের সবাইকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে হঠাৎ মৃত্যু, মন্দমৃত্যুসহ সব ধরনের অপমৃত্যু থেকে হেফাজত করুন।
লেখক : খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর